নানা অপরাধের বিরুদ্ধে চলমান পুলিশি অভিযান জোরদারের নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ময়নুল ইসলাম। ২৮ অক্টোবর আইজিপি এক বিশেষ বার্তায় এ নির্দেশ প্রদান করেন বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে পুলিশ সদরদপ্তর। পুলিশ সদরদপ্তর জানায়, দেশব্যাপী চলতি ১৮ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া বিশেষ অভিযানে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র–জনতার ওপর হামলাকারী, গুরুত্বপূর্ণ হত্যা মামলার আসামিসহ অন্যান্য মামলার আসামিদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। চলমান অভিযানে অপরাধপ্রবণ এলাকা অর্থাৎ ক্রাইম জোনে কম্বিং অপারেশন পরিচালিত হচ্ছে। পুলিশের স্থায়ী চেকপোস্টের পাশাপাশি অস্থায়ী চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। পুলিশি টহল জোরদার এবং গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। মোবাইল পেট্রোল ও মোটরসাইকেল পেট্রোল টিম বৃদ্ধি করা হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এলাকায় ১৫০টি স্থায়ী ও মোবাইল চেকপোস্ট কার্যকর রয়েছে। ৩০০টি মোটর সাইকেল টিম এবং ২৫০টি টহল টিম কার্যকর রয়েছে। এছাড়া, দেশব্যাপী অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় যারা চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন ধরনের অপকর্মে লিপ্ত ছিল তাদের বিরুদ্ধেও মামলা, গ্রেপ্তারসহ আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে যা চলমান রয়েছে।
চলমান বিশেষ অভিযানে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ, ডাকাত ২০০ জন; তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ১৬ জন; বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–আন্দোলনে হামলাকারী ১ হাজার ১৪০ জন; মাদকদ্রব্য উদ্ধার সংক্রান্তে ১ হাজার ১৪৪ জন এবং অবৈধ অস্ত্রধারী ৫৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ময়নুল ইসলাম গত ১২ অক্টোবর ঢাকার পূজামণ্ডপ পরিদর্শন শেষে বলেছিলেন, দুর্গাপূজার পর ছিনতাই, মাদক, চাঁদাবাজি ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করা হবে। কোনো অপকর্ম ঘটিয়ে কেউ পার পাবে না। এর দুই সপ্তাহ পর পুলিশি অভিযান জোরদারের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। ইতোমধ্যে ঘটে গেছে বেশ কয়েকটি ঘটনা। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখের সামনে ঢাকা শহরের কোনো কোনো এলাকা অপরাধীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার কথা উল্লেখ করা যায়। পরিস্থিতি এতটাই নাজুক যে মোহাম্মদপুর থানার সামনে শতাধিক মানুষ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছেন। তাঁরা বলেছেন, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেন স্বাভাবিক হলো না, সেই প্রশ্নের জবাব পুলিশকে দিতে হবে। তাঁরা তিন দিন সময়ও বেঁধে দিয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিভিন্ন থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্রের একাংশ সন্ত্রাসীদের হাতে চলে গেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব এসব অস্ত্র উদ্ধার করে প্রত্যেক সন্ত্রাসীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা। কিন্তু এখনো বহু অস্ত্র উদ্ধার করা যায়নি। এর পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে দখলবাজি, চাঁদাবাজির ঘটনাও ঘটছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জননিরাপত্তা এখনও পরিপূর্ণভাবে দেশে নিশ্চিত করা যায়নি। তবে এর পেছনে নানা কারণও বিদ্যমান তা অনেকের অভিমত। ড. ইউনূস আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত ব্যক্তিত্ব হলেও বৈশ্বিক পর্যায়ে একটি দেশের ভাবমূর্তি রক্ষা করা তার একার পক্ষে সম্ভব নয়। বিশেষত পশ্চিমা দেশগুলো দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো এবং নিরাপত্তা নিয়েই শঙ্কিত। এ শঙ্কার প্রভাব পড়ছে বৈদেশিক বিনিয়োগ ও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে। এমনকি রাজনৈতিক একটি পক্ষ অর্থনৈতিক অঞ্চলেও ইন্ধন জোগাচ্ছে এমন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। তাঁরা বলেন, জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পুলিশ বাহিনীকে তৎপর হতে হবে। আমরা জানি, বিদায়ী সরকারের সময় পুলিশ বাহিনীকে বিতর্কিতভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে পুলিশ বাহিনীর প্রতি জনআস্থা হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু ওই সরকারের পদত্যাগের পর পুলিশ বাহিনীর সংস্কারের বিষয়ে আলোচনা জোরদার হয়েছে এবং বাহিনীতে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে ইতোমধ্যে। এর মধ্যে স্থানীয় সরকার ও জেলা পর্যায়ের প্রশাসনিক কাঠামো কার্যকর করা গেলেও মাঠ পর্যায়ে পুলিশকে পুরোপুরি কার্যকর করা যায়নি। জনগণের ভীতি দূর করে জনগণের সেবা করা পুলিশের দায়িত্ব। পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা ছিল। যে কারণে হোক বর্তমানে পুলিশের ভেতর যে ভয় ঢুকেছে, তা দূর করতে হবে। এই আস্থা অটুট রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।