দুর্নীতি ও অর্থপাচারে অভিযুক্ত প্রভাবশালী দেড়শ ব্যক্তির তালিকা তৈরির কথা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন পূর্তিতে গতকাল সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণে এ কথা বলেন তিনি। দুর্নীতি দমন কমিশন পুনর্গঠনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে জানিয়ে তিনি বলেন, দুর্নীতি ও অর্থ পাচারে অভিযুক্ত প্রভাবশালী দেড়শ ব্যক্তির তালিকা তৈরি এবং ৭৯ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। ১৫ শতাংশ হারে আয়কর পরিশোধ করে অপ্রদর্শিত পরিসম্পদ, অর্থাৎ কালো টাকা সাদা করার বিধান বাতিল করা হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এ কাজে সফল হতে পারলে আমাদের অর্থনীতি আরো গতি পাবে। এ কাজে আমরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার সাহায্য নিচ্ছি।
অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার জন্য দেশের বিভিন্ন জেলায় সহস্রাধিক প্রসিকিউটর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, হাই কোর্টে ইতোমধ্যে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ২৩ জন নতুন বিচারক। বিচার বিভাগকে ঘুষ ও দুর্নীতিমুক্ত করার জন্য সম্ভব সব ধরনের চেষ্টাই করা হচ্ছে। বিচারপতিদের নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনর্বহাল করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুধু বিচার বিভাগই নয়, সর্বগ্রাসী দুর্নীতির হাত থেকে দেশের সব খাতকেই রক্ষা করতে আমরা সচেষ্ট রয়েছি।
সরকারি কার্যক্রমকে গতিশীল করতে বিভিন্ন পর্যায়ের ১৯ হাজার ৮৪ জন কর্মকর্তা–কর্মচারীকে পদোন্নতি, ১৩ হাজার ৪২৯ জনকে বদলি এবং ১২ হাজার ৬৩৬ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার তথ্যও দেন মুহাম্মদ ইউনূস।
কুখ্যাত সাইবার সিকিউরিটি আইন বাতিলের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই আইনের অধীনে হওয়া যেসব মামলা মানুষের মত প্রকাশের অধিকারের সাথে সম্পর্কিত সেগুলো প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়া ১৩৩টি আইন, বিধিবিধান তৈরি ও সংশোধন করা হয়েছে এবং ৩৫৩টি গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
ছাত্রছাত্রীদের দাবি মেনে ইতোমধ্যে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ এ উন্নীত করা হয়েছে বলেও প্রধান উপদেষ্টার দেয়া ভাষণে উঠে এসেছে। আরো অনেক দাবি–দাওয়া আছে উল্লেখ করে সেসব আদায়ে রাস্তা অবরোধ করে জনদুর্ভোগ না বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, আমাদের একান্ত অনুরোধ আপনারা নির্দিষ্ট চ্যানেল মেইনটেইন করে আপনাদের দাবি দাওয়া পেশ করবেন। তৈরি পোশাক খাতে অস্থিরতার প্রসঙ্গে বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের সুবিধাভোগী বেশ কিছু গার্মেন্টস মালিক পালিয়ে যাওয়ায় শ্রমিকদের বেতন–ভাতা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। অন্য অনেক কারখানায়ও শ্রমিকরা ন্যায্য বেতনসহ অন্যান্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল। শ্রমিকরা তাদের দীর্ঘদিনের বঞ্চনার প্রতিবাদ জানাতে এবং অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি পেতে রাস্তায় নেমে আসে। আমরা তাদের কথা শুনেছি, তাদের আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসতে পেরেছি। আমরা অত্যন্ত আনন্দিত যে, মালিক–শ্রমিকের মধ্যে ১৮ দফার একটি ব্যাপকভিত্তিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বড় ধরনের কোনো সহিংসতা ছাড়াই আমরা শ্রমিক অসন্তোষ নিরসন করতে পেরেছি। তারা আবার উৎপাদনে ফিরেছে। এতে প্রাণ ফিরে পেয়েছে বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী এই শিল্পও।