চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বিত কার্যক্রমের উপরই একটি শহরের প্রকৃত উন্নয়ন নির্ভর করে। এই সমন্বয় নিশ্চিত করতে নগর সরকারের কোনো বিকল্প নেই। সেবা সংস্থাগুলোকে এক বছরের কর্মপরিকল্পনা আগেভাগে তৈরি করে তা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে রাখতে হবে। এতে সিটি কর্পোরেশন রাস্তা বানানোর এক মাসের মধ্যে ওয়াসা বা কর্ণফুলী গ্যাস যে কাটাকুটি করে তার থেকে নিস্তার পাওয়া যাবে। তিনি সমন্বয়কে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে সকলকে সাথে নিয়ে চট্টগ্রামকে একটি বাসযোগ্য শহরে পরিণত করতে চান বলেও জানান। গত শনিবার দুপুরে দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেকের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এসে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি চট্টগ্রামের আক্ষরিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সাংবাদিকদের সহায়তা কামনা করেন। নগরীর প্রতিটি পার্কে নগরবাসীর হক রয়েছে এবং সবার জন্য সব পার্ক উন্মুক্ত থাকা উচিত মন্তব্য করে সিটি মেয়র বলেন, কোনো পার্ক তালাবদ্ধ করে রাখা যাবে না। আগ্রাবাদের কর্ণফুলী পার্ক, জাতিসংঘ পার্ক, নাসিরাবাদ হাউজিং এলাকার পার্ক, বিপ্লব উদ্যানসহ সকল পার্ক সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। আগ্রাবাদের ডেবার চারপাড়ে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নগরবাসীর শ্বাস নেয়ার জায়গা উন্মুক্ত রাখতে হবে। চট্টগ্রামের আক্ষরিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে নগর সরকারের কোনো বিকল্প নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন।
আসলে চট্টগ্রামে অনেকগুলো সেবা সংস্থা কাজ করে। নিজেরা নিজেদের মত প্রকল্প আনছে আর ডাকঢোল পিটিয়ে বাস্তবায়ন করছে। কেউ রাস্তা তৈরি করছে আর আরেক সংস্থা এসে তা কাটছে। কোনো সমন্বয় নেই। তাহলে তো উন্নয়নের সুফল আসছে না। এভাবে চলতে পারে না।
আসলে চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য সেবাসংস্থাগুলোর সমন্বয় নিশ্চিত করতে হবে। আমরা যতটুকু জানি, ইতোপূর্বে অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভাগুলোতে সেবাসংস্থার দায়িত্বশীল কেউ না এসে তাদের প্রতিনিধি পাঠানো হয়েছে। ফলে অগ্রগতিও হয় নি। বিশেষজ্ঞরা বলেন, সমন্বয় নিশ্চিত করার জন্য মেয়রকে অভিভাবকত্ব দিতে হবে। এক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধি হিসেবে মেয়রকে সেবা প্রদানকারী সংস্থাসমূহের মধ্যে সমন্বয় সাধনের নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতাও দিতে হবে। শহরটা যেহেতু সিটি কর্পোরেশনের অধীনে, সেহেতু সিটি মেয়রকে এর দায়িত্ব দেওয়া শ্রেয়। নগরের ভেতরে যে কোনো উন্নয়ন কাজ করতে গেলে মেয়রকে অবহিত করতে হবে। সব সংস্থার মধ্যে সমন্বয় করতে হবে। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি থেকে শুরু করে সবকিছুর জন্য সিটি কর্পোরেশনকে দায়ী করা হয়। বাস্তবে একাধিক সংস্থা কাজ করতে গিয়ে শহরে নাজুক পরিস্থিতি তৈরি হয়। সমন্বয়হীনতার কারণে নাগরিক দুর্ভোগ ও সমস্যা সৃষ্টি হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতা ও দীর্ঘসূত্রতার কারণে যে সব দুর্ঘটনা ঘটে, তাতে কষ্ট পাওয়া ছাড়া গতি নেই। মেয়রের অভিভাবকত্ব থাকলে, জবাবদিহি করার সুযোগ থাকতো।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নগরীর বেনিফিশিয়ারি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব আয় ও তহবিলের একটি অংশ বরাদ্দ নিশ্চিত হলে এই নগরীকে আন্তর্জাতিক মানের উন্নীত করার সমস্ত প্রতিবন্ধকতা দূর হবে। সর্বোপরি নাগরিক সুযোগ–সুবিধা এবং বিভিন্ন সেবাখাতগুলোর কার্যক্রম যথাযথভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব হয়ে উঠবে।
জাতীয় অর্থনীতির ৮০ শতাংশের বেশি আয় চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে অর্জিত হয়। এ কারণেই চট্টগ্রামকে বলা হয় জাতীয় অর্থনীতির হৃদপিণ্ড। আমদানি–রফতানির ক্ষেত্রেও ৮০ শতাংশ কার্যক্রম পরিচালিত হয় চট্টগ্রাম থেকেই। এই চট্টগ্রাম থেকে সরকার যে ট্যাক্স নিয়ে যাচ্ছে, সেখান থেকে শতকরা ১ শতাংশ দিলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আর্থিক সক্ষমতার ভিত্তি সুদৃঢ় হয় এবং চট্টগ্রামের উন্নয়নে অন্য কারোর উপর নির্ভরশীলতা আর দরকার পড়ে না।
দেশের উন্নয়নে চট্টগ্রাম এখন মাইলফলক। সঠিকভাবে অবকাঠামো উন্নয়ন হলে চট্টগ্রাম হবে সত্যিকার অর্থে আধুনিক নগরী। বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশের বৃহত্তম বন্দর চট্টগ্রামে। এ কারণে চট্টগ্রামকে বলা হয় বন্দর নগরী। বাংলাদেশের অর্থনীতি পরিচালিত হয় এই বন্দর দিয়ে। এই বন্দরকে বাঁচাতে হলে চট্টগ্রামে উন্নয়নের কোনও বিকল্প নেই। সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ করলে চট্টগ্রাম দ্রুত এগিয়ে যাবে। দেশেরও উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। মনে রাখতে হবে, চট্টগ্রামকে অবহেলিত রেখে বাংলাদেশের উন্নয়ন কখনো সম্ভব নয়।