আগের দিন বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দল চট্টগ্রামে এসে পৌছে। শনিবার দিনটি ছিল দু দলের বিশ্রাম। তবে গতকাল দু দলই নেমে পড়ে অনুশীলনে। সকাল দশটা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত অনুশীলন করে প্রোটিয়ারা। আব স্বাগতিকরা করে দুপুর ২টা থেকে। মিরপুরে দুই টেস্টের সিরিজের প্রথম টেস্টে হেরে বসেছে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে চরম ব্যাটিং বিপর্যয় টাইগারদের হারের অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। তাইতো গতকালের অনুশীলনে সে ব্যাটিং এর উপরই বেশি গুরুত্ব দিতে দেখা গেল টাইগার কোচকে। যেহেতু মিরপুর টেস্টে বাংলাদেশের স্পিনাররা ভাল করেছে তাই স্পিন বোলিং কোচ মুশতাক আহমেদ ঝালাই করে নিলেন তার শীষ্যদের। তবে যথারীতি বাংলাদেশ শিবিরে ব্যতিক্রম ছিলেন মুশফিকুর রহিম। বাংলাদেশ দলের অনূশীলন শিডিউল দুপুর ২ টা থেকে হলেও সকাল ১১ টা থেকে এক অনুশীলন করেছেন মুশফিক। এই কাজটা মুশফিক প্রায়শই করে থাকেন। যদিও মিরপুরে টেস্টে ব্যাট হাতে সফল হতে পারেননি মুশফিকও। তাইতো বার বাড়তি প্রস্তুতি।
অবশ্য সকালে প্রোটিয়ারা বেশ খোশ মেজাজেই অনুীশলন করেছে। দীর্ঘ প্রায় দশ বছর পর উপমহাদেশে টেস্ট ম্যাচে জয় পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। সিরিজে এই এগিয়ে যাওয়াটাকে সিরিজ জয়ে রুপান্তর করতে বেশ ঘামই ঝরিয়েছেন এডেইন মার্করামের দল। যদিও এই টেস্টে ফেরার কথা ছিল নিয়মিত অধিনায়ক টেন্ডা ভাবুমার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার ফেরা হচ্ছেনা। ইনজুরির কারণে তিনি ফিরতে পারছেননা সিরিজের শেষ টেস্টেও। ফলে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব মার্করামের উপরই থাকছে। যদিও তিনিও মিরপুর টেস্টে ব্যাট হাতে সফল হতে পারেননি। তাইতো অনুশীলনে মোটেও শিথিলতার সুযোগ দেখছেননা প্রোটিয়া অধিনায়ক। তার ধারণা বাংলাদেশ দল নিজেদের মাঠে যেকোন সময় ফিরতে পারে। তাইতো সিরিজ জয়ের জন্য নিজেদের প্রস্তুতির কোন বিকল্প দেখছেনা প্রোটিয়ারা। তিন ঘন্টার কঠোর অনুীশলনে কোন ধরনের ছাড় মেলেনি ক্রিকেটারদের। এমনিতেই ক্রিকেটের অনুশীলনটা কঠিনই হয়ে থাকে। বিশেষ করে ম্যাচের অন্তত একদিন আগ পর্যন্ত। যেহেতু আগামীকাল থেকে শুরু হবে টেস্ট ম্যাচ। তাই প্রকৃতপক্ষে কঠোর অনুশীলনের সুযোগ দিল গতকাল একটি দিন। আজ হয়তো ঐচ্ছিক অনুীশলন হবে। তাইতো প্রস্তুতি যা নেওয়ার তা গতকালই সারা হয়ে গেছে। ঘরের মাঠে বাংলাদেশের ভরসার নাম স্পিন হলেও প্রোটিয়াদের ভরসার জায়গা কিন্তু সেই পেসই। তাইতো কাগিসো রাবাদার নেতৃত্বে নিজেদের আরো কঠিন করে প্রস্তুত করে নিলেন প্রোটিয়া পেসাররা।
বাংলাদেশ দলকে সিরিজ বাঁচাতে হলে এই ম্যাচে জয়ের কোন বিকল্প নেই। কিন্তু ম্যাচ বাঁচাতে হলে কি করতে হবে সে পরিকল্পনা বোধহয় বেশ ভালভাবেই বুঝিয়েছেন টাইগার কোচ ফিল সিমন্স। দলের টপ অর্ডারে কেবল মাত্র মাহমুদুল হাসান জয় ছাড়া বাকি কেউই পারেনি রানের দেখা পেতে। বিশেষ করে ওপেনার সাদমান ইসলাম, ওয়ানডাউনে নামা অভিজ্ঞ মোমিনুল হক একেবারেই ব্যর্থ। দুই ইনিংসেই কিছুই করতে পারেনি দুজন মিরপুর টেস্টে। অধিনায়ক শান্ত, অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমও পারেননি দলকে টানতে। দ্বিতীয় ইনিংসে মেহেদী হাসান মিরাজ এবং অভিষিক্ত জাকের আলি অনিক দলকে না টানলে অনেক বড় লজ্জা পেতে হতো টাইগারদের। তাইতো দলের ব্যাটারদের নিয়ে অনুশীলনে বেশি সময় কাটালেন কোচ। সিরিজ বাঁচাতে হলে চট্টগ্রামে জিততেই হবে বাংলাদেশকে। আর সে জয়ের পথে সবচাইতে বড় ভূমিকা রাখতে হবে দলের ব্যাটারদেরকেই। সে মন্ত্রটাই যেন ব্যাটারদের মাথায় ঢুকানোর প্রাণান্তকর চেষ্টা কোচের। অনুশীলনের আগে বাংলাদেশ দলের স্পিনার লোকাল বয় নাঈম হাসান কথা বলেন বিসিবির ভিডিও ক্লিপে। তিনি বলেন নিজের মাঠ, অবশ্যই এই মাঠে খেলতে অনেক ভাল লাগে। তার ক্যারিয়ারের দুটি পাঁচ উইকেট এই মাঠে। তাই একাদশে সুযোগ পেলে নিজেদের সেরাটা দেওয়ার সংকল্প তার। তার মতে মিরপুরের চাইতে ভিন্ন উইকেট হবে চট্টগ্রামে।
আর আমাদের স্পিনাররা বেশ ভাল করছে। বিশেষ করে মিরাজ এবং তাইজুল। তাই নাঈম সহ মিলে স্পিনারদের কাধেই বড় দায়িত্ব। তবে সবার আগে বড় দায়িত্বটা পালন করতে হবে ব্যাটারদের। তার মতে সব বিভাগেই ভাল খেলতে হবে। নাঈম বলেন আমাদের অনেক ক্রিকেটার রয়েছে যারা ম্যাচ জেতাতে পারে। তাই সবাইকে সম্মিলীতভাবে ভাল খেলতে হবে। নিজের ঘরের মাঠ হিসেবে এই মাঠে ভাল খেলার দায়িত্বটা বেশি নাঈমের উপর। আর সেটা তিনি বেশ ভালভাবেই বুঝেন। বুঝেন বলেই হয়তো সুযোগ পেলে নিজের সেরাটা দেওয়ার প্রতিজ্ঞা এই তরুণ স্পিনারের। তবে দিন শেষে মাঠে সব বিভাগে যারা ভাল খেলবে জয়টা তাদেরই বলে মনে করেন চট্টগ্রামের এই স্পিনার।