‘সুলতানার স্বপ্ন’থেকে নির্মিত হলো স্প্যানিস চলচ্চিত্র

ডেইজী মউদুদ | শনিবার , ১৯ অক্টোবর, ২০২৪ at ১১:০০ পূর্বাহ্ণ

নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার উপন্যাস ‘সুলতানার স্বপ্ন ’ বা সুলতানাস ড্রিম তাঁর যাবতীয় সাহিত্যকীর্তির মাঝে এক অনন্য মর্যাদায় অভিষিক্ত। উন্নত বিশ্বের সমসাময়িক আধুনিক লেখকরাও তখন এই ধরণের বিজ্ঞানমনস্ক ও উন্নত সমাজব্যবস্থা নারীদের জন্য চিন্তা করতে পারেননি। অথচ বেগম রোকেয়া এই উপমহাদেশের নারীরা যখন অবরুদ্ধ এবং নানাদিক থেকে পিছিয়ে, তিনি আমাদের নারী সমাজের কথা ভেবেছিলেন, কোন পথে এগুলে নারীদের কল্যাণ ও মুক্তি আসবে, সেই পথে হেঁটেই তিনি নারী শিক্ষার দ্বার উন্মক্ত করেছিলেন অত্যন্ত সাহসিকতার সাথেই। নারী শিক্ষার সূচনা করেই থেমে ছিলেন, কিভাবে নারী তাঁর প্রাপ্য অধিকার, সম্মান ও মর্যাদা নিয়ে সমাজে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করবেন, তার সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে সাহিত্য রচনায় মনোানিবেশ করেছিলেন। তাঁর রিচিত সুলতানার স্বপ্ন বা সুলতানাস ড্রিম তাঁর এই সুদূরপ্রসারী চিন্তাধারারই প্রতিফলন যা ইতিহাসে মাইলফলক হিসাবে চিহ্নিত। কিছুদিন আগে সুলতানা’স ড্রিমস নিয়ে বিশ্বের নেতৃস্থানীয় লেখকদের মনোযোগের কাহিনী পত্রপত্রিকায় এসেছে। ইউনেস্কোর কল্যাণে বিশ্বের নেতৃস্থানীয় লেখকদের গ্রন্থেও তালিকায় বেগম রোকেয়ার এই গ্রন্থটি স্থান পেয়েছে। এবার আরো সুখবর এলো। এই গ্রন্থটির কাহিনী নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের খবর পেলাম। গ্রন্থটির এনিমেশন নিয়ে সিনেমা বানিয়েছেন স্প্যানিস নারী চলচ্চিত্রনির্মাতা ইসাবেল এরগেরা। ১৭ নভেম্বর স্পেনে সিনেমাটি মুক্তি পাবে। সিনেমাটির নাম রাখা হয়েছে, ‘এল সুয়েনিও দে লা সুলতানা’। দৈর্ঘ্য এক ঘণ্টা ২০ মিনিট। নির্মাতা ইসাবেল এরগেরার সাথে এটি নির্মাণে যৌথভাবে কাজ করেছেন তাঁর স্বামী জিয়ানমার্কো সেরা। তিনি এই বইটির চিত্রনাট্য লিখেছেন। সিনেমাটি নির্মাণ প্রসঙ্গে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ইসাবেল বলেন, ‘২০১২ সালে দিল্লী গিয়েছিলাম। প্রবল বৃষ্টিপাতের মাঝে একদিন একটি আর্ট গ্যালারিতে আশ্রয় নিই। সেখানেই বই দেখতে গিয়ে হঠাৎ “সুলতানা’স ড্রিমস” বইটি খুঁজে পাই। অনেক আগে লেখা একটি বই। পড়তে গিয়ে দেখলাম, এতে নারীদের জন্য সম্পূর্ণ ভিন্ন এক কল্পনার জগৎ রচিত। তরতর করে বইটি পড়ে ফেললাম, যতই পড়ছিলাম, অবাক হচ্ছিলাম। সেদিনই সিদ্ধান্ত নিলাম এই বইটি নিয়ে সিনেমা বানাবো। এই সিনেমার কাজ করতে গিয়ে ইসাবেল বেশ কয়েকবার ভারতে এসেছেন। এই সব ট্রিপে তিনি ভারতের বিভিন্নস্থান থেকে আগত নারীদের নিয়ে বেশ কিছু কর্মশালা এবং সেমিনারের আয়োজন করেছিলেন, কেবলমাত্র এতবছর আগে রচিত এই গ্রন্থটির কতটুকুন প্রাসঙ্গিকতা বর্তমানে, তা খতিয়ে দেখার জন্য। এ ছাড়াও তিনি সিনেমাটি নির্মাণ করার আগে বিশ্বের নামীদামি চিত্রশিল্পীদেরও পরামর্শ এবং দিকনির্দেশনা অনুসরণ করেছিলেন।

