নগরের ১৬টি থানায় অন্তত ১৬ জন পরিকল্পনাবিদ প্রয়োজন : মেয়র

সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সমন্বয় করে কাজ করার আহ্বান

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১৭ নভেম্বর, ২০২৪ at ৮:০৮ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন পরিকল্পনায় নগর পরিকল্পনাবিদদের অতীতে মূল্যয়ন করা হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেছেন, অতীতে আমাদের নগরে যে কাজগুলো হয়েছে সেগুলোর কোনো সঠিক পরিকল্পনা ছিল না। এতে পরিকল্পনাবিদদের যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। পুরো সিটি কর্পোরেশনে মাত্র একজন নগর পরিকল্পনাবিদ আছেন বলে জেনেছি। আমার মনে হয় ৪১টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে না হলেও ১৬ থানায় অন্তত ১৬ জন পরিকল্পনাবিদ থাকা প্রয়োজন। এদের সহায়তায় সুন্দর একটি নগর আমরা গড়তে পারবো।

গতকাল শনিবার নগরের ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউটের কনফারেন্স কক্ষে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের আয়োজনে বিআইপির সুবর্ণজয়ন্তী এবং বিশ্ব নগর পরিকল্পনা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে চসিক মেয়র এসব কথা বলেন। বিআইপির সুবর্ণজয়ন্তী এবং বিশ্ব নগর পরিকল্পনা দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘সমগ্র দেশের পরিকল্পনা করি, বৈষম্যহীন সুষম বাংলাদেশ গড়ি’। নগরের সেবা সংস্থাগুলোতে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে চসিক মেয়র বলেন, সকল সেবা সংস্থা ও জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা একটি পরিচ্ছন্ন, সবুজ এবং টেকসই নগরী গড়ে তুলতে পারি। নগরের চসিক, সিডিএ, ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ড, সিএমপি, বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণসহ আরও যেসব সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে সবাইকে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। শুধুমাত্র সমন্বয়হীনতার কারণে অনেক সমস্যা হয় নগরে। এ নগর আমার আপনার সবার। এখানে ৪০ লাখের বেশি মানুষ বসবাস করে। এ শহরের উপর অনেক কিছুই নির্ভর করে। মনে রাখবেন চট্টগ্রাম বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে। তিনি বলেন, আমাদের নগরের পার্কগুলো সব নষ্ট হয়ে গেছে। বিপ্লব উদ্যানকে আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা রয়েছে। সব মিলিয়ে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা গ্রিন, ক্লিন এবং স্বাস্থ্যকর নগর গড়তে চায়। সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।

বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি পরিকল্পনাবিদ প্রফেসর ড. আদিল মুহাম্মদ খান এবং সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহাম্মদ মেহেদী আহসান।

প্রফেসর ড. আদিল মুহাম্মদ খান অতীতের নগর উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর সমালোচনা করে বলেন, চট্টগ্রাম শহরে পরিকল্পনার চেয়ে অর্থের অপচয় বেশি হয়েছে। এর একটি উদাহরণ হলো কর্ণফুলী টানেল প্রকল্প। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বন্ধ করে একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

সেমিনারে বক্তারা বাংলাদেশের সুষম উন্নয়ন ও নগর পরিকল্পনার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন প্রকল্প পরিচালক আবু ঈসা আনসারী নগর পরিকল্পনায় জনগণের সম্পৃক্ততার ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং বলেন যে উন্নয়ন প্রকল্পে জনমত ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ ও সমাধানের কথা উল্লেখ করেন এবং মেয়রের সহযোগিতা চান। তিনি মাস্টারপ্ল্যানটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করার বিষয়েও গুরুত্বারোপ করেন। সেমিনারে বক্তারা সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করার পাশাপাশি চট্টগ্রাম নগরীকে টেকসই, বাসযোগ্য ও পরিচ্ছন্ন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নগর পরিকল্পনাবিদদের ভূমিকা জোরদার করার আহ্বান জানান। এছাড়া, সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন এবং উন্নয়ন প্রকল্পে জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধির বিষয়েও আলোকপাত করা হয়।

আরও উপস্থিত ছিলেন চুয়েট নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান দেবাশীষ রায় রাজা, নগর বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার, বিশেষজ্ঞ সুভাষ বড়ুয়া, চউকের উপপ্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আবু ঈসা আনসারী এবং চুয়েটের শিক্ষার্থীসহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমন্ত্রিসভায় ট্রাম্প-মনোনীতদের নিয়ে বিতর্ক ছড়াচ্ছে
পরবর্তী নিবন্ধদুই শিশুপুত্রকে গলা কেটে হত্যার পর বাবার আত্মহত্যার চেষ্টা