২০২১ থেকে ২০২৩। চট্টগ্রাম বোর্ডে উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষার (এইচএসসি) ফলাফলে টানা তিন বছর মফস্বলের তুলনায় এগিয়ে ছিল নগরের কলেজগুলো। পাসের গড় হার, জিপিএ–৫ প্রাপ্তি এবং শতভাগ পাস; এই তিন ক্যাটাগরিতেই মফস্বলের কলেজগুলো পিছিয়ে ছিল নগরের তুলনায়। গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত ২০২৪ সালের পরীক্ষার ফলাফলেও পূর্বের ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে। অর্থাৎ এবারও পিছিয়ে আছে মফস্বলের কলেজগুলো। এই নিয়ে টানা চার বছর পিছিয়ে থাকল মফস্বল।
অবশ্য এর আগে ২০১০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত টানা ১০ বছর মফস্বলের চেয়ে এগিয়ে ছিল নগর। পরের বছর ২০২০ সালে অটোপাসের কারণে পুরো বোর্ডে পাসের হার ছিল শতভাগ। ওই হিসেবে ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত টানা ১৫ বছর পিছিয়ে থাকল মফস্বল। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এ এম এম মুজিবুর রহমান বলেন, মফস্বলের কলেজগুলোর ফলাফল পিছিয়ে থাকার প্রভাব বোর্ডের সামগ্রিক ফলাফলে পড়ছে।
তুলনামূলক চিত্র : এবার চট্টগ্রাম মহানগরের কলেজগুলোর পাসের হার হচ্ছে ৮৪ দশমিক ২২ শতাংশ; যা গতবার (২০২৩) ছিল ৮৫ দশমিক ১৯ শতাংশ। অর্থাৎ গতবারের তুলনায় নগরের কলেজগুলোর শিক্ষার্থীদের পাসের হার কমেছে শূন্য দশমিক ৯৭ শতাংশ। বিপরীতে মহানগর বাদে চট্টগ্রাম জেলায় এবার পাসের হার ৬৩ দশমিক ৬২ শতাংশ; যা গতবার (২০২৩) ছিল ৬৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ। অর্থাৎ গতবারের তুলনায় এবার জেলায় পাসের হার কমেছে ৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ। আবার গতবার মফস্বলের তুলনায় শহরের কলেজগুলোর পাসের পার্থক্য ছিল ১৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ; যা এবার বেড়ে ২১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এর আগে ২০২১ সালে নগরে পাসের হার ছিল ৮৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ ও জেলায় ছিল ৭৬ দশমিক ১২ শতাংশ। এছাড়া ২০১৯ সালে মহানগরে ৭৫ দশমিক ৩২ শতাংশ এবং উপজেলায় পাসের হার ছিল
৫৫ দশমিক ৬১ শতাংশ। ২০১৮ সালে নগরে ৭৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ এবং উপজেলায় ছিল ৫৯ দশমিক ২৫ শতাংশ। ২০১৭ সালে নগরে ৭৬ দশমিক ৬৮ শতাংশ এবং উপজেলায় পাস করে ৫৫ দশমিক ৮১ শতাংশ। ২০১৬ সালে নগরে ৭৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ এবং উপজেলায় পাস করে ৬০ দশমিক ২৩ শতাংশ। ২০১৫ সালে শুধু মহানগরে পাসের হার ছিল ৭৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ। মহানগর বাদে চট্টগ্রাম জেলায় পাসের হার ছিল ৫৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ। ২০১৪ সালে মহানগরে পাসের হার ছিল ৭৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ এবং উপজেলায় পাসের হার ছিল ৬৩ দশমিক ৯০ শতাংশ। ২০১৩ সালে মহানগরে পাসের হার ছিল ৭৪ দশমিক ০৮ শতাংশ এবং উপজেলার পাসের হার ছিল ৫২ দশমিক ৭৯ শতাংশ। ২০১২ সালে মহানগরে পাসের হার ছিল ৮১ দশমিক ৬১ শতাংশ এবং উপজেলায় পাসের হার ছিল ৬৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ২০১১ সালে শুধু মহানগরে পাসের হার ছিল ৮১ দশমিক ১৫ শতাংশ এবং উপজেলায় পাসের হার ছিল ৬৪ দশমিক ৬২ শতাংশ। ২০১০ সালে মহানগরে পাসের হার ছিল ৮২ দশমিক ৮২ শতাংশ এবং উপেজেলায় পাসের হার ছিল ৬৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
পিছিয়ে তিন পার্বত্য জেলা : এবার তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে রাঙামাটিতে পাসের ৬০ দশমিক ৩২ শতাংশ, খাগড়াছড়িতে পাসের হার ৫৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ এবং বান্দরবানে পাসের হার হচ্ছে ৫৯ দশমিক ৯০ শতাংশ। গত বছর রাঙামাটিতে ৬৪ দশমিক ৬২ শতাংশ, খাগড়াছড়িতে ৬২ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং বান্দরবান জেলায় পাসের হার ছিল ৬৬ দশমিক ৮১ শতাংশ। অর্থাৎ গতবারের তুলনায় এবারও পিছিয়ে আছে তিন পার্বত্য জেলা।
বোর্ডের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলেন, পার্বত্য এলাকা এবং দ্বীপ অঞ্চলের কলেজগুলোতে অনেক দুর্বল শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। তাছাড়া ওইসব এলাকার কলেজগুলোতে আছে নানা সমস্যা। সেখানে সুযোগ–সুবিধাও কম। এটারও প্রভাব পড়ে পরীক্ষার ফলাফলে।