‘সাকিব আল হাসান ভয় নাই, মিরপুর ছাড়ি নাই’, ‘তুমি কে আমি কে, সাকিবিয়ান সাকিবিয়ান’, গলা ফাটিয়ে এরকম নানা স্লোগান দিচ্ছিলেন এক দল লোক। আচমকা বাঁশ, লাঠি নিয়ে তাদের ওপর হামলা করলেন কয়েকজন লোক। আক্রমণের শিকার লোকগুলি দৌড়ে পালাতে লাগলেন স্টেডিয়ামের মূল ফটকের দিকে। কিন্তু সেখানে তাদের ওপর লাঠিচার্জ শুরু করল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। লোকের চিৎকার, ছুটোছুটি, সেনাবাহিনীর বাঁশির শব্দ মিলিয়ে আতঙ্কজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো সেখানে। খবর বিডিনিউজের।
মিরপুর শের–ই–বাংলা স্টেডিয়ামের ১ ও ২ নম্বর ফটকে সামনে গতকাল রোববার দুপুরে এসব যখন চলছে, স্টেডিয়ামের ভেতরে তখন অনুশীলন করছে সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দল। মিরপুরে সাকিবের বিদায়ী টেস্ট খেলতে চাওয়া এবং শেষ পর্যন্ত তার দেশে আসতে না পারা নিয়ে পক্ষে–বিপক্ষে নানা কর্মসূচি চলছে গত কয়েক দিন ধরেই। টেস্ট শুরুর আগের দিন স্টেডিয়ামমুখী ‘সাকিবিয়ানদের লং মার্চ’ কর্মসূচি ডেকেছিলেন সাকিবের ভক্ত–সমর্থকরা। মিরপুর স্টেডিয়ামের পাশেপাশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে গত কয়েক দিন থেকেই। রোববারও সকাল থেকে মিরপুর ২ নম্বর মোড় থেকে অপরপ্রান্তে প্রশিকা মোড় এবং আরেকদিকে ন্যাশনাল বাংলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে পর্যন্ত ব্যারিকডে দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রেখেছিল পুলিশ। পাশাপাশি উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সেনাবাহিনীর উপস্থিতিও ছিল শুক্রবার।
দুপুর ২টা থেকে সাকিব ভক্তদের আনাগোণা দেখা যায় স্টেডিয়ামের সামনে। ‘লং মার্চ’ বলতে যেমন বোঝায়, তেমন বড় সংখ্যক কোনো উপস্থিতি সেখানে ছিল না। শ খানেক সাকিব ভক্তকে দেখা যায় মিছিল করতে, স্লোগান দিতে। অনেকের হাতেই ছিল ব্যানার। তাদের ঘিরে সংবাদকর্মী ছিলেন বিপুল সংখ্যক।
অন্যান্য দিনের মতোই তাদের সবকিছু চলছিল। একটা সময় তাদেরকে মাঠে পাশ থেকে দূরে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সাধারণ মানুষ ও উৎসাহী অনেককে আশেপাশের গলিতে পাঠিয়ে দেন তারা। হঠাৎই সাকিবের ভক্তদের ওপর হামলায় বদলে যায় পুরো চিত্র। আইনশৃংঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাছাকাছি থাকলেও ওই সময়টায় তারা একরকম দর্শকের ভূমিকা পালন করেন। আক্রান্তদের রক্ষা করতে গিয়ে কয়েকজন সংবাদকর্মীও আঘাতের শিকার হন। হামলাকারীরা সাকিব–বিরোধী নানা স্লোগান দিয়ে এক পর্যায়ে একটি গলি দিয়ে বের হয়ে যায়। সাকিব–ভক্তদের বিপদ আরও বেড়ে যায় আইনশৃঙ্খলা রাক্ষাকারী বাহিনীর লাঠিচার্জে। ‘লাঠি কোথায়, লাঠি নিয়ে আয়…’ বলে চিৎকার করতে দেখা যায় কয়েকজনকে। এরপর তারা লাঠি হাতে ছুটে গিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয় সাকিবের ভক্তদের। হামলার শিকার বেশ কয়েকজন পরে তাদের ক্ষোভের কথা জানান সংবাদমাধ্যমকে। তাদেরই একজন মাহফুজার দাবি, কোনো উসকানি ছাড়াই তাদের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে। আমরা শুরু থেকেই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছিলাম। হঠাৎ ন্যাক্কারজনকভাবে আমাদের ওপর হামলা হলো। পুলিশ–সেনাবাহিনী এসব দেখেও আমাদের রক্ষায় এগিয়ে আসেনি। আপনাদেরকে ধন্যবাদ, কয়েকজন সাংবাদিক আমাকে উদ্ধার করেছেন। তবে আমরা এরকম হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানাই।
হামলাকারীরা চলে যাওয়ার পরও উত্তপ্ত অবস্থা ছিল আরও বেশ কিছুক্ষণ। সাকিবের ভক্তদের যারা তখনও ছিলেন, তাদেরকে এক পাশে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে সেনাবাহিনী। দুটি গাড়িতে সেনাবাহিনীর আরও সদস্যকে স্টেডিয়ামের সামনে এসে অবস্থান নিতে দেখা যায়।
এসব নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি পুলিশ, সেনাবাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কেউই। তবে এক নম্বর ফটকের কাছাকাছি জায়গা থেকে একজনকে আটক করতে দেখা যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেনাবাহিনীর এক সদস্য জানান, দেশ–বিরোধী স্লোগান দেওয়ায় ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের নিরাপত্তা ব্যাহত হতে পারে বলে শঙ্কা থাকায় তাকে আটক করা হয়েছে। পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। এসবের মধ্যেই চারটার একটু আগে কঠোর নিরাপত্তায় মাঠ ছেড়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা দল। বাসের ভেতর থেকে বাইরের নানা কিছু ভিডিও করতে দেখা যায় প্রোটিয়া ক্রিকেটারদের।
বিদায়ী টেস্ট খেলতে সাকিবের দেশে আসতে চাওয়াকে কেন্দ্র করে এসব কর্মসূচি চলছে বেশ কিছুদিন ধরে। মিরপুর টেস্টের স্কোয়াডে সাকিবকে রাখায় তার দেশে ফেরা ঠেকাতে সোচ্চার ছিলেন কিছু লোক। সাকিব–বিরোধী মিছিল, স্লোগান দেওয়া, স্টেডিয়ামের দেয়ালে নানা লেখা ও গ্রাফিতি আঁকাসহ নানা কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায় তাদের। পরে কর্মসূচি শুরু করেন সাকিবের ভক্তরাও।