স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাঙামাটি নার্সিং ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের দুপক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনার পর ‘পক্ষপাতের’ অভিযোগ তুলে শিক্ষকদের পদত্যাগের দাবি উঠেছে। ভোটে তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ করা; না–করা নিয়ে তর্ক–বিতর্ক উঠলেও এবার শিক্ষকদের পদত্যাগ দাবির পর সাতদিন বন্ধ করা হয়েছে একাডেমিক কার্যক্রমও।
শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচন আয়োজন উপলক্ষে গত রোববার রাঙামাটি নার্সিং ইনস্টিটিউটে আলোচনা ওঠে। নির্বাচনে নতুন প্রথম বর্ষ, পুরাতন প্রথম বর্ষ, দ্বিতীয় বর্ষ ও তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের নিয়ম অনুযায়ী অংশগ্রহণের সুযোগ থাকলেও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা আপত্তি জানায়–তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা ভোটে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। এতে নতুন প্রথম বর্ষ, পুরাতন প্রথম বর্ষ ও তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা সকল শিক্ষার্থীর নির্বাচনে অংশগ্রহণের পক্ষে মত দেয়। কিন্তু দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা তাদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষক–ইন্সট্রাক্টরদের জানালেও তাদের কাছ থেকে কোনো সুরাহা পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
এরপর দুপুরে দ্বিতীয় বর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী ডাইনিং হলে খাবার খাওয়ার সময় তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা গিয়ে ডাইনিং হল বন্ধ করে দিতে চায়। সেখান থেকেই তৃতীয় ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা থেকে সংঘর্ষ বাধে। হলের চেয়ার ভাঙচুর ছাড়াও দুপক্ষের মধ্যে ‘মারামারির’ ঘটনা ঘটেছে। এরপর পরিস্থিতি শান্ত করতে ঘটনাস্থলে যান সিভিল সার্জন ডা. নূয়েন খীসাসহ পুলিশ সদস্যরা। ঘটনার মীমাংসা না হওয়ায় রাতে রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে শিক্ষার্থী, শিক্ষক–ইন্সট্রাক্টরদের নিয়ে বৈঠক করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান। বৈঠকে রাঙামাটির সিভিল সার্জন ডা. নূয়েন খীসা. পুলিশ সুপার ড. এসএম ফরহাদ হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নাসরিন সুলতানা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. সাইফুল ইসলাম, নার্সিং ইনস্টিটিউটের ইনস্ট্রাক্টর ইনচার্জ সীমা মণ্ডলসহ শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে জানানো হয়েছে–মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখন ‘বলপূর্বক’ পদত্যাগের সুযোগ নেই। কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে যদি সুনির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ থাকে সেক্ষেত্রে লিখিত অভিযোগ দিতে হবে। অভিযোগ তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে সোমবার (গতকাল) থেকে সাত দিন একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
জানা গেছে, ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত রাঙামাটি নার্সিং ইনস্টিটিউটে তিন বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা ইন নার্সিং ও ১ বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি কোর্স করানো হয়। এরমধ্যে ডিপ্লোমা ইন নার্সিংয়ের আসন সংখ্যা ৮০ ও ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারিতে আসন সংখ্যা ২৫ জন। তবে বর্তমানে সেশনজটের কারণে রাঙামাটি নার্সিং ইনস্টিটিউটে প্রথম বর্ষের নতুন ও পুরাতন ব্যাচ মিলিয়ে শিক্ষার্থী ১৬০ জনের কাছাকাছি। দ্বিতীয় বর্ষের শির্ক্ষাথীরা ব্যতিত বাকি তিনটি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা একটি পক্ষ নিয়েছে। মূলত শিক্ষক–ইন্সট্রাক্টদের পদত্যাগ দাবি জানাচ্ছে নতুন–পুরাতন প্রথম বর্ষ ও তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা।
ঘটনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাঙামাটি নার্সিং ইনস্টিটিউটের ইন্সট্রাক্টর ইনচার্জ সীমা মণ্ডল আজাদীকে জানান, স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একটা জটিলতা দেখা দেয়। পরে ঘটনা বড় হওয়ায় রাতে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে জানানো হয়েছে এখন আপাতত পদত্যাগের সুযোগ নেই। কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে লিখিতভাবে দেওয়ার জন্য। অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপাতত সাতদিন প্রতিষ্ঠানের শ্রেণী কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে।
রাঙামাটির সিভিল সার্জন ডা. নূয়েন খীসা আজাদীকে বলেন, রোববার স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের পক্ষ–বিপক্ষে অবস্থান দেখা দেয়। পরে তারা সকল শিক্ষক, ইন্সট্রাক্টরদের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে। রাতে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এনিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে তারা শিক্ষক ও ইন্সট্রাক্টকদের পদত্যাগ দাবি জানিয়েছে। পরে বৈঠক থেকে তাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত হবে। তদন্ত সাপেক্ষে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গতকাল সোমবার বিকেলে রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, রোববার তাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের অনেক অভিযোগ। তাদের অভিযোগের পেরিপ্রেক্ষিতে আজকে (সোমবার) একটা তদন্ত কমিটি করে দেয়া হচ্ছে। সেই তদন্ত কমিটি তদন্ত করে রিপোর্ট দিবে। তারপরেই তাদের বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।