রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর দেশের ৬১ জেলা পরিষদে প্রশাসক নিয়োগের পর এবার তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠন করেছে সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব তাসলিমা বেগমের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে এই তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের নামের তালিকা প্রকাশ করে। প্রজ্ঞাপনে সাবেক কৃষি কর্মকর্তা কাজল তালুকদারকে রাঙামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, অধ্যাপক থানজামা লুসাইকে বান্দরবান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জিরুনা ত্রিপুরাকে খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের নতুন চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হয়। এই প্রথমবারের মত খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ কোনো নারী চেয়ারম্যান পেল।
রাঙামাটি : রাঙামাটি জেলা পরিষদের নতুন সদস্যরা হলেন– দেব প্রসাদ দেওয়ান, প্রনতি রঞ্জন খীসা, প্রতুল চন্দ্র দেওয়ান, বরুন বিকাশ দেওয়ান, ক্যাওসিংমং, নাইউ প্রু মারমা, ড্যানিয়েন লাল মুয়ান সাং পাংখোয়া, রাঙাবি তঞ্চঙ্গ্যা, সাগরিকা রোয়াজা, দয়াল দাশ, মো. হাবীব আজম, মিনহাজ মুরশীদ, বৈশালী চাকমা ও লুৎফুন্নেসা বেগম।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত উপর্যুক্তভাবে পুনর্গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদ রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন, ১৯৮৯ এবং এই আইনের সকল সংশোধনীর বিধান অনুযায়ী রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সকল সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। জনস্বার্থে জারিকৃত এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে। এছাড়াও প্রজ্ঞাপনে এর আগে, ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অংসুই প্রু চৌধুরীকে চেয়ারম্যান করে গঠিত ১৫ সদস্যের পরিষদ বাতিল করা হয়েছে।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের পুনর্গঠিত পরিষদের চেয়ারম্যান কাজল তালুকদার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) রাঙামাটি কার্যালয়ের সাবেক উপপরিচালক ও জেলা বিএনপির সভাপতি দীপন তালুকদারের বড় ভাই। নতুন পরিষদে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা ছাড়াও শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি, ক্রীড়া সংগঠক, উন্নয়ন কর্মী স্থান পেয়েছেন।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের নতুন চেয়ারম্যান কাজল তালুকদার বলেন, শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য ও পর্যটন খাতকে প্রাধান্য দিয়ে আমরা কাজ করব। বিগত সময়ে শিক্ষকসহ বিভিন্ন নিয়োগে অনিয়ম–দুর্নীতি থাকলেও এবার আর এসব হতে দেব না। দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি একদমই হবে না। এগুলা আগের এসএসসি, এইচএসসি পাস–ফেল করা চেয়ারম্যানরা করেছেন; এখন আর সুযোগ নেই।
খাগড়াছড়ি : খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ প্রথমবারের মত একজন নতুন নারী চেয়ারম্যান পেল। তিনি হলেন জিরুনা ত্রিপুরা। পুনর্গঠিত ১৫ সদস্য বিশিষ্ট পরিষদের বাকি ১৪ সদস্যরা হলেন– খাগড়াছড়ি জেলা সদরের বঙ্গমিত্র চাকমা, অনিময় চাকমা, নিটোল মনি চাকমা, মাহবুবুল আলম, শেফালিকা ত্রিপুরা, নিটোল মনি চাকমা, ধনেশ্বর ত্রিপুরা, মাটিরাঙা উপজেলার প্রশান্ত কুমার ত্রিপুরা, মো. শহিদুল ইসলাম সুমন, জয়া ত্রিপুরা, অ্যাডভোকেট মনজিলা সুলতানা, মহালছড়ি উপজেলার কংজপু মারমা, মানিকছড়ি উপজেলার কুমার সুইচিংপ্রু সাইন, সাথোয়াই প্রু চৌধুরী ও পানছড়ি উপজেলা থেকে প্রফেসর আবদুল লতিফ।
প্রজ্ঞাপনে সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের সময় গঠিত পরিষদ বাতিল করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরীসহ বাকি সদস্যরা পলাতক রয়েছেন।
বান্দরবান : পুনর্গঠিত বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের নতুন চেয়ারম্যান হলেন অধ্যাপক থানজামা লুসাই। পরিষদে সদস্য হিসেবে যারা ঠাঁই পেয়েছেন তারা হলেন রাজুময় তঞ্চঙ্গ্যা, মাম্যানু, অ্যাডভোকেট উবাথোয়াই মারমা, উমচিং মারমা, খামলাই ম্রো, মংএচিং চাক, সানাইপ্রু ত্রিপুরা, লাল জারলম বম, নাংফ্রা খুমী, সাইফুল ইসলাম, মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন, মুহাম্মদ আবুল কালাম, অ্যাডভোকেট মাধবী মারমা ও খুরশিদা ইসহাক।
গত ৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র–জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ নিযুক্ত চেয়ারম্যানসহ সদস্যরা পালিয়ে যাওয়ায় অচলাবস্থা তৈরি হয় পার্বত্য জেলা পরিষদে। এতে নাগরিক সেবা এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা নেমে আসে। দীর্ঘ তিন মাস পর বান্দরবানসহ তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠনের খবরে পার্বত্যবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে।
পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠনের সরকারি পরিপত্র পাবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুম বিল্লাহ।