দীর্ঘ আট বছরের গবেষণা শেষে ইসাবেল ২০২০ সালে সিনেমাটি নির্মাণের কাজ শুরু করেন। নির্মাতা জানিয়েছেন, বিভিন্ন উৎসবে প্রদর্শনের পর এইটা চলতি বছরের ১৭ নভেম্বর স্পেনে মুক্তি পাবে।

বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন রচিত এই উপন্যাসিকাটি ১৯০৫ মালে মাদ্রাজে দ্যা ইন্ডিয়ান লেডিস ম্যাগাজিন “সুলতানা’স ড্রীমস” নামে প্রকাশিত হয়। ১৯০৮ সালে এটি পুস্তিকা আকারে প্রকাশিত হয়। বাংলায় প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯২২ সালে ‘মতিচূর’ দ্বিতীয় খণ্ডে সুলতানার স্বপ্ন নামে। তবে গ্রন্থটির কিয়দংশ আমরা যারা ৭০ দশকের শেষের দিকে এসএসসি পরীক্ষার্থী, ক্লাস নাইন আর টেনের বইতে ‘নারীস্থান’ নামে একটি প্রবন্ধ আমাদের পাঠ্যভুক্ত ছিল। তখনই এই অবিসংবাদিত লেখক বেগম রোকেয়ার সাথে আমাদের পরিচয়ের সূত্রপাত। প্রবন্ধটি পড়ে আমি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছলাম। কি অসাধারণ চিন্তাধারা। কি দূরদৃষ্টিসম্পন্ন কল্পনা তিনি নারী সমাজের জন্য করেছিলেন।

স্পেনের “সাব সেবাস্তিয়ান ফিল্ম ফ্যাস্টিভ্যাল” এ স্থান পেয়েছে “এল সুয়েনিও দে লা সুলতানা”। গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়েছে এই ফিল্ম উৎসবের ৭১তম আসর। গত ২৫ সেপ্টেম্বর সিনেমাটি প্রথম দেখানো হয়েছে। সিনেমাটিতে মৌসুমী ভৌমিকের লেখা একটি গানও রয়েছে বলে জানা গেছে। সেই গানটির সংগীত প্রযোজনা করেছেন তাজদির জুনায়েদ, কণ্ঠ দিয়েছেন দীপান্বিতা আচার্য্য। স্পেন ও জার্মানির ৫টি প্রতিষ্ঠান প্রযোজনা করেছে সিনেমাটি। সিনেমাটিতে ইংরেজি , বাংলা, হিন্দি, ইতালিয়ান, স্প্যানিশ ও বাস্ক ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপরকালে শান্তি নিশ্চিত করতে আল্লাহ্‌ ও রাসূলের নির্দেশিত পথে চলতে হবে
পরবর্তী নিবন্ধপুরুষতান্ত্রিকতার শিকল ছিঁড়ে মুক্তি পাক কন্যাশিশু