ব্যাংক খাতের ওপর মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে

| বুধবার , ২৩ অক্টোবর, ২০২৪ at ৯:০৬ পূর্বাহ্ণ

সংকটে থাকা দেশের ব্যাংক খাতে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। সরকার পতনের পর ব্যাংকেব্যাংকে আন্দোলনবিক্ষোভ গোলাগুলিতে গড়িয়েছে। ব্যাংকের মালিকানা পরিবর্তনসহ বিভিন্ন দাবিতে চলমান এই আন্দোলন নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন আমানতকারীরা। অনেক সঞ্চয়কারী শঙ্কায় ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ঝুঁকিতে এটিএম বুথে টাকা না পাওয়া,কয়েকটি ব্যাংকে নগদ টাকা উত্তোলনে সীমাবদ্ধতাসহ নানা কারণে বিপাকে পড়েছে আমানতকারীরা। পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি না হলে সংকট বাড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থায় সুসংবাদ দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি পত্রিকান্তরে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘কোনো ব্যাংক বন্ধ হবে না আমানত সুরক্ষিত থাকবে’। তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক সংস্কারের বেশ কিছু ভিন্ন ভিন্ন খাত রয়েছে। তার একটি হলো ব্যাংক খাতের সংস্কার। এ খাতে প্রথমে আমরা দেশের রাষ্ট্রীয় এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পদ্ধতির উন্নতি করতে চাই। ব্যাংকগুলোর ঋণখেলাপি অনেক বেড়ে গেছে। খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে আমরা কাজ করতে চাই। যে বড় বড় পরিমাণ ঋণ দেওয়া হয়েছে সেগুলো কোথায় এবং কীভাবে দেওয়া হয়েছে, তা যাচাই করতে চাই। ব্যাংকগুলো নিজস্ব পরিচালনা কাঠামোর দুর্বলতা এবং সমস্যাগুলো সমাধান করতে চাই। ব্যাংক খাতের ওপর মানুষের আস্থা ফেরত আনতে চাই।

. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমানতকারীরা ভরসা পাচ্ছেন না। ব্যাংকগুলো থেকে অর্থ লুটপাট করে খালি করে দেওয়ায় অনেক সময় আমানতকারীরা টাকা তুলতে পারছেন না। অনেকে এলসি খুলতে পারছেন না। বিশেষ করে বড় বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান যাদের ব্যাংকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, তারা ছাড়া অন্যরা এলসি খুলতে সমস্যায় পড়ছেন। এ ছাড়া নানাবিধ সমস্যা রয়েছে। আমরা এসব সমস্যা অ্যাড্রেস করতে চাই এবং ব্যাংক খাতের সুশাসন ফিরিয়ে আনতে চাই।

দ্বিতীয়ত, আমরা দেশ থেকে অর্থ পাচার রোধ করতে চাই। অনেকে ওভার ইনভয়েসিং ও আন্ডার ইনভয়েসিং করে টাকা পাচার করছে। অনেকে আবার হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার করছে। দেশের অর্থ বিদেশে পাচার করে সেখানে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, অর্থ পাচারের কাজে যারা জড়িত তাদের দেশের ব্যাংকগুলোতে বড় বড় ঋণ রয়েছে। অর্থাৎ ব্যাংক থেকে অর্থ ঋণ নিয়ে সেই অর্থ তারা বিদেশে পাচার করছে। এতে একে তো দেশের সম্পদ বিদেশে চলে যাচ্ছে, তার ওপর ব্যাংকগুলোতে আমানতকারীরা যে টাকা রেখেছিলেন সেখানে অনিরাপত্তা তৈরি হচ্ছে। তাই টাকা পাচার রোধ করা আমাদের অন্যতম অগ্রাধিকার হবে।

তিনি বলেন, ‘ব্যাংকিং সেক্টরের সংস্কারের পাশাপাশি আরেকটি জায়গা আমি উল্লেখ করতে চাই যেখানে আমরা গুরুত্ব দিতে বাধ্য। আর সেটা হলো দেশের পুঁজিবাজার। এজন্য আমরা দেশের সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা করছি। পুঁজিবাজারের মনিটরিং ও জবাবদিহিতা আরও বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করছি। পুঁজিবাজারের ইনসাইডার ট্রেডিং এবং ম্যানুপুলেশন নিয়ন্ত্রণে একটি কমিটি করা হয়েছে, যারা এ বিষয়গুলো দেখবে। আমরা চেষ্টা করছি যেন পুঁজিবাজারে ফলপ্রসূ বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়।’

নিঃসন্দেহে বলা যায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের এ বক্তব্যে আমানতকারীরা আশ্বস্ত হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে অর্থনীতি বিশ্লেষক মামুন রশীদের একটি বক্তব্যের প্রসঙ্গ টানা যেতে পারে। তিনি তাঁর এক লেখায় বলেছেন, স্বীকার্য, অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে ব্যাংক খাত সংস্কারে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। তবে সরকারকে শুধু সংস্কারে সীমাবদ্ধ থাকলেই চলবে না; ব্যাংকের গ্রাহক বা আমানতদারের আস্থা অটুট রাখতেও কাজ করতে হবে। ব্যাংক খাতের অস্থিরতার প্রভাব আমানত প্রবাহেই স্পষ্ট; চলতি ২০২৪২৫ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে আমানত না বেড়ে উল্টো প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা কমেছে। ব্যাংক খাতে এভাবে আমানত কমে যাওয়ার নজির নিকট অতীতে দেখা যায়নি। গ্রাহক বা আমানতকারী আস্থা হারিয়ে ফেললে ব্যাংক খাত বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে। কেননা, দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকের লাখ লাখ কোটি টাকার ঋণদান তহবিলের প্রধান উৎস আমানতকারীর অর্থ। আর আমানতকারীরা তাদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষার জন্যই অর্থ ব্যাংকে গচ্ছিত রাখেন। আস্থার সংকট না কাটলে ক্ষুদ্র কিন্তু মোট আমানতে সিংহভাগ অবদান রাখা আমানতকারীকে আকৃষ্ট করা যাবে না। এজন্য ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফেরানোর পাশাপাশি সুশাসন নিশ্চিতসহ নিয়ন্ত্রণ, পরিবীক্ষণ আরও সুদৃঢ় করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে