রাঙ্গুনিয়ায় মাটি বিক্রির সিন্ডিকেট আবার সক্রিয়

রাতেই কাটা হচ্ছে পাহাড়

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি | শনিবার , ২ নভেম্বর, ২০২৪ at ৯:০৮ পূর্বাহ্ণ

রাঙ্গুনিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে দলের প্রভাব খাটিয়ে পাহাড় কাটার মহাযজ্ঞ চলে আসছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের পতন হলেও বন্ধ হয়নি পাহাড় নিধন। নতুন করে সক্রিয় হচ্ছে পাহাড়ি মাটি বিক্রি সিন্ডিকেট। এতে পাহাড়ের নিরব কান্না যেন থেকেই গেছে। সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার লালানগর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের চাঁন্দনগর এলাকায় রাতের আঁধারে পাহাড় কেটে সাবাড় করা হয়েছে। প্রায় ২০ ফুট উঁচু পাহাড়টি কেটে সমতল ভূমিতে পরিণত করা হয়েছে। উজাড় করা হয়েছে পাহাড়ে থাকা বিভিন্ন ফলদ গাছ। এস্কেভেটর দিয়ে এক সপ্তাহ ধরে মাটি কাটার পর খবর পেয়ে বনবিভাগের লোকজন গিয়ে পাহাড় কাটার মহাযজ্ঞ বন্ধ করে দেয়। তবে এর আগেই পাহাড় কাটার সরঞ্জাম সরিয়ে নেয় চক্রটি। পাহাড় কেটে মাটিগুলো আশেপাশের বিভিন্ন ফসলি জমি ভরাট করার কাজেই ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

এই ব্যাপারে স্থানীয় বাসিন্দা চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য এবং সরকারি আইন কর্মকর্তা এডভোকেট ইমরান হোসেন চৌধুরী জানান, ওই এলাকায় পৈতৃক মালিকানাধীন পাহাড়ের পাশাপাশি বনবিভাগের মালিকানাধীন তাদের দখলীয় সরকারি খাস পাহাড় ছিল। যেখানে তারা কমলা ও আমবাগান সৃজন করেছিলো। কিন্তু সম্প্রতি পাহাড় কাটা সিন্ডিকেট ঢালু থেকে প্রায় ২০ ফুট উঁচু পাহাড়টি কেটে সাবাড় করে। বনবিভাগের বাধা দেয়ার আগ পর্যন্ত দুই কানি মতো আয়তনের পাহাড়ের দেড় কানিই তারা কেটে সমতল ভূমিতে পরিণত করে।

এই ব্যাপারে বন বিভাগের ইছামতী রেঞ্জ কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, লালানগরের জায়গাটা পাহাড়ি টিলা শ্রেণির। যা ডিসির ১ নম্বর খাস খতিয়ানের অংশ। ১৯৩৫ সালে গ্যাজেট নোটিফিকেশন মূলে এটা বনবিভাগকে দেয়া হয়। যেখানে ২০০৩ সালে সামাজিক বনায়ন করলেও স্থানীয় একজন স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আনলে গাছগুলো কেটে আনা সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি পাহাড় কেটে উজাড় করার খবরে বনবিভাগের লোকজন ঘটনাস্থলে গেলে স্থানীয় কয়েকজন নারী বনবিভাগের তিনজন লোককে হেনস্থা করে। তবে পাহাড় কাটা বন্ধ করে দেয়া হয়। এই ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। আশা করি দ্রুত এই বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া যাবে।

জানা যায়, উপজেলার দক্ষিণ রাজানগরের মোহাম্মদপুর, সোনাগাঁও, কোদালা, ইসলামপুরসহ বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় সক্রিয় পাহাড় কাটার একাধিক সিন্ডিকেট। এসব চক্র পাহাড় কেটে সাবাড় করে ফসলি জমি ভরাট করে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতিসাধন করছে। জনস্বার্থে এসব পাহাড়খেকোদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি সচেতন মহলের।

এই ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদুল হাসান জানান, পাহাড় কাটায় জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রশাসন সবসময় জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করে। কোথাও খবর পেলেই সেখানেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়। পাহাড় কাটার অপচেষ্টা করা হলে কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না বলে তিনি হুঁশিয়ারি দেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকাউখালীতে অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্যকে অপহরণের অভিযোগ
পরবর্তী নিবন্ধআফগানিস্তান সিরিজের দল ঘোষণা