নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে বেড়েছে শাক–সবজির দামও। দেশব্যাপী বিভিন্ন ধরনের শাক–সবজি থেকে শুরু করে কাঁচাবাজারে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। বিগত দুই–তিনদিন ধরে দাম কিছুটা কমলেও এখনো সহনীয় পর্যায়ে নেই। এরমধ্যে রয়েছে ভেজাল পণ্য; নানান কীটনাশক দিয়ে শাক–সবজি তাজাকরণের ফলে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকিও।
তবে এক্ষেত্রে কিছুটা ব্যতিক্রম পাহাড়ের হাটবাজারগুলো। পাহাড়ে উৎপাদিত পণ্য বাজারে আনেন পাহাড়িরা। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত এসব সবজি ভেজালমুক্ত এবং দাম তুলনামূলক কম। ফলে স্বাস্থ্যকর এসব সবজি হাতের নাগালে থাকায় স্বস্তি রয়েছে মানুষের।
রাঙামাটি শহরবাসীর কাছে স্বস্তির পণ্য পাহাড়ি ‘তোনপাট’ বা পাহাড় ও জুমে উৎপাদিত পাহাড়ি পণ্য। সমতলের জেলা থেকে আনা কাঁচা শাকসবজি থেকে কম দামে মিলছে এসব কাঁচা তরি–তরকারি। জানা যায়, স্থানীয় বাজারে হলুদ ফুল ১০ টাকা, কলার থোর ১০ টাকা, জুম্ম আলু ৫০ টাকা, নারিকেল কচু ৫০ টাকা, বাঁশ কোড়ল প্রতি থলি ৫০ টাকা, জুম্ম বেগুন ৬০ টাকা, কচুশাক ২০ টাকা, পুঁই শাক, কাঁচা কলা, লাউশাক, জুম কুমড়াসহ বিভিন্ন শাকসবজি কম দামে মিলছে রাঙামাটির বাজারে।
জেলা শহরের বনরূপা বাজার, দেবাশীষ নগর, কল্যাণপুর, আসামবস্তি, রাঙাপানি, তবলছড়িসহ বিভিন্ন হাটবাজারে ভাসমানভাবে পাহাড়ে উৎপাদিত এসব শাক–সবজি বিক্রি করে থাকেন পাহাড়িরা। এছাড়া তিন পার্বত্য জেলার প্রায় সব হাটবাজারেই পাওয়া যায় পাহাড়ি শাক–সবজি ছাড়া নানা ধরনের ফলও।
ক্রেতারা বলছেন, ঊর্ধ্বগতির বাজারে পাহাড়ি শাকসবজিতে এখন ভরসা করছেন নিম্ন আয়ের মানুষ ও শহরবাসী। দাম কম ও নিরাপদ পণ্য হওয়ায় চাহিদাও বাড়ছে। শহরের বাইরে থেকে আনা পণ্যগুলোতে বিভিন্ন রাসায়নিক ও কীটনাশক দেয়া হলেও জুমে উৎপাদিত সবজি ও তরি–তরকারি অনেকটা নিরাপদ। পাহাড়ের জুমে উৎপাদিত শাক–সবজিতে কীটনাশক বিষ ও রাসায়নিক মেশানো হয় না।
কৃষি কর্মকর্তা দেবাশীষ দেওয়ান বলেন, রাঙামাটি শহরবাসীর কাছে পাহাড়িদের জুমে উৎপাদিত শাকসবজির বেশ চাহিদা রয়েছে। এছাড়া বন–বনানী থেকে সংগ্রহ করা তরি–তরকারির মধ্যে বাঁশ কোড়লসহ বিভিন্ন সবজি আমরা কিনে খাই। সবগুলো পণ্য বা সবজি একদম সস্তা তেমন নয়। পাহাড়িরাও এখন চড়া দামে বিক্রি করেন। তবে রাঙামাটির বাইরে থেকে আনা শাক–সবজির চেয়ে পাহাড়িদের পণ্যগুলো বেশ নিরাপদ।
জেলা শহরের তবলছড়ি এলাকার বাসিন্দা অর্ক চক্রবর্তী বলেন, রাঙামাটিতে মেহমান আসলে মাছ–মাংসের একঘেঁয়ে মেনু নিয়ে বিপদে পড়তে হয় না। বাজারে আদা ফুল, হলুদ ফুল, কলার মোচা, জারবো কচু, থানকুনি পাতা, মাশরুম, বাঁশ কোড়ল, আদামের কুমড়া, আদামের চালসহ অনেক কিছু পাওয়া যায়। যা সমতলের অনেকের কাছে সহজলভ্য নয়। অনেকে রাঙামাটি থেকে এসব কুরিয়ারে পাঠানোর আবদারও পান।
স্থানীয় ক্রেতা শান্তি প্রিয় চাকমা বলেন, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের যে দাম! বিশেষ করে সবজির দামও এখন ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। মাছ–মাংস, ডিম, মরিচ সব জিনিসের দাম এখন বাড়তি। তবে পাহাড়িদের তরি–তরকারিগুলোর দাম কিছুটা স্বস্তিদায়ক।
জেলা শহরের দেবাশীষনগর এলাকার বাসিন্দা রনি তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ দিশেহারা। নিম্ন আয়ের মানুষের কঠিন অবস্থা। সরকার দাম কমাতে না পারলে আমাদের অবস্থা আরও খারাপ হবে।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও বাজার মনিটরিং সেলের কর্মকর্তা নাবিল নওরোজ বৈশাখ বলেন, ব্যবসায়ীরা যাতে বেশি দাম নিতে না পারে সে জন্য মূল্য তালিকা প্রদর্শনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কৃষি বিপণন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে আমরা কাজ করছি। সারাদেশে নিত্যপণ্যের দাম একটু বেশি। সাধ্যমতো বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে।