কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেনের লোকোমাস্টার বরখাস্ত

ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যু । অভয়ারণ্যে ট্রেনের গতি ২০ কিমি রাখার নির্দেশ

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২৫ অক্টোবর, ২০২৪ at ৬:০৪ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজার রেলপথে চুনতি অভয়ারণ্য এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যুর ঘটনায় কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেনের লোকোমাস্টার জামাল উদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ গত বুধবার ওই আদেশ দিয়েছে। সেইসঙ্গে অভয়ারণ্য ও জাতীয় উদ্যান এলাকায় ট্রেনের গতি ২০ কিলোমিটারে সীমাবদ্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে।

চট্টগ্রামের লোহাগড়ার সংরক্ষিত চুনতি অভয়ারণ্য রেঞ্জ সংলগ্ন কক্সবাজার রেললাইনে গত ১৩ অক্টোবর রাতে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামগামী স্পেশাল ট্রেনের ধাক্কায় আহত হয় আনুমানিক ১০ বছর বয়সী একটি মাদি হাতি। দলবেঁধে বিচরণের সময় কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামগামী ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কা খেলে সেটির মেরুদণ্ড ভেঙে যায়। পেছনের ডান পা পুরো ভেঙে হাড় বের হয়ে যায়। তাছাড়া মাথায় আঘাত লেগে কান ও শুঁড়ে রক্তপাতও হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ডুলাহাজরা সাফারি পার্কে নেওয়া হলেও হাতিটিকে আর বাঁচানো যায়নি। ১৫ অক্টোবর বিকেলে সেটি মারা যায়।

এই ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, কক্সবাজার রেল লাইনে ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যুর ঘটনায় কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেনের লোকোমাস্টারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ওই ঘটনায় রেলওয়ে বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রেলওয়ে বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তাকে (চট্টগ্রাম) আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন বিভাগীয় প্রকৌশলী(চট্টগ্রাম) এবং বিভাগীয় যন্ত্র প্রকৌশলী লোকো (চট্টগ্রাম)। দুর্ঘটনার বিষয়ে তদন্ত করে আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

অভয়ারণ্যে ট্রেনের গতি ২০ কিমি রাখার নির্দেশ : বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ও জাতীয় উদ্যান এলাকায় ট্রেনের গতি ২০ কিলোমিটারে সীমাবদ্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। গতকাল বৃহস্পতিবার রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ মনির হোসেনের সই করা একটি আদেশে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, দোহাজারীকক্সবাজার রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় হাতিসহ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে কতিপয় ব্যবস্থা গ্রহণের পরও গত ১৩ অক্টোবর অনভিপ্রেত দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অভয়ারণ্য ও জাতীয় উদ্যান এলাকায় বন্যপ্রাণী সুরক্ষায় সব ট্রেন ২০ কিলোমিটার গতিতে রাখার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। অভয়ারণ্যে বন্যপ্রাণী মৃত্যুর ঘটনা তদন্তের জন্য বিভাগীয় কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

এদিকে চট্টগ্রামের কোরিয়ান ইপিজেড এবং আশপাশের এলাকায় হাতির সুরক্ষা ও মানুষহাতি দ্বন্দ্ব নিরসনের বিষয়ে সুপারিশমালা প্রদানে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছে। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসককে আহ্বায়ক করে গঠন করা কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. মোস্তফা ফিরোজ ও মনিরুল এইচ খান, আইইউসিএনের প্রতিনিধি, কোরিয়ান ইপিজেডের দুইজন প্রতিনিধি, ঢাকা বন ভবনের ইউএস ফরেস্ট সার্ভিসের কান্ট্রি কোঅর্ডিনেটর মোহাম্মদ আব্দুল মোতালেব, সেভ দ্য নেচার অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আ ন ম মোয়াজ্জেম হোসেন, অভয়ারণ্য বাংলাদেশ এনিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা রুবাইয়া আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুনতাসির আকাশ ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা। এ কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে রয়েছেন চট্টগ্রামের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহট্টগোলে সিদ্ধান্ত ছাড়া জাহাজ মালিকদের বৈঠক শেষ
পরবর্তী নিবন্ধগণমাধ্যমকে হুমকি-ঘেরাও হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা : তথ্য মন্ত্রণালয়