নানা কারণে অপেক্ষাকৃত তারুণ্য নির্ভর দল নিয়ে বাংলাদেশ সফরে এসেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা দল। দলের সঙ্গে এলেও নিয়মিত অধিনায়ক টেন্ডা বাভুমা ইনজুরির কারণে খেলতে পারেননি দুই টেস্টেই। তারপরও নিজেদের মাঠে বাংলাদেশকে লজ্জায় ডুবিয়ে হোয়াইটওয়াশের তিক্ত স্বাদ দিল দক্ষিণ আফ্রিকা। মিরপুর টেস্টে হারের পর চট্টগ্রামে ঘুরে দাঁড়াবে স্বাগতিকরা তেমনটিই প্রত্যাশা ছিল। আর সে কারণেই কিনা চট্টগ্রামে ব্যাটিং ট্র্যাক করা হয়েছিল। কিন্তু কে জানতো সে ব্যাটিং ট্র্যাক বুমেরাং হয়ে যাবে টাইগারদের জন্য। যে উইকেটে প্রোটিয়ারা রানের বন্যা বইয়ে দিল সে উইকেটে রানের জন্য মাথা কুড়ে মরল বাংলাদেশের ব্যাটাররা। ওদের জন্য ব্যাটিং উইকেটটা বাংলাদেশের বেলায় যেন পরিণত হয়ে গেল বোলিং উইকেটে। তবে দুই ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটাররা আত্মাহুতি দিয়ে এসেছে। ফলে এক দিনেই ১৬টি উইকেট হারিয়ে লজ্জার হার বরণ করতে হলো স্বাগতিকদের।
যেখানে দক্ষিন আফ্রিকা জিতেছে এক ইনিংস এবং ২৭৩ রানে। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের ব্যাটিং স্বর্গে দুই ইনিংস মিলিয়েও ৯০ ওভার ব্যাটিং করতে পারেনি বাংলাদেশ। ম্যাচে ত্রিশ ছুঁতে পেরেছেন চার জন। এদের দুজনের মূল কাজ আসলে বোলিং। দুই ইনিংসেই সর্বোচ্চ জুটি নবম উইকেটে। চট্টগ্রামের ব্যাটিং উইকেটে ম্যাচ শেষ তিন দিনেই।
আগের দিন নেপালের রাজধানী থেকে বাংলাদেশের জন্য আনন্দের বিশাল এক উপলক্ষ্য এনে দিয়েছিল বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। গতকাল দেশে ফেরা এই নারী ফুটবল দল যখন ঢাকা শহরে ছাদ খোলা বাসে শিরোপা উৎসব করছিল ঠিক তখন চট্টগ্রামে লজ্জায় মুখ লুকানোর পথ খুঁজছিল ক্রিকেট দল। ব্যাটিং, বোলিং এবং ফিল্ডিং তিন বিভাগেই চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে সিরিজে হোয়াইট ওয়াশ হলো বাংলাদেশ। ঢাকা টেস্ট জিতে দশ বছর পর উপমহাদেশে প্রথম জয়ের দেখা পেয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। আর এবার দশ বছর পর সিরিজ জিতল উপমহাদেশে প্রোটিয়ারা। বাংলাদেশকে পরাজয়ের গ্লানিতে ডুবিয়ে নিজেদের সবচেয়ে বড় জয়ের রেকর্ডও গড়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ব্লুমফন্টেইনে ২০১৭ সালে বাংলাদেশকেই ইনিংস ও ২৫৪ রানে হারিয়েছিল তারা।
এদিকে ২০১৪ সালের আগস্টের পর এই প্রথম এশিয়ায় সিরিজ জিতল দক্ষিণ আফ্রিকা। অথচ ফেবারিট হিসেবে সিরিজ শুরু করলেও ব্যর্থতার নতুন মাত্রা যোগ করে চট্টগ্রামের মাঠে এক ম্যাচে নিজেদের সর্বনিম্ন রানের নতুন রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। দুই ইনিংস মিলিয়ে তাদের সংগ্রহ মোটে ৩০২ রান। ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তারা করেছিল ৩৬৬ রান। আগের দিন শেষ বিকেলে ব্যাট করতে নেমে ৪ উইকেট হারিয়েই চাপে ছিল বাংলাদেশ। তৃতীয় দিনের শুরুতেই ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন একে একে শান্ত, মুশফিকুর রহিম, মাহিদুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান মিরাজ। রানের খাতা খুলতে ব্যর্থ হন মুশফিক ও অভিষিক্ত মাহিদুল। ৪ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে পঞ্চাশের আগে ৮ উইকেট হারানো দলকে বেশ কিছু বিব্রতকর রেকর্ডের হাত থেকে বাঁচান মোমিনুল ও তাইজুল। দুজন মিলে গড়ে তোলেন ১০৩ রানের জুটি। টেস্ট ইতিহাসে পঞ্চাশের আগে ৮ উইকেট হারানোর পর এটিই সর্বোচ্চ জুটি। লাঞ্চের পর সেনুরান মুথুসামির বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে মোমিনুল। তাইজুলকে আউট করে ইনিংস মুড়িয়ে দেন মহারাজ। ৮২ রান করে দলকে চরম লজ্জার হাত থেকে রক্ষা করেন মোমিনুল। আর তাকে সঙ্গ দেওয়া তাইজুলের ব্যাট থেকে আসে ৩০ রান। ১৫৯ রানে অল আউট হওয়া বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে পিছিয়ে পড়ে ৪১৬ রানে। মিরপুরের পর এখানেও ইনিংসে ৫ উইকেট শিকার করেন কাগিসো রাবাদা।
ফলো অনে পড়া বাংলাদেশকে আবার ব্যাটিংয়ে পাঠায় দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক এইডেন মার্করাম। এই ইনিংসেও চা বিরতির আগেই হারায় বাংলাদেশ ৪ উইকেট। আরো একবার হতাশ করেন দুই ওপেনার সাদমান ইসলাম ও মাহমুদুল হাসান জয়। টিকতে পারেননি জাকির হাসানও। প্রথম ইনিংসে ৮২ রান কর মোমিনুল এবার ফিরেন খালি হাতে। আর এর ফলে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ শূন্যের (১৬) রেকর্ডে মোহাম্মদ আশরাফুলকে স্পর্শ করেন মোমিনুল। দলের চরম খারাপ অবস্থায় যখন দায়িত্ব নেওয়া প্রয়োজন তখন ফুল লেংথ বলে সুইপ খেলার চেষ্টায় এলবিডব্লিউ হন মুশফিক। প্রথম ইনিংসে রানের খাতা খুলতে না পারা মুশফিক এবার ফিরেন ২ রান করে। দলের সবার ব্যর্থতার দিনে শান্তও শামিল হলেন সে মিছিলে। শুরুটা ভাল করলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি অধিনায়ক । ৫৫ বলে ৩৬ রানে থামে তার ইনিংস। চলতি বছর ৮ টেস্টের ১৫ ইনিংসে মাত্র একটি হাফ সেঞ্চুরি রয়েছে তার। আর মোট রান ৩১৭ । এরপর মিরাজও দ্রুত ফিরলে একশর আগে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়ে যায় বাংলাদেশ। তবে আগের ইনিংসের মত এ ইনিংসেও নবম উইকেটে হাসান মাহমুদকে নিয়ে ৩৭ রানের জুটি গড়েন মাহিদুল। একপর্যায়ে মনে হচ্ছিল, দিন পার করে দেবেন তারা। কিন্তু সেটা আর হলো না। ২৯ রান করে ফিরেন মাহিদুল। এরপর নাহিদ রানাকে ফিরিয়ে ৫ উইকেট পূর্ণ করেন মহারাজ। তবে হাসান মাহমুদ অপরাজিত ছিলেন ইনিংসে সর্বোচ্চ ৩৮ রান করে। ৩০ বলের ইনিংসটিতে একটি চার এবং ৪টি ছক্কা মারেন তিনি। প্রথম ইনিংসে রাবাদা আর দ্বিতীয় ইনিংসে কেশভ মহারেজ নিয়েছেন ৫টি করে উইকেট। ম্যান অব দা ম্যাচ হয়েছেন টনি ডি জর্জি। আর ম্যান অব দা সিরিজ হয়েছেন কাগিসো রাবাদা। খেলা শেষে প্রধান অতিথি হিসেবে পুরস্কার তুলে দেন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ। এ সময় বিসিবি পরিচালক আকরাম খান, মনজুর আলম মঞ্জু এবং নাজমুল আবেদীন ফাহিম উপস্থিত ছিলেন।