৪৩-৪৬ বিসিএস, পুলিশের ৬৭ এএসপি ও ৮০৩ সাব ইন্সপেক্টর নিয়োগ বাতিলের দাবি

| শুক্রবার , ১৮ অক্টোবর, ২০২৪ at ৮:০৬ পূর্বাহ্ণ

সংস্কার বিষয়ে অন্তর্র্বর্তী সরকার যেন কোনো প্রকার প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সেজন্য এবার প্রশাসনের মধ্যে সংস্কারের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু পরামর্শ দিয়েছে বিএনপি। ৪৩৪৬ বিসিএসের সব প্রক্রিয়া বাতিল, পুলিশের ৬৭ এএসপি ও ৮০৩ সাব ইন্সপেক্টরের নিয়োগ বাতিলের দাবি জানিয়েছে দলটি। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ এসব দাবি তুলে ধরেন। খবর বাংলানিউজের।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ৪৩তম বিসিএসের নিয়োগ প্রজ্ঞাপন বাতিল এবং ৪৪, ৪৫ এবং ৪৬তম বিসিএস পরীক্ষার সব প্রক্রিয়া বাতিলের দাবির প্রসঙ্গে আজকের সংবাদ সম্মেলন। স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নিয়োগপ্রাপ্ত দলকানা ৪৩তম বিসিএস ক্যাডারদের বর্তমান অন্তর্র্বর্তী সরকার বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদদের রক্তের বিনিময়ে আমরা যে বাংলাদেশ পেয়েছি সেখানে সরকারের এমন একটি সিদ্ধান্ত দেশ ও জাতিকে হতাশ করেছে। আওয়ামী লীগের মতো সন্ত্রাসী সংগঠনের অনুসারীদের সরকারের উচ্চপদস্থ জায়গায় পদায়ন করার সিদ্ধান্ত হচ্ছে জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার প্রথম ১৯৭৩ সালে সরকারের প্রশাসন ক্যাডারে প্রথম দলীয় ক্যাডার নিয়োগ করে। এর মাধ্যমে দেশে প্রথমবারের মতো প্রশাসনে দলীয় ক্যাডারের সূচনা হয়। ১৯৯৬ সালের পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে, প্রশাসনের সমস্ত মূল্যবোধ ভেঙে দিয়ে পুরোপুরি দলীয় আজ্ঞাবহ প্রশাসনে পরিণত করে। তারপর ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত দেশের সমস্ত গেজেট এবং নন গেজেটেড প্রশাসনের সব পদে দলীয় কর্মীবাহিনী নিয়োগের মাধ্যমে একচ্ছত্রভাবে আওয়ামী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল।

সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার নিয়োগ পদায়ন এবং বদলি বিভিন্ন মাধ্যমে দেশের মেধাবীদের বঞ্চিত করেছিল। যার ফলে বেড়ে গিয়েছিল সীমাহীন বেকারত্ব। সেই ধারাবাহিকতার সর্বশেষ হচ্ছে ৪৩তম বিসিএস।

অন্তর্র্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে বিএনপির এ নেতা বলেন, ছাত্রজনতার রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের পর কীভাবে কোনো বাছ বিবেচনা ছাড়া প্রশাসনে আওয়ামী দলীয় ক্যাডার নিয়োগের মাধ্যমে প্রশাসনে আওয়ামীকতার আধিপত্য আরও বিস্তৃত করে দেওয়া হলোসেটা চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা মনে করি, এটা জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতামূলক।

সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন ছিল একটি গৌরবময় প্রতিষ্ঠান। কিন্তু আওয়ামী সরকার এটাকে এত নিকৃষ্টভাবে দলীয়করণ করেছেযেখানে পুরস্কার স্বরূপ এই প্রতিষ্ঠানের একজন সাবেক চেয়ারম্যানকে কামিনী নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত করা হয়েছিল। তিনি এখন পলাতক। জাতির জন্য এর চেয়ে লজ্জার বিষয় আর কি হতে পারে। এসব দলবাজ কর্মকর্তাদের দ্বারা ঢালাওভাবে সুপারিশকৃত শাসক দলীয় প্রার্থীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রশাসনে নিয়োগ করা হলে তা হবে চরম আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। এ কারণে আমরা ৪৩তম বিসিএসের নিয়োগপ্রাপ্তদের দেশ ও জাতির পক্ষ থেকে বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। অতীতে একই প্রেক্ষাপটে ২৭তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফল বাতিল করা হয়। এবং পুনরায় মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া করার নজির রয়েছে।

