পাস করানোর দাবিতে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের প্রধান ফটকে তালা দিয়ে আন্দোলন করেছেন সদ্য প্রকাশিত হওয়া এইচএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া শিক্ষার্থীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত তালা দিয়ে বোর্ডের সামনে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করেন তারা। এসময় বোর্ডের ভিতরে থাকা কর্মকর্তা–কর্মচারী ও অন্যান্যরা প্রায় ৬ ঘণ্টা অবরুদ্ধ ছিলেন। কাউকেই ভিতরে ঢুকতে বা বের হতে দেওয়া হয়নি। আন্দোলনে বিভিন্ন কলেজের প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, পরীক্ষার ফলাফলে বৈষম্য করা হয়েছে। সঠিকভাবে সাবজেক্ট ম্যাপিং করা হয়নি বলেও দাবি করেন তারা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, খাতা না কেটেই বোর্ড কর্তৃপক্ষ মনগড়া ফলাফল দিয়েছে। চট্টগ্রাম বোর্ডের ইংরেজি প্রশ্ন সহজ আসার পরেও তাদেরকে গণহারে ইংরেজিতে ফেল করিয়ে দিয়েছে। এছাড়াও সিলেট বোর্ডে মাত্র দুই বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে সবাইকে পাস করানো হয়েছে অথচ চট্টগ্রাম বোর্ডে সঠিকভাবে খাতা মূল্যায়ন করা হয়নি। হাজেরা তজু ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী দেবপ্রিয় বড়ুয়া কৌসিক বলেন, আমাদের চার বিষয়ের মোট ৭টা পরীক্ষা হয়েছে। দুই বিষয় মিলে ৬৬ নম্বর পেলেই পাস কিন্তু ৭৬ পাওয়ার পরেও ফেল দেওয়া হয়েছে। এটা কীভাবে সম্ভব? আমাদের সঙ্গে বৈষম্য করা হয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন কায়সার নিলুফা কলেজের শিক্ষার্থী মাসুম খান বলেন, আমি সব পরীক্ষা দিয়েছি। আমাদের অর্থনীতি বিষয়ের পরীক্ষা হয়নি। কিন্তু আমাকে ফেল করিয়ে দিয়েছে। বাংলা পরীক্ষা দেওয়ার পরেও আমাকে অনুপস্থিত দিয়েছে। আজকে আমরা আন্দোলন করছি বলে আমাদেরকে মারার জন্য সমন্বয়কদের ডেকে আনা হয়েছে।
বোর্ডে আটকা এক শিক্ষক জানান, দুপুর বারোটা থেকে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে আটকা আছি। ছাত্রদের দাবি ফেল করা ছাত্রদেরকে আজকের মধ্যে পাশ করাতে হবে। বোর্ডের চেয়ারম্যান বললেন তোমরা একটি লিখিত স্মারকলিপি দাও। ছাত্ররা বলল আপনি লিখে আজকের মধ্যে আমাদেরকে ঘোষণা দেন। তারা বোর্ডের প্রধান গেটসহ ভিতরের কলাপ্সিবল গেট বন্ধ করে দেন। আমিসহ অনেক শিক্ষক, অভিভাবক এবং বিভিন্ন সেবা প্রার্থী লোকেরা দূর–দূরান্ত থেকে এসে বিকেল পর্যন্ত অবরুদ্ধ ছিলেন। শিক্ষক পরিচয় দেওয়ার পরও ছাত্ররা বলে আপনারাই আমাদেরকে ফেল করিয়েছেন। যতক্ষণ পাস না দিবেন ততক্ষণ এখান থেকে যাব না। এই সময় নিজেকে শিক্ষক হিসেবে পরিচয় দিতে অন্যান্য লোকদের কাছে লজ্জা পেলাম। তিনি জানান, আন্দোলন বলতে তারা বুঝে শুধু তালা বন্ধ রেখে অবরুদ্ধ করে দাবি আদায় করা। ভাগ্যিস রোজা ছিলাম বলে দুপুরে খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে নি। কিন্তু অন্যান্য লোকেরা বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীরা ঘুরে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। আন্দোলনকারীদের চেহারা, বিবেকবোধ, কমনসেন্স, শ্রদ্ধাবোধ কোনো কিছুতেই তাদেরকে ছাত্র হিসেবে মনে হয়নি। মনে হয়েছে একদল দুর্বৃত্ত উদ্দেশ্য সাধনের জন্য অনেক মানুষকে জিম্মি করে রেখেছে।
সার্বিক বিষয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সচিব প্রফেসর আমিরুল মোস্তফা আজাদীকে বলেন, যারা খারাপ করছে তারা এসে আন্দোলন করছে। তারা বলছে যে সিলেট বোর্ডে দুই বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে সবাই পাস করেছে আমরা সাত বিষয়ের পরীক্ষা দিয়ে কেন খারাপ করলাম? তারা আসলে তাদের মতো করে দাবি তুলছে। কিন্তু তারা পরীক্ষা দিয়ে যদি রেজাল্ট খারাপ করে তাহলে আমাদের কিছু করার নেই। যেখানে ৬৬–তে পাস, সেখানে ৭৬ পাওয়ার পরেও ফেল আসার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সচিব বলেন, যদি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে এমসিকিউ থাকে আর ৩০ নম্বরের প্রশ্নে একজন শিক্ষার্থীকে অবশ্যই ১০ পেতে হবে। কিন্তু সে যদি এখানে কম নম্বর পায় কিন্তু মোট নম্বরে যদি ৮০ পায় তাও ফেল আসবে। তাই শিক্ষার্থীকে লিখিত এবং এমসিকিউতে আলাদা আলাদা পাস করতে হবে। এখন কেউ যদি কোনো একটা বিষয়ে খারাপ করে তাহলে ফেল আসবে। এখানে কারও কোনো হাত নাই। যে যেভাবে পরীক্ষা দিয়েছে তেমন ফলাফলই পেয়েছে। তারপরও যদি কারও আশানুরূপ ফল না পায় তাহলে তো অবশ্যই তা পুনঃনিরীক্ষণ করার সুযোগ আছে। আর পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন বুধবার থেকে শুরু হয়েছে। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে যাচাই–বাছাই করে আবার রেজাল্ট দেওয়া হবে।
সমন্বয়ক ডেকে হেনস্তা করার অভিযোগ প্রসঙ্গে সচিব বলেন, সমন্বয়কদের আমরা ডাকিনি। তারা নিজ থেকে এসেছে এবং আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বুঝানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু শিক্ষার্থীরা কোনোভাবেই বুঝতে চাচ্ছিল না।