বংশ পরম্পরাই জন্মগত পেশাদার পাটনিজীবী (সাম্পান মাঝি) নীতিমালা ও হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) সদরঘাট, অভয়মিত্রঘাট ও বাংলাবাজার ঘাটে বহিরাগতদের খাস আদায়ের দায়িত্ব দেওয়ার প্রতিবাদে কর্ণফুলী নদীর ৫ ঘাটে অনির্দিষ্টকালের জন্য বৈঠা বর্জন ও অবস্থান ধর্মঘট পালন করছে ২৩টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশন। গতকাল সোমবার সকাল ৬টা থেকে কর্ণফুলী নদীর এসব ঘাটে সাম্পান চলাচল বন্ধ রেখে প্রতিবাদ করছেন ১২ শতাধিক সাম্পান মাঝি। এদিকে দিনব্যাপী কর্ণফুলীর ব্যস্ত ঘাট বন্ধ থাকলেও সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে মাঝিদের সাথে কোন ধরণের যোগাযোগ করা হয়নি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে গতকাল সন্ধ্যায় মাঝিরা আজ মঙ্গলবারও ধর্মঘট অব্যাহত রাখার কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
সকাল থেকে কর্ণফুলীর ব্যস্তঘাট বন্ধ থাকায় উভয় তীরের হাজার হাজার যাত্রী চরম বিপাকে পড়েন। সাম্পান চলাচল বন্ধ থাকায় বেকার বসে থাকেন সহস্রাধিক সাম্পান মাঝি। নগরীর অন্যতম ব্যস্ত চরপাথরঘাটা অভয়মিত্রঘাট সাম্পান ঘাট, ইছানগর বাংলাবাজার ঘাট, ইছানগর সদরঘাটের সকল সাম্পান মাঝি সকাল থেকে তাদের সাম্পান নিয়ে কর্ণফুলী নদীতে অবস্থান ধর্মঘট করতে থাকেন। সরকারি পাটনিজীবী নীতিমালা অনুযায়ী বৈঠা যার ঘাট তার এই নীতিমালা পূর্বের মতো বহাল করা না হলে কর্ণফুলীর সকল ঘাট অনির্দিষ্টকালের জন্য যাত্রী পারাপার বন্ধ থাকবে বলেও তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
মাঝিরা বলেন, উচ্চ আদালতের স্থিতিবস্থা অমান্য করে অপেশাদার ব্যক্তিদের চরপাথরঘাটা অভয়মিত্র ঘাট ও ইছানগর বাংলাবাজার ঘাটের দায়িত্ব প্রদান করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। তারা গতকাল সকাল থেকে চরপাথরঘাটা অভয়মিত্র ঘাট ও ইছানগর বাংলাবাজার ঘাটে নিজেদের লোকবল নিয়ে প্রতি যাত্রী থেকে ১০ টাকা হারে ঘাট মাশুল দাবি করতে থাকে। বিষয়টি সাম্পান মাঝিরা জানার পর সকল সাম্পান মাঝি সম্মিলিত ভাবে কর্ণফুলীর ঘাটে যাত্রী পারাপার বন্ধ করে নদীতে অবস্থান ধর্মঘট পালন করতে থাকে। গতকাল মুক্তিযোদ্ধা গবেষক ডাক্তার মাহফুজুর রহমান, কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশনের উপদেষ্টা সাংবাদিক আলীউর রহমান, সংগঠনের সভাপতি এস এম পেয়ার আলী, সহসভাপতি ইছানগর বাংলাবাজার সম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতির সভাপতি লোকমান দয়াল, কর্ণফুলী সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি কামাল পারভেজ, চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের প্রাক্তন চেয়ারম্যান মইনুদ্দিন, মীর্জা ইসমাইল, আবৃত্তিশিল্পী ও পরিবেশ কর্মী দিলরুবা খানম ছুটি, সাম্পান সমিতির জাফর আহমদ শাহ আলম প্রমুখ মাঝিদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন। অবস্থান কর্মসূচি প্রসঙ্গে একাধিক সাম্পান মাঝি বলেন, সিটি করপোরেশনের একটি কুচক্রী মহল স্থানীয় মাঝিদের কাছে ইজারা না দিয়ে বহিরাগত প্রভাবশালীদের ইজারা দিয়েছে। এতে আমাদের পেটে লাথি মারা হয়েছে। আমরা এটা মানি না। তিনি বলেন, এক হাজারেরও বেশি মাঝির রুটি রুজির পথ বন্ধ করে পথে বসানোর ব্যবস্থা করেছে চসিক। আমরা তাদের এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে দেবো না। যতদিন আমাদের দাবি মেনে নেয়া না হবে ততদিন পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে বলেও তারা সতর্ক করে দেন। সাম্পান মাঝিরা প্রয়োজনে চসিক ঘেরাও করবেন বলেও জানান।