ট্রাম্প–হ্যারিস যিনিই জিতুন, হবে ইতিহাস আমরা যখন লড়ি, আমরা জিতি : কমলা হ্যারিস নয়, অশুভ ডেমোক্র্যাট ব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়ছি : ট্রাম্প রেওয়াজ অনুযায়ী গতকাল মঙ্গলবার প্রথম প্রহরেই ভোট দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র–কানাডা সীমান্ত সংলগ্ন নিউ হ্যাম্পশায়ার রাজ্যের ছোট শহর ডিঙভেল নচের ভোটাররা। আর এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে।
কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বরাবরই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের দুই প্রার্থীর মধ্যে। এবারের নির্বাচনে প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি ভাইস প্রেসিডেন্টকেও নির্বাচিত করবেন যুক্তরাষ্ট্রের ভোটাররা। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের ৪৩৫টি আসনের সবগুলো এবং উচ্চকক্ষ সেনেটের ১০০ আসনের ৩৪টিতেও একইসঙ্গে ভোট হচ্ছে।
হোয়াইট হাউজের দখল নিতে এবার লড়াই হচ্ছে সাবেক প্রেসিডেন্ট রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের মধ্যে। এ নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে তার দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু হবে ৭৮ বছর বয়সে। অপরদিকে কমলা হ্যারিসের বয়স ৬০ বছর। ট্রাম্প তার রানিং মেট হিসেবে বেছে নিয়েছেন ওহাইওর সেনেটর জেডি ভ্যান্সকে। আর হ্যারিসের রানিং মেট টিম ওয়ালজ মিনেসোটার গভর্নর। অর্থাৎ, ভাইস প্রেসিডেন্ট হবেন ভ্যান্স বা ওয়ালজের মধ্যে একজন।
রাজনীতির ক্যারিয়ারে খাদের কিনার থেকে উঠে আসা সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদি এবারের ভোটে জিতে যান, তাহলে সেটা হবে একবার হেরে যাওয়ার পর দ্বিতীয় চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার দ্বিতীয় ঘটনা। আর ভোটারদের রায় যদি ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের পক্ষে যায়, তিনি হবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। নির্বাচনে হ্যারিস কিংবা ট্রাম্প যিনিই জিতুন না কেন তা দেশটিতে ইতিহাস রচনা করবে।
হ্যারিস জয়ী হলে তিনি হবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী, কৃষ্ণাঙ্গ এবং এশিয়ান–আমেরিকান প্রেসিডেন্ট। আর সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জয়ী হলে তিনি হবেন দেশের ইতিহাসে ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়া প্রথম প্রেসিডেন্ট। দুইবার অভিশংসিত হওয়া একজন প্রেসিডেন্টও হবেন ট্রাম্প। ভিন্ন মেয়াদে অরেকবার তিনি নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হবেন। তাছাড়া, পুনর্র্নিবাচনের প্রথম চেষ্টায় হেরে যাওয়ার পর ট্রাম্পই হবেন হোয়াইট হাউজে ফেরা ইতিহাসের দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রে পরাজিত প্রেসিডেন্টের ফের নির্বাচিত হওয়ার রেকর্ড আছে কেবল গ্রোভার ক্লিভল্যান্ডের। ১৮৮৮ সালে নির্বাচনে হেরে গিয়ে চার বছর পর ফের তিনি জয়ী হয়েছিলেন ১৮৯২ সালে।
