সবশেষ টেস্ট খেলেছিলেন পাঁচ বছর হতে চলেছে। আবার টেস্ট ক্রিকেটে ফিরে আসবেন সে সম্ভাবনা খুব একটা নেই। বয়সও ৩৭ হয়েছে। ইমরুল কায়েস তাই উপলব্ধি করতে পারছেন, শেষের দিকে চলে এসেছে তার ক্যারিয়ার। টেস্ট ও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটকে বিদায়ের ঘোষণা দিয়েছেন অভিজ্ঞ বাঁহাতি ব্যাটার ইমরুল কায়েস। মিরপুর শের–ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আগামী শনিবার সাদা পোশাকের ক্রিকেটে নিজের শেষ ম্যাচ খেলতে নামবেন ইমরুল। জাতীয় ক্রিকেট লিগের পঞ্চম রাউন্ডে সেদিন শুরু হবে ইমরুলের খুলনা ও ঢাকার লড়াই। সামাজিক মাধ্যমে ভিডিওবার্তায় বুধবার অবসরের সিদ্ধান্ত জানান ৩৭ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। তার কাছে প্রায় ১৭ বছরের ক্যারিয়ারে এটিই সবচেয়ে কঠিন মুহূর্ত। ‘বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমী দর্শকদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা রেখে একটি বিষয় জানাতে যাচ্ছি। আমি শিগগিরই আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের খুব কঠিন একটি সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি। আগামী ১৬ নভেম্বর আমি টেস্ট ও প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারের সমাপ্তি ঘোষণা করতে যাচ্ছি। এটি আমার ক্রিকেট জীবনের ১৭ বছরের সবচেয়ে আবেগের ও কঠিন একটি মুহূর্ত।’ ২০০৭ সালের জাতীয় লিগ দিয়েই স্বীকৃত ক্রিকেটে পথচলা শুরু হয়েছিল ইমরুলের। পরের বছরই দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে টেস্ট অভিষেক হয় তার। বিরুদ্ধ কন্ডিশনে লাল বলের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শুরুটা ভালো করতে পারেননি তিনি। সব মিলিয়েই অবশ্য টেস্ট ক্যারিয়ার তেমন সমৃদ্ধ নয় ইমরুলের। ক্যারিয়ারের প্রথম ১১ টেস্টে কোনো ফিফটি ছিল না তার, ব্যাটিং গড় ছিল ১৩.১৮। প্রথম ফিফটির দেখা পেতে লেগে যায় ২৪ ইনিংস। ২০১০ সালে ইংল্যান্ড সফরে লর্ডসে খেলেন ৭৫ রানের সেই ইনিংসটি। টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম সেঞ্চুরি ৩৩তম ইনিংসে, শ্রীলংকার বিপক্ষে। ২০১৯ সালে ভারত সফরে কলকাতা টেস্টে সবশেষ জাতীয় দলে খেলেন ইমরুল। বাদ পড়ার আগে পাঁচ ইনিংসে দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি তিনি। সব মিলিয়ে সবশেষ ২৬ টেস্ট ইনিংসে তার ফিফটি ছিল না। ৩৯ টেস্টের ক্যারিয়ারে ৪ ফিফটি ও ৩ সেঞ্চুরিতে ২৪.৭৬ গড়ে ইমরুলের সংগ্রহ ১ হাজার ৭৯৭ রান। তার টেস্ট ক্যারিয়ারের সেরা ম্যাচটি ছিল নিঃসন্দেহে খুলনায়। ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওই টেস্টের প্রথম ইনিংসে ফিফটি করার পর মুশফিকুর রহিমের চোটের কারণে ১২০ ওভার কিপিং করেন তিনি। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে ক্যারিয়ার সেরা ১৫০ রানের ইনিংস খেলেন প্রায় ৬ ঘণ্টা ক্রিজে থেকে। ওই ইনিংসে বিশাল ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে ব্যাট করতে নেমে তামিম ইকবালের সঙ্গে ৩১২ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন তিনি। যা এখনও প্রথম উইকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। দলের দ্বিতীয় ইনিংসে উদ্বোধনী জুটিতে এখনও তা টেস্ট ইতিহাসের একমাত্র ট্রিপল সেঞ্চুরির জুটি।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত ১৩৭ ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ৮ হাজার রানের হাতছানি নিয়ে দিনি খেলতে নামবেন শেষ ম্যাচটি। ২০ সেঞ্চুরি ও ২৭ ফিফটিতে তার সংগ্রহ ৭ হাজার ৯৩০ রান। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের ফাইনালে দক্ষিণাঞ্চলের হয়ে ১০ চার ও ৯ ছক্কায় ২০৪ রানের ইনিংস প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে ইমরুলের সেরা। এছাড়া ২০১৯ সালের জাতীয় লিগে খুলনার হয়ে ১৯ চার ও ৯ ছক্কায় ২০২ রানের অপরাজিত খেলেন তিনি। চলতি জাতীয় লিগের তিন ম্যাচে পাঁচ ইনিংসে ব্যাট করে দুটি ফিফটিসহ ৫৩.২৫ গড়ে ২১৩ রান করেছেন ইমরুল। সাদা পোশাকের ক্রিকেটকে বিদায় জানালেও ফ্র্যাঞ্চাইজি টি–টোয়েন্টি ও ঘরোয়া ওয়ানডেতে দেখা যাবে তাকে। বিপিএলের ১১তম আসরে ইমরুলকে দলে ভিড়িয়েছে খুলনা টাইগার্স।