বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকতে হলে নির্বাচন জরুরি মন্তব্য করে অন্য বিষয়ে নজর না দিয়ে নির্বাচনে জোর দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। নির্বাচন কমিশনের গঠনের লক্ষ্যে সার্চ কমিটির ঘোষণার প্রসঙ্গ টেনে গতকাল বুধবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটেতে এক আলোচনায় তিনি এই আহ্বান জানান। ন্যাশনাল পিপলস পার্টি–এনপিপির ১৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনায় বিএনপি নেতা বলেন, আমাদের রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকতে হলে, জাতি হিসেবে টিকে থাকতে হলে, সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হলে এখানে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য, সকলের অংশগ্রহণে একটা নির্বাচন এবং সেটা একেবারেই নিরপেক্ষ করতে হবে। কারণ, আমাদের সামনে এখন সবচেয়ে বড় প্রয়োজন বা চ্যালেঞ্জ একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। খবর বিডিনিউজের।
প্রবল গণআন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের তিনদিন পর সংবিধান সমুন্নত রাখার শপথ নিয়ে যে অন্তর্র্বর্তী সরকার শপথ নিয়েছে, তারা নির্বাচন কবে, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য না দিয়ে রাষ্ট্র সংস্কার নিয়েই বেশি কথা বলছে। বিএনপি সরকার পতনের পরই সংবিধান অনুযায়ী সংসদ ভেঙে যাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছিল। সংবিধানে বলা আছে, দৈব দুর্বিপাকে এই সময়ে নির্বাচন করা না গেলে পরের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হতেই হবে। বিএনপি শুরুতে সরকারকে যৌক্তিক সময় দেওয়ার কথা বললেও এখন নানা কর্মসূচিতে নির্বাচন দেওয়ার দাবি তুলছে। মির্জা ফখরুল সরকারকে উদ্দেশ করে বলেন, অন্যান্য বিষয়গুলোর দিতে নজর না দিয়ে নজরটা ওই দিকে করুন, ফোকাসটা ওই দিকে করুন… ইলেকশন। এটার কোনো বিকল্প নাই। নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ দিতে গঠনে সার্চ কমিটি গঠনের প্রতিক্রিয়ায় ফখরুল বলেন, আমাদের প্রত্যাশা ছিল যে এই কমিটি করার আগে তারা রাজনৈতিক দলগুলো, যারা স্টেকহোল্ডার, তাদের সঙ্গে একটু পরামর্শ করবেন। যাই হোক… এটাকে আমরা বড় ধরনের সমস্যা মনে করছি না। দ্রুত নির্বাচন কমিশন হোক এবং নির্বাচন কমিশন অতি দ্রুততার সঙ্গে তাদের যে কাজ, সেই কাজটা (নির্বাচন) তারা করবেন।
এই সরকারের ভিন্ন কোনো রাজনৈতিক এজেন্ডা নেই বলে বিশ্বাস করেন জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, মুহাম্মদ ইউনুসকে আমি বলতে চাই যে, আপনি সারা পৃথিবীতে সমাদৃত, বাংলাদেশের মানুষ আপনাকে খুবই ভালোবাসে, আপনাকে সম্মান দিয়েছে, দেবে, দিতে চায়। একটাই আপনি এই জায়গাটা যাতে নষ্ট না হয় সেই দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখবেন।
বর্তমান সময়কে কঠিন ও বড়ই জটিল আখ্যা দিয়ে ফখরুল বলেন, শুধু আবেগের বশবর্তী হয়ে কোনো হঠকারিতার কারণে যদি ভুল হয়ে যায়, আমরা রাষ্ট্র হিসেবে বড় বিপদে পড়ে যাব। কারণ আমাদেরকে বিপদগ্রস্ত করবার জন্য, আমাদের অস্তিত্বকে বিপন্ন করবার জন্য অনেক চেষ্টা করা হচ্ছে… এই কথাগুলো আমাদের মনে রাখতে হবে।
অন্তর্র্বর্তী সরকারের কর্তা ব্যক্তিরা রাজনৈতিক লোক নন মন্তব্য করে তিনি বলেন, তারা আমাদের সাহায্য করতে এসেছে যে, তারা নিরপেক্ষ থেকে রাস্তা দেখিয়ে দেবে। রাজনীতিবিদদেরই সমস্যা সমাধান করতে হবে, রাজনীতিবিদ ছাড়া কোনো সমস্যার সমাধান হয় না, হতে পারে না, এই কথাগুলো মাথায় রেখে আমাদের কাজ করতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, রাজনীতি ও সংগ্রাম কখনও শেষ হয় না। রাজনীতি–সংগ্রাম চলতে থাকে এবং সংস্কার হচ্ছে, চলবে। আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই সংস্কারের জন্য কতগুলো কমিটি করেছেন। আমরা প্রত্যাশা করি, সরকার দ্রুত সংস্কার কমিশন থেকে রিপোর্ট নিয়ে জনগণের সামনে তুলে ধরবেন এবং সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। একটা কথা আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, সব সংস্কার জনগণের দ্বারা অনুমোদিত হতে হবে, জনগণকে মেনে নিতে হবে। এটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় জিনিস। জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া সংস্কার কখনও টেকসই হবে না, এটা মাথায় রাখতে হবে।
উপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া সংস্কার সফল হয় না মন্তব্য করে বিএনপি নেতা বলেন, আইয়ুব খান চেষ্টা করেছেন, এরশাদ চেষ্টা করেছেন, সেটা সম্ভব হয়নি। সুতরাং এমন কিছু করা যাবে না যেটা আমাদের দেশের সঙ্গে, মানুষের সংস্কৃতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়। রাষ্ট্র সংস্কারে বিএনপিরও ৩১ দফা প্রস্তাব আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ২০১৬ সালে আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ভিশন ২০, ৩০ দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি দ্বি–কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ, ‘রেইনবো নেশন’, মানুষের অধিকারসহ বিভিন্ন কথা বলেছেন। আমরা অত্যন্ত সচেতন যে, পরিবর্তন–সংস্কার যুগোপযোগী না হয় তাহলে রাষ্ট্র সঠিকভাবে কাজ করবে না… এই বিষয়গুলো আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে।
এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্ব ও মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফার সঞ্চালনায় আলোচনায় জামায়াতে ইসলামীর নেতা আবদুল হালিম, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এনডিপির কেএম আবু তাহের, জাগপার খন্দকার দেলোয়ার হোসেন, গণদলের এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, গণঅধিকার পরিষদের ফারুক হাসান, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক পার্টির এসএম শাহাদাত, বাংলাদেশ ন্যাপের এম এন শাওন সাদেকী, ডিএল এর খোকন চন্দ্র দাস, এনপিপির জহির হাকিম, শরীফ মনির হোসেন, বেলাল হোসেন, ফরিদ উদ্দিন, ফরিয়া জামানও বক্তব্য রাখেন।