বিমানের শহর

সাফ্‌ফাত আহম্মদ খান | বুধবার , ২৩ অক্টোবর, ২০২৪ at ৯:৪২ পূর্বাহ্ণ

কোনো শহরের বাড়িগুলো সম্পর্কে ভাবলে আমাদের ধারণায় আসে একটি বাড়ি, সাথে একটি গাড়ির গ্যারেজ এবং কিছু বাগানের জন্য খোলা জায়গা। কিন্তু তোমরা কি ভাবতে পারো একটি শহরের বেশির ভাগ বাড়িতে গাড়ির পাশাপাশি বিমান পার্ক করে রাখা আছে যেগুলো সেই শহরের বাসিন্দারা অফিসে বা বিভিন্ন কাজে যাওয়ার সময় ব্যবহার করে? কি, ভাবতে খুব অবাক লাগছে তাই না? ভাবছো এটি গল্প কিন্তু আসলে এটি গল্প নয়, একদম সত্যি ঘটনা।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত এই শহরের নাম ক্যামেরন এয়ার পার্ক। তবে এটিকে শহর বললে ভুল হবে। এটি মূলত একটি গ্রাম। এই গ্রামের প্রতিটি বাড়ির নির্দিষ্ট একটি স্থানে একটি করে বিমান দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় এবং গ্যারেজের জায়গায় দেখতে পাবে হ্যাঙ্গার (বিমান রাখার গ্যারেজকে হ্যাঙ্গার বলা হয়)

সবচেয়ে বড় কথা এই গ্রামের বাসিন্দারা তাদের বিমান ব্যবহার করেন শুধু নিজেদের দৈনন্দিন কাজ সারতে। যেমন: অফিসে যাওয়া, একটু দূরে বাজার করতে যাওয়া ইত্যাদি। সপ্তাহ শেষে ছুটি কাটাতে কাছাকাছি কোথাও যেতে হলেও বিমানেই উড়াল দেন তারা।

এই গ্রামে এই ব্যবস্থার কারণ হলো এই গ্রামের বেশির ভাগ ব্যক্তিই পাইলট। সরকারি নথিতে এলাকাটিকে শহরের পরিবর্তে ফ্লাই ইন রেসিডেন্সিয়াল কমিউনিটি উল্লেখ করা হয়েছে। এই ধরনের কমিউনিটি মূলত বিমান ওঠানামা করার জন্য গড়ে ওঠে।

এই ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িয়ে আছে একটি বড় ইতিহাসও। ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকার বহু বিমান অকেজো হয়ে পড়ে এবং একইসঙ্গে বাড়তে থাকে অবসরপ্রাপ্ত বিমানচালকের সংখ্যা। ১৯৪৬ সালে বিমানচালকের সংখ্যা ৩৪ হাজার থেকে বেড়ে দাঁড়ায় চার লাখ। যুদ্ধে অংশ নেওয়া সেসব অবসরপ্রাপ্ত বিমানচালকের আরামের অবসর দিতেই ‘ফ্লাই ইন রেসিডেন্সিয়াল কমিউনিটি’ গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। চেনা ও পরিচিত পরিবেশে থাকতে বিমানচালকদের ভালো লাগবে এ ধারণা থেকেই ১৯৬৩ সালে তৈরি হয় ক্যামেরন পার্ক। একসময় এর নাম ছিল ক্যামেরন পার্ক এয়ারপোর্ট। পরবর্তী সময়ে সেই নাম বদলে রাখা হয় ক্যামেরন পার্ক এয়ারপার্ক। বিশ্বে এমন ফ্লাইইনকমিউনিটি রয়েছে ৬৪০টি। এগুলোর মধ্যে আমেরিকাতেই রয়েছে ৬১০টি। তবে ক্যামেরন পার্কই হচ্ছে সবচেয়ে নিখুঁত এবং সুন্দর।

এটি এমন একটি গ্রাম যেখানে কোনো অলিগলি ছোট বা বড় রাস্তা বলে কিছু নেই। একটি মাত্র রাস্তা যার পুরোটাই রানওয়ে। রাস্তার নাম ‘বোয়িং রোড’। শহরটিকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। রানওয়ে এসে যে রাস্তায় মিশেছে সেটি ১০০ ফুট চওড়া। এখানে বিমান ওঠানামা করতে পারে অনায়াসে। শুধু তাই নয়, ব্যস্ত রাস্তায় চলন্ত গাড়িটিকে পাশ কাটিয়ে বিমানটি এগিয়েও যেতে পারে বিনা বাধায়। এখানে রয়েছে মাত্র ১২৪টি বাড়ি। নাগরিকদের জন্য অন্যান্য সকল সুযোগসুবিধাও আছে সেখানে।

এই জায়গাটি পুরোপুরি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন। অনুমতি ছাড়া এখানে বাইরের কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। সেখানকার কেউ বাইরের কাউকে আমন্ত্রণ জানালে তবেই সেখানে প্রবেশ করা যাবে। বছরে একদিন ক্যামেরন পার্কে বিমানের প্রদর্শনী হয়। রানওয়ে বরাবর সারি দিয়ে দাঁড়ানো থাকে বিভিন্ন মডেলের বিমান। সেই দৃশ্য হয় দেখার মতো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআমার তুলি
পরবর্তী নিবন্ধহালিশহর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে পুরস্কার বিতরণ