উচ্চ সুদহার আর জ্বালানি সংকটে ব্যবসা ও শিল্প চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে গেছে মূল্যায়ন করে শীর্ষ ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণে একটি সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি সামাল দেওয়ার নীতি কতটা সফল হবে, সেই প্রশ্ন তুলে ব্যবসায়ীরা বলছেন, একদিকে গ্যাসের সংকট, অন্যদিকে বাড়ছে উৎপাদন খরচ। এই অবস্থায় জীবন হয়ে যাচ্ছে কঠিন। গতকাল শনিবার ঢাকায় ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপ : অর্থনৈতিক নীতিমালা প্রসঙ্গ’ বিষয়ে সংলাপে এসব কথা বলা হয়। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) সম্মেলন কক্ষে এই সংলাপের আয়োজন করে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ–সিজিএস। খবর বিডিনিউজের।
ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ–বিসিআই–এর সভাপতি আনোয়ার–উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, বর্তমানে কেউ স্বস্তিতে নাই। যেখানে আছি, সেখান থেকে পিছিয়ে যাচ্ছি। মূল্যস্ফীতি একটা কারণ। উৎপাদনের খরচ বাড়ছে। গ্যাসের সরবরাহ নাই, উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে ইন্টারেস্ট রেট। প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এই অনিশ্চয়তা থাকলে কেউ ব্যবসায় আসবে না।
এখন অনেকে এক্সিট পলিসি চায় মন্তব্য করে তিনি বলেন, আস্থা বাড়ানো উচিত। সবার সুরক্ষা লাগবে। ব্যবসায়ীরা আগের সরকারের সুবিধাভোগী– এমন প্রচার নাকচ করে পারভেজ বলেন, গণহারে সবাই বেনিফিট নিয়েছে বলা হচ্ছে, আমি তো বেনিফিট নিই নাই। ৯৯ শতাংশই নেয় নাই। সুদের চাপে ব্যবসা কঠিন হয়ে পড়েছে– এই ধারণায় একমত এফবিসিসিআইয়ের সাবেক অপর সভাপতি মীর নাসির হোসেন বলেন, নীতি সুদহার বাড়ানো হচ্ছে। বেনিফিট কোন ব্যবসায়ী পাবে? এগুলোকে অ্যাড্রেস করতে হবে। কোনো ইন্ডাস্ট্রি এত পারসেন্ট ইন্টারেস্ট দিয়ে টিকে থাকতে পারে?
সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির বিরোধিতা করেন এই ব্যবসায়ী নেতা। বলেন, আমি যখন দেখি সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি দিয়ে বাজারে অর্থ সরবরাহ কমিয়ে মূল্যস্ফীতি কমানো হবে, তখন অবাক হই। এটি একটি টুল। কিন্তু আমরা শুনি কারওয়ান বাজারে এক কোটি টাকার চাঁদা ওঠে। যাত্রাবাড়ী ও গাবতলীতেও তাই। এসব বিবেচনায় না নিয়ে মূল্যস্ফীতি কমবে না।
বর্ধিত দাম দিয়েও বিদ্যুৎ ও গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না জানিয়ে মীর নাসির বলেন, আমি বলি ৬–৯ সুদের হার যৌক্তিক ছিল না। কিন্তু সকল খাতের সহনীয় ক্ষমতা এক না। এখন এত চাপ নিয়ে ব্যবসা–বাণিজ্য চলবে না। বর্তমান বিনিয়োগই চালানো যাচ্ছে না জানিয়ে তিনি প্রশ্ন রাখেন, নতুন বিনিয়োগ তাহলে কীভাবে করবে?
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু প্রশ্ন রেখে বলেন, বছরের পর বছর মূল্যস্ফীতি মজুরির উপর থাকলে সঞ্চয় হবে কীভাবে? সঞ্চয় কমে গেলে বিনিয়োগ আসবে কোত্থেকে? সঞ্চয় বাড়াতে হবে এবং সামাজিক মূলধনের ঘাটতি কমাতে হবে। তাহলে বিনিয়োগ এমনিই আসবে। বিনিয়োগ হলে কর্মসংস্থান বাড়বে উল্লেখ করে তিনি বলেন, চাকরি না বাড়াতে পারলে বৈষম্য বাড়তে থাকবে। চুরি, মারামারি বেড়ে যাবে। গ্যাং সংস্কৃতি বেড়ে যাবে। রাজনীতি যতক্ষণ ঠিক না হবে ততক্ষণ কিছুই হবে না বলেও মত দেন মিন্টু।
অর্থনীতি বিষয়ক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সভাপতি দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, রাজনৈতিকভাবে কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা দলকে যদি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা হয় তাহলে সঞ্চয়, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার ক্ষমতাগুলোকেও এক ধরনের নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়। দেবপ্রিয় মনে করেন অর্থনীতির পরিস্থিতিই নির্ধারণ করবে কত দ্রুত বা দেরিতে নির্বাচন করা যাবে। তিনি বলেন, কেউ যদি মনে করেন আমরা শুধু প্রাতিষ্ঠানিক বা নির্বাচনি সংস্কারের কথা বলব, অর্থনৈতিক বিষয়গুলো তার মতে চলবে, তাহলে আমরা ভুল বুঝতে পারছি। সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গীকার গুরুত্বপূর্ণ বলেও মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।
আয়োজক সংগঠন সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) এর চেয়ার মুনিরা খানের সভাপতিত্বে এবং নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় সংলাপে অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর, সায়মা হক বিদিশা; আবু আহমেদ, শাহিদুল ইসলাম জাহিদ প্রমুখ।