জীবন রক্ষার ওষুধের দামও কেবল বাড়ছে। ওষুধ ক্রেতাদের অভিযোগ– নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজারের মতো যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে বাড়ানো হচ্ছে ওষুধের দাম। ডলারের সাথে টাকার অবমূল্যায়নসহ বিভিন্ন ইস্যুর অজুহাত দেখিয়ে ওষুধের দাম বাড়ানো হচ্ছে। প্রেসার ডায়াবেটিসসহ একেকজন রোগীর ওষুধ খরচ মাসিক ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশে বেশ কিছুদিন ধরে ওষুধের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে তা আবারো বাড়ানো হয়েছে। দফায় দফায় বাড়ছে ওষুধের দাম। একেকটি ওষুধের দাম ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
ডায়াবেটিক রোগী মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম সকাল ও রাতে দুই বেলা ইনসুলিন নেন। খাবারের আগে তাকে ইনসুলিন নিতে হয়। গত বেশ কিছুদিন ধরে বিভিন্ন ধরনের ইনসুলিনের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ইনসুলিনের পাশাপাশি অন্যান্য ওষুধের দামও বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, এক মাসে তার ওষুধের খরচ অন্তত পাঁচ হাজার টাকা বেড়েছে। এটা প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়ে যাওয়া বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটি অস্বাভাবিক অবস্থা চলছে। ডলার সংকট এবং ডলারের সাথে টাকার অবমূল্যায়নের দোহাই দিয়ে গত বেশ কয়েকমাস ধরে ওষুধের দাম বাড়ানো হচ্ছে। ডায়াবেটিসের ওষুধ হিমিউলিন ৪৩৫ টাকা থেকে ৫১০ টাকা, নিডল দিয়ে ব্যবহার্য হিমিউলিন ৫৭০ টাকা থেকে তিন দফা বেড়ে হয়েছে ৮০০ টাকা।
ডায়াবেটিসের পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপের ওষুধের দামও বেড়েছে। দেশে ঘরে ঘরে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ ব্যবহৃত হয়। এই উচ্চ রক্তচাপের ওষুধের দামও বেড়েছে। উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ৫০০ টাকা দামের কাভারসিল ৪ এমজির ট্যাবলেট ১ পাতা (৩০টি) ৫৫০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। বাইজোরান ৫/২০ (এক বঙ–৬০টি ট্যাবলেট) কিছুদিন আগেও ছিল ৩০০ টাকা। এখন নেয়া হচ্ছে ৩৬০ টাকা। বাইজোরান ৫/৪০ বঙ ছিল ৫৫০ টাকা, এখন নেয়া হচ্ছে ৬০০ টাকা। এইচ সিরাপ ২৫ টাকা ছিল। বাড়িয়ে করা হয়েছে ৩৫ টাকা। নাপা সিরাপের দামও একইভাবে বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। নাপার মতো সাধারণ ওষুধও পাতা ১০ টাকা থেকে ১২ টাকা, নাপা এঙটেন্ড প্রতি ট্যাবলেট দেড় টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ টাকা করা হয়েছে।
এন্টিবায়োটিক ওষুধের দাম নিয়েও চলছে স্বেচ্ছাচারিতা। সেফাক্লাভ ৫০০ মিলিগ্রাম প্রতিটি ওষুধের দাম ৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০ টাকা করা হয়েছে। এক পিস ওষুধে ১০ টাকা করে বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। একজন রোগীকে এন্টিবায়োটিকের এক কোর্স সম্পন্ন করতে আগের তুলনায় পাঁচশ’ টাকারও বেশি অতিরিক্ত পরিশোধ করতে হচ্ছে।
ভিটামিন জাতীয় ট্যাবলেটের দামও বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ৩০টি ট্যাবলেটের বিভিন্ন কোটা ২৩০/২৪০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৬০ টাকা করা হয়েছে।
ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, লিভার, হৃদরোগ, হাঁপানি এবং গ্যাস্ট্রিকসহ জীবন রক্ষাকারী নানা ওষুধের দাম গড়ে ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। কোনো কোনো ওষুধের দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে ৫০ শতাংশেরও বেশি। অতি সাধারণ এবং ব্যাপকহারে ব্যবহার হয় এমন ওষুধগুলোর দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ানো হয়েছে।
বিভিন্ন ফার্মেসির মালিকেরা বলেছেন, কোনো কোনো ওষুধ কোম্পানি উৎপাদন কমিয়ে দিয়ে এক ধরনের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে। ডলার সংকটের অজুহাতে কাঁচামাল আমদানি করতে পারছে না বলে উল্লেখ করেও তারা ওষুধের উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। ডলারের সাথে টাকার অবমূল্যায়ন ওষুধ সেক্টরে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে।
দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় ওষুধ কোম্পানির দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা গতকাল দৈনিক আজাদীকে বলেন, ওষুধের দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। ওষুধের কাঁচামাল পুরোটাই আমদানি নির্ভর উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৮৮ টাকার ডলার এক বছরের কিছু বেশি সময়ের মধ্যে ১২০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। এরপর ওষুধের দাম কি করে কম থাকবে? এছাড়া দেশে এলসি খোলার ব্যাপারেও কড়াকড়ি রয়েছে। এতে করে অনেকেই চাহিদা মোতাবেক কাঁচামাল আমদানি করতে পারছে না। ফলে বাজারে একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।