আবার আগের চেহারায় আউটার স্টেডিয়াম

জলে যেতে বসেছে কোটি টাকার সংস্কার প্রকল্প

ক্রীড়া প্রতিবেদক | শনিবার , ২৬ অক্টোবর, ২০২৪ at ৫:৪৪ পূর্বাহ্ণ

নগরীর আউটার স্টেডিয়াম ছিল এক সময়ে খেলোয়াড় তৈরির আঁতুড় ঘর। কিন্তু গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে সে আউটার স্টেডিয়াম যেন হারিয়ে ফেলেছিল নিজস্ব সত্ত্বা। অনেকটা পতিত জমির মত পরিণত হয়েছিল। যদিও স্টেডিয়ামের গ্যালারি দ্বিতলকরণ, ফ্লাড লাইটের টাওয়ার স্থাপন এবং সবশেষ সুইমিং পুল নির্মাণের কারণে আউটার স্টেডিয়ামের পরিধি কমে গেছে অনেকটাই। সব মিলিয়ে অনেকটা অর্ধেকে নেমে আসে আউটার স্টেডিয়ামের আয়তন। গত দুই দশকে নানা পরিকল্পনা নেওয়া হলেও আউটার স্টেডিয়াম সংস্কারের সেই পরিকল্পনা আলোর মুখ দেখেনি। তবে গত বছর শুরু করা হয় আউটার স্টেডিয়াম সংস্কার প্রকল্প। প্রায় কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ে এই প্রকল্পের মূল কাজ (মাঠ সংস্কার এবং ঘাস লাগানো) শেষ হয়ে গিয়েছিল। চারপাশের নিরপত্তা প্রাচীরের কাজও শেষ হয়ে গিয়েছিল। বাকি ছিল গ্যালারি, ওয়াকওয়ে এবং গার্ডেনিংয়ের কাজ। কিন্তু গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিন পূর্ব পাশে সীমানা প্রাচীর ভেঙে বিপুল সংখ্যক মানুষ ঢুকে পড়ে আউটার স্টেডিয়ামে। এরপর থেকে এই মাঠটি আবার উন্মুক্ত হয়ে যায়। ফলে সারা দিনই খেলতে থাকে ছেলেরা। শুধু খেলাতেই থেমে নেই। এই মাঠে আয়োজন করা হচ্ছে এখন নানা টুর্নামেন্ট। আর সে সব টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে গিয়ে মাঠের মাঝখানে নির্মাণ করা হচ্ছে প্যান্ডেল এবং মঞ্চ। ফলে আবারো খানা খন্দকে পরিণত হচ্ছে মাঠটি। এখনতো সেই সকাল থেকে শুরু করে মধ্য রাত পর্যন্ত চলে খেলাধুলা। আবার অনেকে মাঠের চারপাশে বসে জমিয়ে দেয় আড্ডা। ফলে পুরো মাঠ জুড়ে কাগজ, ময়লা, আবর্জনায় ভরে গেছে। উঠে গেছে দীর্ঘ পরিচর্যার মাধ্যমে গজিয়ে তোলা ঘাস। এতে জলে যেতে বসেছে কোটি টাকার আউটার স্টেডিয়াম সংস্কার প্রকল্প।

এই আউটার স্টেডিয়াম সংস্কার কাজটি দুইভাগে বিভক্ত ছিল। একভাগে ছিল মাঠের কাজ। আর অন্যভাগে ছিল ফেন্সিং, ওয়াকওয়ে, গ্যালারিসহ অন্যান্য কাজ। একেবারে আন্তর্জাতিক মানের করে মাঠের কাজটা সম্পন্ন করেছিল দায়িত্ব পাওয়া প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন তাদের কাজ শেষ। প্রায় ৬০ লক্ষ টাকার মাঠ সংস্কার কাজ শেষ হলেও এখনো অর্ধেক টাকাই পায়নি প্রতিষ্ঠানটি। কবে নাগাদ বাকি অর্থ পাওয়া যাবে তা নিয়েও সংশয়ে রয়েছেন তারা। অপরদিকে অবশিষ্ট কাজের দায়িত্ব পাওয়া প্রতিষ্ঠানটি বেশিরভাগ কাজই করতে পারেনি বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

মাঠের কাজে বিশেষজ্ঞ এমন একাধিক লোক জানিয়েছেন এখনো এই মাঠটাকে সুন্দর করে গড়ে তোলা সম্ভব। যদি মাঠে খেলাটা কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সামনে শুষ্ক মৌসুম আসার আগে হয়তো কিছুটা বৃষ্টি পাওয়া যেতেও পারে। সে বৃষ্টির পানিকে যদি কাজে লাগানো যায় আর বৃষ্টি না হলেও যদি সঠিকভাবে পানি দিয়ে পরিচর্যা করা যায় তাহলে মাঠ ঠিক থাকবে। কিন্তু মাঠে যদি নির্বিচারে প্যান্ডেল করা হয়, সকাল থেকে রাত অবধি খেলা হয়, ময়লা আবর্জনা ফেলে নোংরা করা হয় তাহলে আগামী বর্ষা মৌসুমে আউটার স্টেডিয়াম আরো খারাপ হয়ে যাবে। কারণ বর্ষা মৌসুমেও খেলাধুলা বন্ধ থাকে না ছেলেদের।

এদিকে গত ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর সারা দেশের ক্রীড়া সংস্থা সমুহের মত চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাহী কমিটিও বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও এখনো এডহক কমিটি গঠিত হয়নি। তাই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে আউটার স্টেডিয়াম রক্ষার দায়িত্বটা পালন করবে কে ?

তবে যদি আউটার স্টেডিয়াম রক্ষার কিছু করার থাকে সেটা কেবল জেলা প্রশাসকের হাতে। কারণ তিনি জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি। তাই বিশেষজ্ঞদের অভিমত যেহেতু ছেলেরা খেলা শুরু করেছে তাই সেটা বন্ধ না করে যদি নিয়ন্ত্রণ করা যায় তাহলে হয়তো মাঠটাকে সুন্দর রাখা সম্ভব। এই যাত্রায় যদি আউটার স্টেডিয়াম সংস্কার ব্যাহত হয় তাহলে আর কখনো এই প্রকল্প আলো মুখ দেখবে কিনা তা নিয়েও সন্দিহান ক্রীড়াঙ্গন সংশ্লিষ্ট মানুষরা। তাই তারা আউটার স্টেডিয়াম রক্ষায় জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহেলে পড়েছে বন্যপ্রাণী সুরক্ষার সাইড ওয়াল
পরবর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা