ডায়াবেটিস আক্রান্ত মানুষের মোট জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে অষ্টম। এবারের ডায়াবেটিস দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো– ডায়াবেটিস এবং সুস্থতা। এটি নিছক কোনো দিবস নয়। পৃথিবীর ১৬০ টিরও বেশি দেশে একসাথে পালিত হয় এই দিবসটি। শুধুমাত্র মানুষকে জাগানোর জন্য বা সচেতনতার জন্য। কারণ বিশ্বে প্রায় ৪২ কোটি মানুষ ডায়বেটিসে আক্রান্ত। আর আমাদের দেশের চিত্র ভয়াবহ। ১ কোটি ৩১ লাখ মানুষ ডায়বেটিসে আক্রান্ত। অনেকে জানেও না তার ডায়বেটিস আছে। প্রতি ৪ জনে ৩ জন ডায়াবেটিস রোগী। বাংলাদেশে প্রায় ২০ হাজারেরও বেশি শিশু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত যাদের গড় বয়স ১০–১২ বছর। বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য খাতের ১০% বাজেট ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনায় ব্যয় করা হয়। এখন জেনে রাখুন ডায়াবেটিস নিয়েও কিভাবে সুস্থ ও কর্মক্ষম থাকা যায়।
চিকিৎসার ব্যবস্থাপনা বা নিয়মগুলো হচ্ছে –
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ৫টি নিয়ম মানতে হয়। তিনটা উ এবং দুইটা ঊ
আমি যেহেতু পুষ্টিবিদ আমি ডায়েট বা খাদ্য ব্যবস্থাপনা নিয়েই আজ বলছি– অনেক ডায়াবেটিক রোগী মনে করেন, এই রোগ হলে সব ভালো ভালো মজাদার খাবার খাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। অনেক কম খেতে হবে। পরিশ্রমের কাজ করা যাবে না ইত্যাদি নানান রকমের ভ্রান্ত ধারণায় থাকেন।
ডায়াবেটিক রোগীর খাদ্য ব্যবস্থাপনা : এই রোগে চিকিৎসা পদ্ধতির প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে রক্তের শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং দেহের অন্যান্য জটিলতা কমানো। যে কোনো প্রকার ডায়াবেটিসে খাদ্য অবশ্যই পুষ্টি সম্পন্ন হওয়া উচিত। খাদ্যের ৬টি উপাদান থেকেই প্রতিবেলার খাবার নির্বাচন করতে হবে। যেমন :
১. শর্করা : ভাত, রুটি, চিড়া, মুড়ি, খৈ, বিস্কুট, পাউরুটি, ওটস, নুডলস, আলু, কলা।
২. প্রোটিন : মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ডাল, বীচি জাতীয় খাবার, মাশরুম, গম, বাদাম, শুঁটকি মাছ
৩. চর্বি বা ফ্যাট : তেল, ঘি, মাখন, ব্যার, পনির।
৪. ভিটামিন : সব ধরনের রঙিন শাকসজি, কাঁচা ও খোসাসহ ফল–মূল, বিশেষ করে মৌসুমী ফল। ভিটামিন এ, বি, সি, ডি, ই এবং কে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৫. খনিজ লবণ : সোডিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রণ, আয়োডিন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক এবং কপার ইত্যাদি খনিজ উপাদান অল্প পরিমাণে লাগে, কিন্তু এদের অভাব হলে অপুষ্টিজনিত নানাবিধ সমস্যা হতে পারে।
৬. পানি : দেহের ওজনের ৬০–৭০% হচ্ছে পানি। প্রতিদিন ৮–১২ গ্লাস পানি অথবা ৩ লিটার বিশুদ্ধ পানি পান আবশ্যক।
ডায়াবেটিস রোগীর ১ দিনের খাদ্য তালিকা (প্রাপ্ত বয়স্ক)
৩০ গ্রাম = ১/২ ছটাক
ক্যালরি : ২০০০
শর্করা: ৩০০ গ্রাম
প্রোটিন : ৭৫ গ্রাম
ফ্যাট : ৫৬ গ্রাম
সকাল : (৮টা–৮.৩০ এর মধ্যে) আটার রুটি– ১২০ গ্রাম (৪টা ছোট পাতলা)
ডিম– ১টা অথবা ডাল
সবজি–ইচ্ছেমতো
ফল– ইচ্ছেমতো। যেমন : আমড়া, পেয়ারা
সকাল ১১টায় : (অবশ্যই খাবেন) মুড়ি বা বিস্কুট– ৩০ গ্রাম
মিষ্টি ফল– দিনে যে কোনো ১টি। যেমন : আম/আপেল/পেয়ারা দুপুর (২টার মধ্যে) ভাত ৪ কাপ। মাছ বা মাংস– ৬০ গ্রাম (২ টুকরা) ডাল–৩০ গ্রাম (২ কাপ মাঝারি ঘন)। সবজি– ইচ্ছেমতো। শাক–সালাদ–লেবু।
বিকাল : (৫টা–৬টার মধ্যে) দুধ– ১২০ মিলি লিটার (১ কাপ)/ দই ১ কাপ/ বাদাম ৩০ গ্রাম/পনির/ছানা (অথবা ডাল বা চিনাবাদাম : ৩০ গ্রাম)।
রাতের খাবার : (৯টার মধ্যে) আটার রুটি– ১৫০ গ্রাম (৪টা ছোট পাতলা) অথবা ভাত। ভাত ৩ কাপ, মাছ বা মাংস–৩০ গ্রাম (১ টুকরা) ডাল–৩০ গ্রাম (২ কাপ মাঝারি ঘন), সবজি –ইচ্ছেমতো।
একবেলা রোগীর সুবিধামতো সময়ে ৩০–৪০ মিনিট হাঁটতে হবে। হাঁটা ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ওষুধের মতো কাজ করে।
মনে রাখা খুবই জরুরি
দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, প্রতিমাসে ফলোআপে আসতে হবে, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ শুরু/বন্ধ করা যাবে না, পুষ্টিবিদের পরামর্শেই খাদ্যের তালিকা মানতে হবে, বিশেষ বিশেষ অবস্থায় যেমন রমজানে, হজে, গর্ভাবস্থায়, জ্বরে এবং বিশেষ কোনো রোগের খাদ্য ব্যবস্থা পুষ্টিবিদের কাছ থেকে জেনে নিতে হবে।
ডায়াবেটিস রোগে নিষিদ্ধ খাবার
চিনি, গুঁড় দিয়ে তৈরি করা খাবার যেমন : মিষ্টি বিস্কুট, কেক, পেস্ট্রি, আইসক্রিম ও চকোলেট। আর দেরি নয়, আজই ডায়াবেটিস পরীক্ষা করুন এবং প্রতিরোধ ও প্রতিকারের কৌশল জেনে নিন।
লেখক : চট্টগ্রামের প্রথম ক্লিনিক্যাল পুষ্টিবিদ