বিদ্যুৎ যেন যায় না, বার বার আসে! এ যেন দক্ষিণ চট্টগ্রামের পল্লী বিদ্যুৎ ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) প্রায় ৮ লাখ গ্রাহকের নিত্যনৈমিত্তিক ও চরম ভোগান্তির পরিস্থিতি। গত দেড় মাস ধরে এভাবেই বিদ্যুতের ভেল্কিবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে সর্বস্তরের মানুষ।
জানা গেছে, দক্ষিণ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী, পটিয়া, কর্ণফুলী, আনোয়ারা, বাঁশখালী, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলায় পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা ৬ লক্ষ ৬৩ হাজার চারশত তেত্রিশ জন (অক্টোবর–২৪) পর্যন্ত। অপরদিকে এ ৮ উপজেলায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) গ্রাহক সংখ্যা এক লক্ষাধিক। বিভিন্ন উপজেলায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ও পিডিবি’র গ্রাহকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত দেড় মাস ধরে পল্লী বিদ্যুৎ ও পিডিবির বিদ্যুৎ গ্রাহকরা চরম অস্বস্তিতে রয়েছেন। দিন–রাত সমান তালে চলছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। ১০ থেকে ১২ বার পর্যন্ত বিদ্যুৎ আসা যাওয়া করছে। এতে গরমের পাশাপাশি ফ্রিজে সংরক্ষিত বিভিন্ন জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অফিস আদালতে দৈনন্দিন কাজকর্মে মারাত্মক ব্যাঘাতের সৃষ্টি হচ্ছে। একবার বিদ্যুৎ চলে গেলে পুনরায় আসতে আধা ঘণ্টা থেকে একঘণ্টার বেশি সময় নিচ্ছে। পল্লী বিদ্যুৎ সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণ চট্টগ্রামের ৮টি উপজেলায় প্রতিদিন বিকাল ৫টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বিদ্যুতের চাহিদা ১৬০ মেগাওয়াট। সাপ্লাই রয়েছে ৯০ মেগাওয়াট এবং ঘাটতি রয়েছে ৭০ মেগাওয়াট। তবে শুক্র ও শনিবার চাহিদা কম হওয়ায় তুলনামূলক লোডশেডিং কম থাকে। গতকাল রবিবার দক্ষিণ চট্টগ্রামে ২০% লোডশেডিং ছিল। গড়ে প্রতিদিন ২০–৪০% লোডশেডিং হচ্ছে। গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার ৫০% লোডশেডিং ছিল। চন্দনাইশ উপজেলার কাঞ্চনগর উপজেলার বাসিন্দা মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম বলেন, চন্দনাইশে পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের লোডশেডিংয়ে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। দিনে ২৪ ঘণ্টায় ১২ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ থাকছে না। এতে করে মানুষের দৈনন্দিন কাজে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে। লোহাগাড়ার সদর এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, গত একমাস ধরে লোহাগাড়ায় পল্লী বিদ্যুতের যেন ভেল্কিবাজি চলছে। দিনে রাতে ১০/১২ বার বিদ্যুৎ আসা যাওয়া করছে। একবার বিদ্যুৎ চলে গেলে একঘণ্টা কিংবা আধা ঘণ্টা পর আসছে। এতে গরমের কারণে রাতে ঘুম যাওয়াও কষ্টকর হয়ে উঠছে। কর্ণফুলী উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বানাজা বেগম নিশি বলেন, কর্ণফুলীর শিকলবাহা, চরলক্ষ্যা ও চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন পিডিবির অধীনে রয়েছে। এখানে রাতে দুই ঘণ্টাও বিদ্যুৎ থাকে না। অন্যদিকে কার্ড মিটারে টাকা বেশি কাটছে বলেও অভিযোগ তার। প্রতিদিন ৫/৭ বার বিদ্যুৎ চলে যায়। একবার গেলে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে আসতে।
উল্লেখ্য, দক্ষিণ চট্টগ্রামে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ২৬টি সাব–স্টেশন রয়েছে। এরমধ্যে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নিজস্ব সাব–স্টেশন রয়েছে ১৮টি এবং বাকি ৮টি বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির–১ (পটিয়া) ডিজিএম টেকনিক্যাল মো. মুহিউদ্দীন বলেন, বিদ্যুৎ সমস্যা একটি জাতীয় সমস্যা। বিষয়টি শুধু এখানকার সমস্যা নয়। আশা করছি অচিরেই এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পিডিবির গ্রাহকদের চাহিদার তুলনায় বর্তমানে ৫০% বিদ্যুৎ ঘাটতি রয়েছে। যার কারণে পিডিবির বিদ্যুৎ গ্রাহকরা লোডশেডিংয়ের শিকার হচ্ছে। সরকার এ বিষয়ে আন্তরিক রয়েছে। আশা করি সমাধান হয়ে যাবে।