জীবনের গল্প

নীলুফা সুলতানা | শুক্রবার , ১৮ অক্টোবর, ২০২৪ at ৮:১১ পূর্বাহ্ণ

কবিতা লেখা হচ্ছে না দীর্ঘদিন ধরে। অর্থাৎ কবিতা মাথায় ভর করছে না। তাই বলে কি আমি কবিতা লিখবো না? অবশ্যই লিখবো। তবে কবিতা যাকে কীনা নিজস্বতায় আসতে দিতে হয়। জোর করে নয়। একজন আমাকে সেদিন বলছিল গল্প, উপন্যাস লেখা যায় সময় নিয়েই। কিন্তু কবিতার সময় বলে কিছু নাই। তাকে আসতে হয়আসতে দিতে হয় চুপিচুপি। এই যে আমি আত্মজীবনী লিখব ঠিক করলাম তার কী করবো? কোথা দিয়ে শুরু করতে হয় জানা আছে? জীবন নামক তরীতে কখন যে ওঠে পড়া হয়েছে, পৃথিবীর যাবতীয় আলোকে ছুঁয়ে দেখবো বলে এ পৃথিবীর বুকে কোন এক সময়ে হয়েছিল আমার আগমন ভাবলেই অবাক হই আমি। আমার আগমনে কাকপক্ষীর বুক কী কেঁপে উঠেছিল? এটুকু না বুঝলেও বুঝি আম্মা আমার দিকে চাঁদ মনে কইরা তাকিয়েছিল একনাগাড়ে অনেকক্ষণ। আশেপাশের মানুষজন কইতেছিলদেখ আমার চাঁদের লাহান একটা মেয়ে হইছে। মেয়েটা বড় বেশী সুন্দর হইছে না? প্রতিবেশীদের উদ্দেশ্যে কইরা মা আমার বলছিল আমার মেয়ে! তোমরা বেশী নজর দিওনা কইলাম। তখনকার দিনে ভূমিষ্ট হওয়া মেয়ে সন্তানরে এত ভালেবাসুন যায়? বিশেষ করে তখনকার সময় ও প্রতিবেশ মিলিয়ে হিসেব করলে আমার মা কিন্তু বেশী লেখাপড়া করা মানুষ না। তবু আমারে আগলাইয়া রাখছিল যতন করে। আব্বা অবশ্য বিশেষ খুশি ছিলনা আমার আগমনে। তিনি চেয়েছিলেন একটা পুত্র সন্তান হোক। পুত্র সন্তানের আশায় তেনার ছিলনা কম ছোটাছুটি। সেই শহর থেকে লক্করঝক্কর কইরা গাঁয়ে আসা হতো তেনার সপ্তাহে মাত্র একবার। পিতার পাশে আমরা বোনেরা ঘিরে ধরতাম তারে। শীতকাল হলেতো কথাই নাই। চুলোর চারপাশে বইসা ভাঁপাপিঠে খেয়ে একদম মশগুল থাইকা বাবার কাছ থেকে শহরের গল্প শোনা হইত আমাদের খুব করে। যা বলছিলাম আমি কীভাবে লিখতে হয় আত্মকথা?একটা মানুষের আত্মজীবনীতে কী থাকে লেখা?এটা কি নিজের সাথে নিজের বলে যাওয়া সংলাপ নাকি স্মৃতিনামক গদ্যে হাতড়ে বেড়ানো? মাথাটা আমার ভোঁ ভোঁ করে ঘুরছে। কিন্তু জানি মাথাটা আমার ভোঁ ভোঁ করে ঘুরলেও কিছু হবে না। মাথা ঘোরাটা সাধারণে পরিণত হয়েছে আমার। এরই মধ্যে আপনমনে খুঁজে বেড়াচ্ছি কাউকে। তাকেই খুঁজে বেড়ানো। না, পাওয়া যাচ্ছেনা তাকে। আমারই শুধু রয়েশয়ে বহে সময়। সারাদিন টোঁটোঁ করে ঘোরা, বাতিঘর, এদিক সেদিক থেকে মনটা আমার বেশ ফূর্তিতে। অনেকেই আমাকে ভালোবেসে গুগল পাখি বলে ডাকে তাদেরতো আমার ভালোবাসতেই হয়। মনে হয় ভালোবাইসা খালি পোস্টায়, পোস্টাইতে থাকি। খুব মন্দ হবে কি একটা জীবন পোস্ট দেওয়া নেওয়াতেই যদি চলে যায়?

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সংস্কার করা হোক
পরবর্তী নিবন্ধসম্পর্ক