রণেশ দাশগুপ্ত : এক অনন্য প্রগতিশীল সত্তা

| সোমবার , ৪ নভেম্বর, ২০২৪ at ৮:১৮ পূর্বাহ্ণ

রণেশ দাশগুপ্ত (১৯১২১৯৯৭)। এক অনন্য প্রগতিশীল সত্তা। শোষণমুক্ত প্রগতিশীল সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে নিবেদিত এক সংগ্রামী আদর্শ। ব্রিটিশবিরোধী রাজনৈতিক আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতাপূর্ব বাংলাদেশের বিভিন্ন আন্দোলনসংগ্রাম, মহান মুক্তিযুদ্ধ সহ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রগতিপন্থী সামাজিকসাংস্কৃতিকরাজনৈতিক নানা কর্মকাণ্ডে তাঁর সক্রিয় ভূমিকা ছিল। লেখালেখি ও সাংবাদিকতায়ও রণেশের অবদান ছিল অনন্য। ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ ই জানুয়ারি আসামের ডিব্রুগড়ে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম অপূর্বরত্ন দাশগুপ্ত মা ইন্দুপ্রভা দাশগুপ্ত। ১৯২৯এ রণেশ দাশগুপ্ত তৎকালীন অখণ্ড বিহারের রাঁচি স্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং কলকাতার সিটি কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। এরপর বরিশালের ব্রজমোহন কলেজে ইংরেজিতে অনার্সে ভর্তি হন। ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে জীবনের তাগিদে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে সাংবাদিকতায় যোগ দেন রণেশ। তাঁর সাংবাদিকতার শুরু ‘সোনার বাংলা’ পত্রিকায়। পরবর্তীসময়ে দৈনিক সংবাদএ যোগ দেন। দীর্ঘদিন তিনি এই পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ‘উদীচী’, ‘খেলাঘর’, ‘সৃজনী সাহিত্য গোষ্ঠী’ প্রভৃতি সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার মাধ্যমে দেশে প্রগতিশীল সাংস্কৃতির জাগরণ ঘটাতে প্রত্যয়ী ছিলেন আজীবন ত্যাগী এই মানুষটি। রাজনৈতিক জীবনে তাঁকে অনেকবার জেলজুলুম সহ্য করতে হয়েছে। কিন্তু কখনোই তিনি আপোষ করেন নি। সকল প্রতিক্রিয়াশীলতার বিরুদ্ধে বরাবরই তিনি ছিলেন সোচ্চার কণ্ঠ। রিটার্ন টিকেট নিয়ে ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১ লা নভেম্বর কলকাতায় একটি সভায় যোগ দিতে গিয়ে সেখানেই থেকে যেতে বাধ্য হন রণেশ দাশগুপ্ত। কারণ সেই সময় বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা, সামরিক শাসন ও কারফিউ বলবৎ এবং মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শক্তির পুনর্বাসন তাকে মারাত্মকভাবে আঘাত করেছিল। ফলে ২২ বছর আর দেশে ফেরেননি তিনি। তবে বাংলাদেশের সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠতা ও সম্পর্ক বজায় ছিল আমৃত্যু। তিনি একটানা ২২ বছর কলকাতায় বসবাস করলেও মনেপ্রাণে ছিলেন একজন খাঁটি বাংলাদেশি। প্রচণ্ড অর্থকষ্টে থাকা রণেশ দাশগুপ্তকে তৎকালীন ভারত সরকার ভাতা দিতে চাইলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, ‘আমি একজন বাঙালি, আমি তোমাদের দেওয়া কোনও ভাতা নেব না’। এমনকি ভারতে থাকাকালীন তিনি সে দেশের নাগরীকত্বও নেননি। রণেশ দাশগুপ্ত রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহের মধ্যে রয়েছে: ‘আলো দিয়ে আলো জ্বালা’, ‘উপন্যাসের শিল্পরূপ’, ‘শিল্পীর স্বাধীনতার প্রশ্নে’, ‘ল্যাটিন আমেরিকার মুক্তি সংগ্রাম’, ‘কখনো চম্পা কখনো অতশী’; সম্পাদিত গ্রন্থ ‘জীবনানন্দ দাশের কাব্যসম্ভার’, ‘সুভাষ মুখোপাধ্যায় ও সুকান্ত ভট্টাচার্যের কাব্যসমগ্র’ প্রভৃতি। ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দের ৪ ঠা নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধআইন কখনো নিজের হাতে তুলে নিবেন না