চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) প্রায় ২৭ হাজার শিক্ষার্থী, ১ হাজার ২শ শিক্ষক এবং ২ হাজার কর্মকর্তা–কর্মচারীর স্বাস্থ্যসেবার জন্য একমাত্র ভরসা চবি মেডিকেল সেন্টার। এর মধ্যে সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস না করলেও কর্মক্ষেত্রে নানাভাবে মেডিকেলের প্রয়োজন পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট ছাড়াও আশপাশের স্থানীয় লোকজনও এই মেডিকেলে জরুরিভাবে স্বাস্থসেবা নিয়ে থাকেন। তবে এটি শিক্ষার্থীদের কাছে ‘নাপা সেন্টার’ নামে পরিচিত। চবির এই মেডিকেল সেন্টার নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ এখানে নাপা আর ওমিপ্রাজল ছাড়া তেমন কোনো ওষুধ মিলে না। এছাড়া পর্যাপ্ত সুযোগ–সুবিধা, সময় মতো অ্যাম্বুলেন্স না পাওয়া, জরুরি অনেক ওষুধের ঘাটতিসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত এই মেডিকেল সেন্টার। এজন্য রাত–বিরাতে অনেক সময় শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ছুটতে হয় শহরের মেডিকেলে। এছাড়া ভালো করে যাচাই–বাছাই না করে চিকিৎসকরা ওষুধ লিখে দেন বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
জানা যায়, গত শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের এক ছাত্রী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে নাঈমাকে চবি মেডিকেলে নেওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক সান্তনু মজুমদার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে রেফার করলে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে এক নম্বর গেট এলাকায় গেলে সিলিন্ডারের অক্সিজেন শেষ হয়ে যায়। চমেকে পৌঁছালে কর্তব্যরত চিকিৎসক নাঈমাকে মৃত ঘোষণা করেন। এতে চিকিৎসকের গাফিলতির অভিযোগ করে শুক্রবার সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীরা চবি মেডিকেলে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। এসময় মেডিকেলের উন্নয়নে এই ঘটনায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন, ওষুধ সরবরাহ ও অ্যাম্বুলেন্স সংখ্যা বৃদ্ধি, সাইক্রিয়াটিস্ট ও ফিজিওথেরাপিস্টের সংখ্যা বৃদ্ধি ১০ দফা দাবি পেশ করেন তারা। একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, চবি মেডিকেল সেন্টারে ডাক্তাররা সময়মতো আসেন না এবং তাদের মধ্যে সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব নেই। নাপা ও ওমিপ্রাজল হচ্ছে সকল রোগের ওষুধ। আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়লেও কোনো মনোচিকিৎসক নেই। ব্লাড টেস্ট, ইসিজি, এক্সরে পরীক্ষা করার কোনো সরঞ্জাম নেই। ডাক্তার–কর্মচারীরা ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেন না। ক্ষেত্র বিশেষে দেখা যায় অপ্রয়োজনীয় কাজেও অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করা হচ্ছে, কিন্তু শিক্ষার্থীদের বিপদে অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যায় না।
জাহিদ হাসান নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমার হয়েছে চুলকানি, আমাকে দিলো নাপা। শুধু তাই নয়, ডাক্তার অন্তত একবারের জন্য আমার সেই রোগাক্রান্ত জায়গাটা দেখেননি। আমার মুখ থেকে শুনে ওষুধ দিয়েছেন। আরেক শিক্ষার্থী জানান, আমার চোখে সমস্যা হয়েছিল। আমাকে কোনো ধরনের পরামর্শ দেওয়া হয়নি। শুধু মেডিকেলের ওই ওষুধগুলো দিয়ে দিলেন। এমন ঘটনা শুধু একটা দুইটা নয়, প্রতিদিনই এমনটা ঘটছে। এছাড়া চলতি বছরের ৩১ মে লোকপ্রশাসন বিভাগের এক শিক্ষার্থীর চোখের নিচে কিছুটা ক্ষত হয়ে ফুলে যায়। চিকিৎসার জন্য তিনি মেডিকেল সেন্টারে যান। ডাক্তারকে সমস্যার কথা বললে তিনি ভালোভাবে না দেখে এলার্জির মলম আর একটা ট্যাবলেট দেন। রাতে ওই মলম লাগানোর পর সকালে উঠে দেখেন ক্ষত দ্বিগুণ জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। পানিও জমে যায়। ভালোভাবে চোখে দেখতে না পেরে তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। চমেকের ডাক্তার বলেছেন, পূর্বের মলম লাগানোর কারণেই আরো সমস্যা হয়েছে। এর আগেও কয়েকবার এরকম হয়েছে জানান ওই শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীরা বলছেন, জ্বর এবং ঠান্ডাজনিত রোগের বাইরে চিকিৎসার জন্য সবাইকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে পাঠানো হয়। প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা দেওয়ার মতো সক্ষমতা নেই চবি মেডিকেল সেন্টারের। শহর থেকে অনেক দূরে হওয়ায় যাতায়াতে অনেক কষ্ট হয়।
চবি মেডিকেলের চিফ মেডিকেল অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মোহাম্মদ আবু তৈয়ব আজাদীকে বলেন, আমাদের অনেক কিছু সংস্কার করতে হবে। আমরা ইতোমধ্যে এসব নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। শিক্ষার্থীরা যেসব দাবি দিয়েছেন তার বেশিরভাগ আমরা আগেই প্রশাসনকে দিয়েছি। আশা করি এগুলো পূরণ হয়ে যাবে। শিক্ষার্থীর মৃত্যু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওই ছাত্রীর পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এখনো আমাদের হাতে আসেনি। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট হাতে আসলে দ্রুত এটা নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।