পাকিস্তানের করাচি বন্দর থেকে চট্টগ্রামে কন্টেনার নিয়ে এসেছে একটি জাহাজ। তবে ওই জাহাজে কী আছে তা নিয়ে গুজব ছিল। বিষয়টি নিয়ে আজাদীর পক্ষ থেকে খোঁজ নেওয়া হয়। জাহাজটিতে কী এসেছিল? পণ্যবোঝাই কন্টেনারগুলোর অবস্থান কোথায়?
চট্টগ্রাম বন্দর এবং কাস্টমসের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা গেছে, কন্টেনারগুলো এখনো চট্টগ্রাম বন্দরে রয়েছে। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো এসব কন্টেনার খালাস করবে। শিল্পের কাঁচামাল এবং ভোগ্যপণ্য নিয়ে আসা কন্টেনারগুলো স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় আমদানি হয়েছে।
বন্দরের একজন কর্মকর্তা জানান, পাকিস্তানের সাথে অনেকদিন ধরে বাংলাদেশের ট্রেড চলছে। এটা হুট করে শুরু হয়নি। পাকিস্তান থেকে সুতা, কাপড়, কেমিক্যাল, ভোগ্যপণ্য চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে আমদানি হচ্ছে। নতুনত্ব হচ্ছে, আগে পাকিস্তানের পণ্যবোঝাই কন্টেনারগুলো ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্ট যথা সিঙ্গাপুর, কলম্বো, পোর্ট কেলাং ঘুরে চট্টগ্রামে আসত। এবার সরাসরি এসেছে। এখন থেকে পাকিস্তানের পণ্য সরাসরি চট্টগ্রামে আসবে জানিয়ে তিনি বলেন, নতুন এই রুটে কম সময়ে এবং খরচে দেশের আমদানিকারকরা পণ্য আমদানি করতে পারবেন। দুবাইভিত্তিক শিপিং কোম্পানি ফিডার লাইনস ডিএমসিসি নতুন এই রুটে জাহাজ পরিচালনা শুরু করেছে। এই কোম্পানির জাহাজ সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে যাত্রা করে পাকিস্তানের করাচি বন্দর হয়ে ভারতের মুন্দ্রা, ইন্দোনেশিয়ার বেলাওয়ান এবং মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাং হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসবে। একইভাবে ফিরতি পথ ধরে দুবাই যাবে।
বন্দর সূত্র জানায়, পানামার পতাকাবাহী এমভি ইউয়ান জিয়ান ফা ঝং নামের জাহাজটি ১১ নভেম্বর ৩৭০ টিইইউএস কন্টেনার নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে এবং কন্টেনার খালাস করে পরদিন ইন্দোনেশিয়ার পথে যাত্রা করে। জাহাজটি দুবাই থেকে চট্টগ্রামের জন্য আমদানিকৃত ৭৩ টিইইউএস কন্টেনার বোঝাই করে দুবাই যায় এবং সেখান থেকে ২৯৭ টিইইউএস কন্টেনার বোঝাই করে চট্টগ্রামের পথ ধরে। কাস্টমস সূত্র জানিয়েছে, জাহাজটি দুবাই থেকে যাত্রা করার সময় যে ৭৩ কন্টেনার পণ্য বোঝাই ছিল সেগুলোতে বেশিরভাগই খেজুর আনা হয়েছে। এছাড়া জিপসাম, স্ক্র্যাপ, মার্বেল, তার, রেজিন প্রভৃতি পণ্য রয়েছে। একটি কন্টেনারে রয়েছে হুইস্কি, ভদকা ও রেড ওয়াইন। ঢাকার ডিপ্লোমেটিক ওয়্যারহাউস সাবির ট্রেডার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠান মদের চালানটি আমদানি করেছে।
দুবাই থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ব্যাপারে কারো কৌতূহল না থাকলেও পাকিস্তান থেকে আনা পণ্য নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই। কাস্টমসের কর্মকর্তারা বলেছেন, পাকিস্তান থেকে আনা পণ্যের বেশিরভাগই বাংলাদেশের বিভিন্ন কারখানার কাঁচামাল। এর বাইরে বেশ কিছু ভোগ্যপণ্যও রয়েছে। পণ্যগুলোর ওজন ৬ হাজার ৩৩৭ টন। পাকিস্তানের বেসরকারি ১৮টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের বেসরকারি শীর্ষস্থানীয় পাঁচটিসহ কয়েকটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের কাছে এসব পণ্য রপ্তানি করে। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে স্কয়ার গ্রুপের স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, আকিজ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের আকিজ গ্লাস কারখানা, নাসির ফ্লোট গ্লাস, চট্টগ্রামের প্যাসিফিক জিনস এবং এঙ সিরামিকসসহ ঢাকা ও চট্টগ্রামের আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
কাস্টমসের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, করাচি হয়ে আসা জাহাজটিতে ১১৫ টিইইউএস সোডিয়াম কার্বোনেট বা সোডা অ্যাশ রয়েছে। এই পণ্যটি টেঙটাইল মিলসহ বিভিন্ন শিল্পে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া ৪৬ টিইইউএস কন্টেনারে রয়েছে খনিজ পদার্থ ডলোমাইটম, ৩৫ টিইইউএস কন্টেনারে রয়েছে চুনাপাথর। ৬ টিইইউএস কন্টেনারে রয়েছে ম্যাগনেশিয়াম কার্বোনেট। এসব পণ্যের সবগুলোই বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল।
গ্লাস বানানোর কাঁচামাল হিসেবে ভাঙা কাচ আনা হয়েছে ১০ টিইউএস কন্টেনার। গার্মেন্টস কারখানার ব্যাক টু ব্যাক এলসির আওতায় আনা হয়েছে কাপড় ও রংসহ কিছু পণ্য আনা হয়েছে ২৮ টিইইউএস কন্টেনারে। একটি কন্টেনারে রয়েছে গাড়ির যন্ত্রাংশ।
জাহাজটিতে ৫৬টি রেফার (ফ্রিজার) কন্টেনার রয়েছে। এর মধ্যে ৪২ টিইইউএস কন্টেনারে আনা হয়েছে ৬১১ টন পাকিস্তানি পেঁয়াজ। অপর ১৪ টিইইউএস কন্টেনারে আনা হয়েছে ২০৩ টন আলু।
কন্টেনারগুলো এখনো বন্দরে রয়েছে বলে উল্লেখ করে দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, শুল্কায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আমদানিকারকেরা চালানগুলো খালাস করে নেবেন।
চট্টগ্রাম বন্দর সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক গতকাল আজাদীকে জানিয়েছেন, জাহাজ থেকে কন্টেনার রিসিভ করার দায়িত্ব আমাদের। এখন কাস্টমসের প্রক্রিয়া শেষ করে আমদানিকারকেরা চালানগুলো খালাস নেবেন।