কাগজে কলমে আছে, বাস্তবে নেই নগরের দুই কলেজ

শতভাগ ফেল তিন প্রতিষ্ঠানকে বোর্ডের চিঠি

ইমাম ইমু | শনিবার , ২৬ অক্টোবর, ২০২৪ at ৫:১৫ পূর্বাহ্ণ

চলতি বছরের উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষায় চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ৫টি কলেজ থেকে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের সবাই ফেল করেছেন। ওই পাঁচ কলেজের মধ্যে দুইটি কলেজ চট্টগ্রাম নগরের। এই দুই কলেজ থেকে মাত্র চারজন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেন, যাদের সবাই ফেল করেন। কলেজ দুইটি হলো হালিশহর সেন্ট্রাল কলেজ ও পাঁচলাইশের চট্টগ্রাম জিলা কলেজ। কাগজে কলমে থাকলেও বাস্তবে কলেজ দুইটির কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। বন্ধ হয়ে গেছে ভর্তি কার্যক্রম, এমনকি হয় না শ্রেণি কার্যক্রমও।

জানা যায়, শিক্ষক সংকট থাকায় একটি কলেজে গত বছর এবং আরেকটি কলেজে দুই বছর আগ থেকে ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে শিক্ষা বোর্ড। যার কারণে নতুন করে শিক্ষার্থী ভর্তি না হলেও পূর্বে ফেল করা শিক্ষার্থীরা অংশ নিচ্ছেন পরীক্ষায় এবং আবারও তারা ফেল করছেন।

বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীন ২৮২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। এর মধ্যে শতভাগ পাস করেছে মাত্র ১৩টি কলেজ। আর পাঁচটি কলেজ থেকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া একজনও পাস করতে পারেননি। এবার পাসের হার শূন্য পাঁচ কলেজের মধ্যে তিনটি উপজেলার আর দুটি মহানগরের। উপজেলার কলেজগুলো হলো, হাটহাজারীর রহিমপুর আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ, রাউজানের মোহাম্মদপুর স্কুল এন্ড কলেজ ও চকরিয়া কর্মাস কলেজ। এই তিন প্রতিষ্ঠানে শতভাগ ফেল করায় ব্যাখ্যা চেয়েছে শিক্ষা বোর্ড। গত বৃহস্পতিবার এসব প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর জাহেদুল হক। আর নগরের মধ্যে হালিশহর সেন্ট্রাল কলেজ থেকে একজন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ফেল করেন। আরেকটি পাঁচলাইশের চট্টগ্রাম জিলা কলেজ থেকে তিনজন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সবাই ফেল করেছেন। প্রতিষ্ঠান দুটির প্রধান শিক্ষকের মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করে সংযোগ পাওয়া যায়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কাগজপত্রে চট্টগ্রাম জিলা কলেজ নগরের পাঁচলাইশ থানাধীন কাতালগঞ্জের মির্জারপুলের দক্ষিণপাশে। তবে এই ঠিকানায় গিয়ে কলেজটির অবস্থান শনাক্ত করা যায়নি। স্থানীয়রাও এ নামে কোনো কলেজ চিনেন না বলে জানান। কেউ কেউ বলছেন, এ ঠিকানায় হয়তো কখনো ছিল, এখন নেই। ঠিকানা অনুযায়ী কলেজের অস্তিত্ব না পাওয়া গেলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে কলেজের নামে একটি পেজ পাওয়া গেছে। সেই পেজে ২০২২ সালের কয়েকটি পোস্ট পাওয়া যায়। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি শেয়ার করা একটি পোস্ট রয়েছে। পেজটিতে কলেজের কয়েকটি নম্বর রয়েছে। সেই নম্বরগুলোতে কল দিলে একটিতে সাড়া পাওয়া যায়নি। আরেকটিতে সংযোগ হয়নি। একইভাবে নগরের বন্দর থানাধীন হালিশহর সেন্ট্রাল কলেজেরও কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই প্রতিষ্ঠানেরও ভর্তি কার্যক্রম ও পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে বোর্ড কর্তৃপক্ষ। এই প্রতিষ্ঠানেরও একটি ফেসবুক পেজ পাওয়া গেছে। পেজটিতে সর্বশেষ ২০২০ সালের আগস্টের ৯ তারিখে একটি পোস্ট রয়েছে। এরপর আর কোনো পোস্ট পাওয়া যায়নি ওই পেজে।

জানা গেছে, প্রতিষ্ঠার পর ২০১৮ সাল থেকে গত সাত বছরে চট্টগ্রাম জিলা কলেজ থেকে মোট ১০৮ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছেন মাত্র ৬০ জন। পরবর্তীতে শিক্ষকশিক্ষার্থী সংকটসহ নানা কারণে গত বছরের ৬ জানুয়ারি থেকে চট্টগ্রাম জিলা কলেজের শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ। যে কারণে ২০২৩ সালে অনিয়মিত হিসেবে সেই ৮ জন পরীক্ষায় পুনরায় অংশ নেন। শেষে ৪ জন পাস করতে পারলেও বাকি ৪ জন আবারও খারাপ করেন। সর্বশেষ চলতি বছর ৩ জন আবারও পরীক্ষায় অংশ নেন এবং সবাই ফেল করেন। আর এতে করে শূন্য পাসের তালিকায় চলে আসে প্রতিষ্ঠানটি। অপরদিকে ২০১৪ সাল থেকে গত দশ বছরে এই প্রতিষ্ঠান থেকে মোট ১৪০ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেন মাত্র ৮১ জন। সর্বশেষ চলতি বছরের এইচএসসিতে মাত্র একজন অংশ নিয়ে তিনিও অকৃতকার্য হন।

এই বিষয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর মো. জাহেদুল হক আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রাম জিলা কলেজ আর হালিশহর সেন্ট্রাল কলেজে শিক্ষক সংকটসহ নানা সমস্যা থাকায় শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। যার কারণে তারা নতুন কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারেনি। যেহেতু রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ চার বছর থাকে তাই যারা আগে অকৃতকার্য হয়েছে তারাই বারবার পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। কারণ তারা চাইলেও অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না। অনিয়মিত একজনও যদি পরীক্ষা দিতে চায় সেটা না করার সুযোগ আমাদের নাই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকুতুবদিয়ায় ঘরে ঢুকে গলা কেটে মা-মেয়েকে হত্যা
পরবর্তী নিবন্ধশিশুদের আনন্দকে ধারণ করে সাহিত্য রচনা করতে হবে