আমি যুদ্ধ বাড়াবো না, থামিয়ে দেবো : ট্রাম্প

| বৃহস্পতিবার , ৭ নভেম্বর, ২০২৪ at ৮:০০ পূর্বাহ্ণ

বিশ্বে যেসব যুদ্ধ চলছে, তা বন্ধ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নির্বাচনে জয়ী রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। গতকাল নির্বাচনে জয়লাভের পর ফ্লোরিডায় দেওয়া এক ভাষণে এই প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

ফ্লোরিডার ওয়েস্ট পাম বিচে ওয়াচ পার্টির মঞ্চে হাজির হয়ে বিপুল সংখ্যক সমর্থকের উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ট্রাম্প। তিনি মঞ্চে উঠার পর উপস্থিত জনতা ব্যাপক হর্ষধ্বনির মধ্য দিয়ে তাকে স্বাগত জানান। জনতার সামনে ট্রাম্প বলেন, আমাদের কোনো যুদ্ধ ছিল না। আইএসকে পরাজিত করা ছাড়া চার বছর ধরে আমাদের কোনো যুদ্ধ হয়নি। ডেমোক্র্যাটরা বলেছিল, আমি নাকি যুদ্ধ শুরু করবো। আমি যুদ্ধ শুরু করতে যাচ্ছি না, বরং যুদ্ধ বন্ধ করতে যাচ্ছি।

ধারণা করা হচ্ছে, ক্ষমতায় গেলে তিনি সহায়তা বন্ধ করে দিয়ে ইউক্রেনকে রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতা করতে বাধ্য করতে পারেন। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলহামাস সংঘাত ও ইসরায়েললেবানন সংঘাত বন্ধ হবে কিনা, তা নিয়েও জল্পনা চলছে। যদিও গতকালের বক্তব্যে কোনো যুদ্ধের কথাই সরাসরি উল্লেখ করেননি ট্রাম্প।

মঞ্চে ট্রাম্পের সঙ্গে অনেকে ছিলেন। তাদের মধ্যে ছিলেন তার রানিং মেট জেডি ভ্যান্স, ট্রাম্পের স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প এবং তার প্রচার শিবিরের কর্মকর্তারা। সমর্থকদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তৃতায় ট্রাম্প এটাকে একটি ‘রাজনৈতিক বিজয়’ বলে বর্ণনা করেন এবং তাকে ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে (৪৫তম প্রেসিডেন্টও তিনি ছিলেন) বরণ করে নেওয়ায় উপস্থিত সমর্থকদের ধন্যবাদ জানান। এ সময় জনতা ‘ইউএসএ’, ‘ইউএসএ’, ‘ইউএসএ’ বলে গর্জন করে ওঠে।

চারটি ইলেকটোরাল ভোট কম থাকার পরেও তা আমলে না নিয়েই উদযাপন শুরু করে দেন ট্রাম্প ও তার সমর্থকরা। ট্রাম্প তার ভাষণে বলেছেন, আমরা আমাদের দেশকে ক্ষতমুক্ত করতে যাচ্ছি। তিনি দেশের সীমান্ত ঠিক করার প্রত্যয় জানান। একটি কারণের জন্য তিনি ও তার দল ইতিহাস তৈরি করেছেন বলে দাবি করেন। তিনি ‘দুর্দান্ত বিজয়’ অর্জন করেছেন বলেও দাবি করেন। ট্রাম্প বলেন, আমেরিকান জনতার জন্য এটি একটি দুর্দান্ত বিজয়, এটি আমাদের আমেরিকাকে আবারও মহান বানানোর সুযোগ করে দেবে।

এটা পুরোপুরি স্পষ্ট যে এই ভাষণকে বিজয়ী ভাষণ হিসেবে ব্যবহার করেছেন রিপাবলিকান এই প্রার্থী। উল্লাসে ফেটে পড়া সমর্থকদের উদ্দেশে ট্রাম্প বলেন, তিনি আশা করেন একদিন তারা স্মৃতি রোমন্থন করবেন আর সেইদিন এই ক্ষণটিকে ‘জীবনের অন্যতম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন’ হিসেবে বিবেচনা করবেন। তিনি বলেন, আমেরিকা আমাদের একটি নজিরবিহীন ও শক্তিশালী সমর্থন দিয়েছে। এর মধ্যমে তিনি ডেমোক্র্যাটিক পার্টির কাছ থেকে তার দলের সেনেটের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দিকে ইঙ্গিত করেছেন।

নির্বাচনী প্রচারকালে দু’টি হত্যা চেষ্টা থেকে বেঁচে যাওয়া ট্রাম্প বলেন, অনেক মানুষ আমাকে বলেছেন যে খোদা একটি কারণে আমার জীবন রক্ষা করেছেন, আমাদের সামনে যে কাজ আছে তা সহজ হবে না। এখন সময় অতীতের বিভাজনগুলো পেছনে ফেলে আসা।

ভাষণের শেষ দিকে ট্রাম্প তার পরিবার ও স্ত্রী মেলানিয়াকে ধন্যবাদ জানান। মেলানিয়াকে ‘ফার্স্ট লেডি’ বলে সম্বোধন করেন তিনি। তিনি তার স্ত্রীর লেখা বই ‘দেশের এক নাম্বার বেস্ট সেলার’ উল্লেখ করে মেলানিয়ার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, সে দারুণ কাজ করেছে। লোকজনকে সাহায্য করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছে। তিনি মঞ্চে দাঁড়িয়ে থাকা তার সন্তানদের সবার নাম একে একে উচ্চারণ করে নিজের ‘চমৎকার সন্তানদের’ ধন্যবাদ জানান। ট্রাম্প জেডি ভ্যান্সকে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী ভাইস প্রেসিডেন্ট উল্লেখ করে তাকে অভিনন্দন জানান। রানিং মেট হিসেবে ভ্যান্স সঠিক পছন্দ ছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এরপর ট্রাম্প তার প্রচারণা শিবিরের খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা একজনকে নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন, তিনি সামাজিক মাধ্যম এঙ এর মালিক আর বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্ক। মাস্ককে ‘দারুণ মানুষ’ হিসেবে বর্ণনা করে তাকে রিপাবলিকান দলের ‘নতুন তারা’ হিসেবে অভিহিত করেন ট্রাম্প।

ট্রাম্প নিয়মিতভাবে টানা ৯০ মিনিট বা তার বেশি সময় ধরে বক্তৃতা করলেও তার ‘বিজয় ভাষণ’ প্রায় ২৫ মিনিটের মধ্যেই শেষ করেন বলে রয়টার্স জানায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধযে কারণে ট্রাম্পের কাছে শোচনীয় হার কমলার
পরবর্তী নিবন্ধইতিহাস গড়ে ফিরলেন ট্রাম্প