ইতোমধ্যে সমস্ত মহল থেকে পিএসসি সংস্কারের দাবি উঠেছে জানিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, এই দাবির সঙ্গে সংগতি রেখে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়ে কাজ হচ্ছে বলে জানা যায়। আমরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। পিএসসি সংস্কারের জন্য ইতোমধ্যে নতুন চেয়ারম্যান এবং নতুন কয়েকজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি পিএসসিতে সংস্কার করে, নতুন করে সকল নিয়োগ প্রক্রিয়া করা উচিত। যেন চাকরি প্রার্থীরা পিএসসির সুফল পায় এবং সরকারি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আস্থা পূর্ণ প্রতিষ্ঠিত হয়।

ফ্যাসিবাদের দোষরদের রুখে দিতে হবে জানিয়ে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটি সদস্য বলেন, আমরা আরও জানতে পেরেছি ৪৪তম বিসিএস এর যেই ৯ হাজার জনকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়েছিল তাদের মধ্যে ৩ হাজার জনের পরীক্ষা হয়েছে। পাশাপাশি ৪৫তম বিসিএস এর লিখিত পরীক্ষার মূল্যায়ন প্রায় শেষ পথে। অপরদিকে ৪৬তম বিসিএস এর প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে তিন মাস আগে। তাই আমরা দাবি করছি, ফ্যাসিবাদ আওয়ামী গোষ্ঠী এবং ছাত্রলীগ ক্যাডার বাহিনীকে নিভৃত করার লক্ষ্যে এই তিনটি বিসিএসের নিয়োগ প্রক্রিয়া পুরোপুরি বাতিল করা হোক। জুলাইয়ের বিপ্লবকে অর্থবহ করে তুলতে হলে এই ফ্যাসিবাদের দোষরদের রুখে দিতে হবে। এই বিষয়ে আপোষ করার বিন্দু মাত্র সুযোগ নেই।

পুলিশ প্রশাসনে আওয়ামী ক্যাডারদের নিয়োগের বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আমরা বিশ্বস্ত সূত্র থেকে জানতে পেরেছি, ফ্যাসিবাদ সরকার চলে যাওয়ার আগে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে পুলিশ প্রশাসনের সাব ইনেসপেক্টর পদে মোট ৮০৩ জনকে নিয়োগ করে। এর মধ্যে ২০০ জনের বাড়ি গোপালগঞ্জে। এর মধ্যে ৪০৩ জন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র জনতার হত্যাকারী ছাত্রলীগের সদস্য।

সারদায় ট্রেনিং সেন্টারে এই সাব ইন্সপেক্টরদের পাসিং আউট হবে আগামী ৩১ অক্টোবর। যদি এ নিয়োগ বন্ধ করা না হয় তাহলে এদের মধ্য থেকে তৈরি হবে ওসি প্রদীপের মত ফ্যাসিবাদের বহুদোষর। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সর্বশেষ যে ৬৭ জন এএসপি নিয়োগ করেছিল তারাও সবাই ছাত্রলীগ ক্যাডার। তাদের পাসিং আউট হবে সম্ভবত ২০ অক্টোবর। এদেরকে এখনই থামিয়ে না দিলে এটাই হবে আগামী দিনের বেনজীর, আসাদ, হারুন, বিপ্লব, মনিরুল। এদের নিয়োগ দিলে এরা ফ্যাসিবাদকে পথ দেখাবে। দেশ ও জাতির স্বার্থে এ সমস্ত সাবইন্সপেক্টর এবং এএসপিদের বাতিল করা হোক।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, অন্তর্র্বর্তী সরকারের সাফল্য আমাদের কাম্য। তারা যেন কোনোভাবে প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সেদিকে আমাদের নজর।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্মৃতির ভেলায় আইয়ুব বাচ্চু
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে কমছে না ডেঙ্গুর প্রকোপ হাসপাতালে ভর্তি ১৪৮ রোগী