ট্রাম্প এবং হ্যারিসের বৈশিষ্ট্য এবং ব্যাকগ্রাউন্ডই কেবল নয় আরও কিছু কারণে এবারের নির্বাচনের প্রকৃতি ঐতিহাসিক বলেই বর্ণনা করেছেন বিশ্লেষকরা। কিছু ব্যতিক্রমী ঘটনা এবার ঘটেছে। উদাহরণস্বরূপ–নির্বাচনী প্রচারের মাঝপথে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী অদলবদল করার সিদ্ধান্ত ছিল ব্যতিক্রমী এবং বিরল। তিনি যেভাবে জোরাল সমর্থন পেয়ে ট্রাম্পের কাছাকাছি অবস্থানে উঠে এসেছেন সেটিও চমকে দেওয়ার মতো। হিউস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ব্র্যান্ডন রোটিংহাউস বলেন, হ্যারিসের মনোনয়নই ঐতিহাসিক ছিল। তিনি জিতলে ১৯২০–এর দশক থেকে জাতি যে বাধার দেয়াল ভাঙার জন্য লড়াই করে আসছে, তা ভেঙে যাবে। ওদিকে, ট্রাম্প ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী দৌড়ে নামার ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে পরবর্তীতে চারটি ফৌজদারি মামলার মুখোমুখি হয়েছিলেন। তারই একটিতে তিনি দোষী সাব্যস্ত হন। নির্বাচনি প্রচারের সময় ট্রাম্প দুইবার হত্যাচেষ্টার শিকারও হন।
দুই প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারও এবার ছিল খুবই ক্ষিপ্র। জরিপে দুইজনের এক সূতো ব্যবধান নিয়ে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ অবস্থানে থাকা–এসবই এবারের নির্বাচনে ছিল নজিরবিহীন ঘটনা। ভোট দেওয়ার যোগ্য নাগরিকের সংখ্যা প্রায় ২৪ কোটি, তারমধ্যে ১৬ কোটির মত ভোটার এবার ভোট দিতে নিবন্ধন করেছেন। আগাম ভোট দিয়ে ফেলেছেন ৮ কোটি ২০ লাখের বেশি ভোটার। ভোটের আগে সবশেষ জনমত জরিপে ট্রাম্পের চেয়ে সামান্য এগিয়ে আছেন হ্যারিস। তবে ‘ব্যাটলগ্রাউন্ড’ হিসেবে বিবেচিত রাজ্যগুলোতে দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর ব্যবধান সামান্য। সাতটি দোদুল্যমান রাজ্য–অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, মিশিগান, নেভাডা, নর্থ ক্যারোলাইনা, পেনসিলভেইনিয়া ও উইসকনসিন। এই রাজ্যগুলোর ১০টি কাউন্টির ভোট নির্বাচনের ফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তাই এ কাউন্টিগুলোর দিকে নজর রাখছেন নির্বাচনি বিশ্লেষকরা।
আমরা যখন লড়ি, আমরা জিতি : কমলা হ্যারিস পেনসিলভেনিয়া রাজ্যে তার শেষ প্রচার সমাবেশে একতার শক্তি ও নারী অধিকারের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমরা যখন লড়ি, আমরা জিতি। সমাবেশে উপস্থিত জনতাকেও সমস্বরে তার এই কথার সঙ্গে গলা মেলানোর ডাক দেন হ্যারিস। জনতার সামনে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, আমরা কি আমেরিকার প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করি? আপনারা কি এর জন্য লড়তে প্রস্তুত? কারণ, আমরা যখন লড়ি, তখন আমরা জয়ী হই। ভাষণে হ্যারিস বলেন, পরাজিত অবস্থা থেকে তিনি যাত্রা শুরু করেছিলেন। কিন্তু জয়ের আসনে পৌঁছাবেন। ‘আমাদের এই জীবনকালে গুরুত্বপূর্ণ ভোটের দিনের মুহূর্তটি আমাদের অনুকূলেই আছে। এ নির্বাচন হতে পারে ইতিহাসে অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন।’
অশুভ ডেমোক্র্যাট ব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়ছি : মিশিগানে শেষ প্রচার সমাবেশে ট্রাম্প বলেন, আমরা ওয়াশিংটনে এই দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবস্থাকে পরাজিত করব। কারণ, আমি কমলার বিরুদ্ধে লড়ছি না। অশুভ ডেমোক্র্যাট সিস্টেমের বিরুদ্ধে লড়ছি। এরা দুষ্টু লোক। এই যাত্রা অবিশ্বাস্য হবে উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, এ যাত্রা হবে দুঃখেরও। কারণ, এটাই হবে শেষবার। এ নির্বাচনে না জিতলে আগামীতে আর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়ার পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প।
মিশিগনে শেষ দিনের প্রচারে তিনি তাই বলেছেন, এটিই তার শেষ প্রচার। তবে জরিপে জনমর্থনের পরিসংখ্যান উল্লেখ করে ট্রাম্প এও বলেছেন যে তিনি আশাবাদী। ট্রাম্প বলেন, সুসংবাদ আছে। আমরা যা কিছু করছি তা আমাদেরকে জয় পাওয়ার অবস্থানেই নিয়ে যাচ্ছে।