শিক্ষার্থীদের মানসম্মত পাঠদানই একজন সফল শিক্ষকের একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের একজন প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করেন একজন শিক্ষক। শিশুকাল থেকে শিক্ষার্থীদের উন্নত জীবনের স্বপ্ন দর্শনে উদ্বুদ্ধ করেন। তাই একজন শিক্ষককে বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর। একজন শিক্ষকের অন্যতম চাওয়া পাওয়া হচ্ছে শ্রদ্ধা ও সম্মান। শিক্ষাকে বলা হয়ে থাকে জাতির মেরুদণ্ড আর সেই মেরুদণ্ড মজবুত ও সুদৃঢ় করতে শিক্ষকের কোনো বিকল্প নেই। শিক্ষক প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জাতির ভবিষ্যৎ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে কিন্তু অনেক দিন যাবৎ প্রাথমিক বিদ্যালয় এর সহকারী শিক্ষকরা চরমভাবে অবহেলিত হয়ে আসছেন এবং বেতন বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছেন।
বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে যোগ্যতা চাওয়া হয়েছে স্নাতক দ্বিতীয় শ্রেণি বা সমমান কিন্তু এই একই যোগ্যতায় সরকারের অন্যান্য ডিপার্টমেন্টের তুলনায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য ১৩ তম গ্রেড নির্ধারণ করা হয়েছে বা শিক্ষকদের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী করে রাখা হয়েছে। যা একজন শিক্ষক হিসেবে নিজেকে সমাজে নিজের পেশার পরিচয় দিতে সবসময় তাকে হীনম্মন্যতায় ভুগতে হয় অথচ একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষককে সকাল ৯ টা থেকে ৪ টা ১৫ অব্দি কতটা পরিশ্রমের মাধ্যমে তার পেশার সার্থকতা বজায় রাখতে হয় এবং প্রতিনিয়ত শিশুদের সাথে থাকতে হয়। বাংলাদেশের মোট ৬৫ হাজার ৫৮৭ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্মরত মোট শিক্ষকের সংখ্যা ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৯৮১ জন। বর্তমানে নিয়োগ প্রাপ্ত অধিকাংশ শিক্ষক স্নাতক বা স্নাতকোত্তর। শিক্ষকদের মর্যাদা রক্ষায় ১০ ম গ্রেড দাবি করে সারা বাংলাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা মানববন্ধন ও প্রতিবাদস্বরূপ বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে আসছেন। উন্নত জাতি গঠনে প্রাথমিক শিক্ষার ভিত্তি স্বরূপ বিভিন্ন দেশে প্রাথমিক শিক্ষকদের সবচেয়ে বেশি মর্যাদা দেয়া হয় এবং শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তার বিষয় মাথায় রাখা হয়। সমগ্র এশিয়াতেও এমনকি আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন ও মর্যাদা অনেক উন্নত। সে সকল দেশের তুলনায় সর্বনিম্ন বেতন বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষকদের তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী করে রাখা হয়েছে। সরকারি অন্যান্য সেক্টরে নির্দিষ্ট সময় পরপর পদোন্নতির সুযোগ রয়েছে কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা সেক্টরে এ ধরনের পদোন্নতির কোনো সুযোগ নেই। একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক অনেক দিন কাজ করার পরও কোনো প্রমোশন পান না। এ সমস্যাগুলোর কারণে মেধাবীরা এই ডিপার্টমেন্টের প্রতি উৎসাহ হারিয়ে ফেলছে। এমনও অনেকে আছেন যে একই পোস্টে কাজ করে শেষ পর্যন্ত অবসরে গেছেন। এভাবে একই পোস্টে দীর্ঘদিন কাজ করতে থাকলে শিক্ষকেরা এই পেশার প্রতি আকর্ষণ হারিয়ে ফেলে। শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের প্রতি দায়িত্ব ভালোবাসা ও আগ্রহের কারণে এবং শিক্ষকতাকে সেবা হিসেবে গ্রহণের কারণে শিক্ষকরা এই পেশার পুরো দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে ১৩ তম গ্রেড বেতন পাচ্ছেন দেশে প্রায় তিন লাখেরও বেশি প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক যাদের মধ্যে অধিকাংশ স্নাতক বা স্নাতকোত্তর শিক্ষকতা যোগ্যতা সম্পন্ন। বর্তমানে শিক্ষকদের একমাত্র দাবী তাদের দশম গ্রেড। আমাদের দেশের শিক্ষকদের মর্যাদা ও বেতন একজন সরকারি অফিসের কেরানির চেয়েও কম। প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকদের বেতনের মর্যাদা সেভাবে রাষ্ট্র দিতে পারেনি। এজন্য শিক্ষকরা এখনও সমাজে মর্যাদা আসনে অধিষ্ঠিত হতে পারেননি। একজন প্রাথমিক শিক্ষককে অনেক কষ্ট করে দিন পার করতে হয়। বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে শিক্ষকেরা সংসারের ব্যয়ভার বহন করতে হিমশিম খেয়ে উঠছেন। নিম্নমানের বেতন স্কেলের কারণে মেধাবীরা এই পেশায় আসতে চাচ্ছে না আবার কেউ আসলেও ভালো বেতনের সুযোগ–সুবিধা পেলে অন্য পেশায় চলে যায়। দেশ ও জাতির সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়াসে প্রাথমিক সহকারীদের বেতন বৈষম্য দূর করে দশম গ্রেড দিয়ে মেধাবীদের এ পেশায় আকৃষ্ট করতে হবে। শতভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে তাদের পেশাগত জীবন সমৃদ্ধ করতে হবে এবং প্রধান শিক্ষকসহ তৃণমূলের কর্মকর্তাদের আর্থিক সুযোগ–সুবিধা স্বাভাবিকভাবে বাড়বে সহকারী শিক্ষকদের এই বৈষম্য আন্দোলন দেশ ও জাতির শিক্ষার সমৃদ্ধি তথা উন্নয়ন সম্পৃক্ততার সঙ্গে পুরো প্রাথমিক শিক্ষা পরিবারের উন্নতি ও ভাগ্য জড়িয়ে আছে। এখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সকল সহকারী শিক্ষকদের একমাত্র দাবী দশম গ্রেড বাস্তবায়ন। আশা করব দেশের মেরুদন্ড মজবুত করার লক্ষ্যে শিক্ষকদের এই দাবি অতিসত্বর পূরণ হবে।