নতুন চিকিৎসায় জরায়ুমুখ ক্যান্সারের মৃত্যু ঝুঁকি ৪০ শতাংশ কমবে?

| বৃহস্পতিবার , ১৭ অক্টোবর, ২০২৪ at ৮:০৭ পূর্বাহ্ণ

২০ বছরের মধ্যে এই প্রথম জরায়ুমুখ ক্যান্সারের চিকিৎসায় এক যুগান্তকারী অগ্রগতি এনেছে সম্প্রতি এক গবেষণা, যা জরায়ুমুখ ক্যান্সারে নারীদের মৃত্যুর ঝুঁকি কমিয়ে আনবে ৪০ শতাংশে। এ গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেছে বিজ্ঞান ভিত্তিক জার্নাল ‘ল্যানসেট’। এতে অর্থায়ন করেছে যুক্তরাজ্যের ‘ক্যান্সার রিসার্চ সেন্টার’।

গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্তদের চিকিৎসা শুরুর আগে তাদের কেমোথেরাপির সংক্ষিপ্ত এক কোর্সের মাধ্যমে রোগীদের মৃত্যুর ঝুঁকি ৪০ শতাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। নারীদের পুনরায় জরায়ুমুখ ক্যান্সারে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিও ৩৫ শতাংশে কমিয়ে আনবে নতুন এই চিকিৎসা পদ্ধতি। যুক্তরাজ্যে প্রতি বছর প্রায় ৩ হাজার ৩০০ নারী জরায়ুমুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন (২০১৭২০১৯)। দেশটিতে ২০১৮ থেকে ২০১৯ ও ২০২১ সালে এ রোগে ৮৬০ জন মারা গেছেন বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ক্যান্সার রিচার্স ইউকে। জরায়ুমুখ ক্যান্সারে চিকিৎসা শুরু হয় ১৯৯৯ সাল থেকে। ওই সময় কেমোরেডিয়েশন বা সিআরটি, কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপির সংমিশ্রণে এক কোর্সের মাধ্যমে এ রোগের চিকিৎসা করতেন চিকিৎসকরা। খবর বিডিনিউজের। নতুন গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছে, জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীদের সিআরটি শুরু করার আগে ছয় সপ্তাহের ইন্ডাকশন কেমোথেরাপি দিলে তা তাদের পুনরায় ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে আনে। ইন্ডাকশন কেমোথেরাপি হচ্ছে, কেমোথেরাপিউটিক ওষুধ দিয়ে ক্যান্সার চিকিৎসার প্রাথমিক পর্যায়, যার লক্ষ্য যতটা সম্ভব দেহের ক্যান্সার কোষকে ধ্বংস করা।

এ নতুন পদ্ধতি অনুসরণ করে ৫ বছর পর গবেষকরা দেখতে পান, সিআরটি শুরুর আগে ইন্ডাকশন কেমোথেরাপি দেওয়ার পর ৮০ শতাংশ অংশগ্রহণকারী বেঁচে ছিলেন এবং তাদের মধ্যে ৭৩ শতাংশ অংশগ্রহণকারীর দেহে আর ক্যান্সার হয়নি। এর বদলে যেসব অংশগ্রহণকারীরা কেবল জরায়ুমুখ ক্যান্সারের প্রচলিত চিকিৎসা সেবা পেয়েছেন তাদের মধ্যে ৭২ শতাংশ রোগী বেঁচে ছিলেন ও ৬২ শতাংশ অংশগ্রহণকারীর দেহে আর ক্যান্সার হয়নি।

ক্যান্সারে চিকিৎসা করার ক্ষেত্রে সময়ই সবকিছু” বলেছেন যুক্তরাজ্যের ‘ক্যান্সার রিসার্চ সেন্টার’ এর গবেষণা ও উদ্ভাবন বিভাগের নির্বাহী পরিচালক ড. ইয়ান ফোলকেস। জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীদের জন্য কেমোরেডিয়েশন চিকিৎসার শুরুতে ইন্ডাকশন কেমোথেরাপি দেওয়ার এই সহজ কাজটি এ গবেষণায় বিস্ময়কর ফলাফল দেখিয়েছে।

ইন্ডাকশন চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত দুটি কেমোথেরাপির ওষুধ সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য এবং এরইমধ্যেই তা ব্যবহারের জন্য অনুমোদিত হওয়ায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে এ নতুন পদ্ধতি দ্রুতই আদর্শ মান হয়ে উঠবে।

২০ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে এ রোগের চিকিৎসায় এটিই সবচেয়ে বড় উন্নতি, বলেছেন এ গবেষণার প্রধান গবেষক ও ‘ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন ক্যান্সার ইনস্টিটিউট’ ও ‘ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন হসপিটাল’ এর ড. মেরি ম্যাককরম্যাক। সার্বিকভাবে জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার উন্নতির জন্য আমাদের প্রয়োজনীয় প্রমাণ সংগ্রহ করতে সাহায্য করেছে তাদের এই অবদান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদিকহারা মানুষকে সঠিক পথের সন্ধান দিতে গাউছে পাকের ভূমিকা অপরিসীম
পরবর্তী নিবন্ধকোটস বাংলাদেশের কার্যক্রম দেখলেন সিআইইউর শিক্ষার্থীরা