জাতির সমৃদ্ধিতে সামাজিক প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব তুলে ধরে অর্থনীতির নোবেল

| মঙ্গলবার , ১৫ অক্টোবর, ২০২৪ at ৬:৩৩ পূর্বাহ্ণ

একটি দেশের সমৃদ্ধিতে সামাজিক প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব কী? এক দেশ কীভাবে আরেক দেশের চেয়ে সমৃদ্ধ হয়? অর্থনীতির এই ধাঁধার সমাধান করে চলতি বছরের নোবেল পুরস্কার পাচ্ছেন তিন গবেষক। রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস গতকাল অর্থনীতিতে চলতি বছরের নোবেল পুরস্কারের জন্য মার্কিন অর্থনীতিবিদ ড্যারন অ্যাসেমোগলু, সাইমন জনসন ও জেমস এ রবিনসনের নাম ঘোষণা করে। পুরস্কারের অর্থমূল্য হিসেবে এক কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার ভাগ করে নেবেন এই তিন অর্থনীতিবিদ। খবর বিডিনিউজের।

গত বছর নারী শ্রমবাজার নিয়ে গবেষণায় অর্থনীতিতে নোবেল পেয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ইতিহাসবিদ ক্লডিয়া গোল্ডিন। অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কারের মাধ্যমে চলতি বছরের নোবেল পুরস্কার ঘোষণার পর্ব শেষ হল।

এবারের অর্থনীতিতে পুরস্কার ঘোষণায় নোবেল কমিটি বলছে, তুর্কি বংশোদ্ভূত ড্যারন অ্যাসেমোগলু, ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত সাইমন জনসন এবং আমেরিকান অর্থনীতিবিদ রবিনসন জাতির সমৃদ্ধির পেছনে সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গুরুত্ব কী, সেটি তুলে ধরেছেন। যে সমাজে আইনের শাসন দুর্বল এবং প্রতিষ্ঠানগুলো জনগোষ্ঠীকে শোষণ করে, সেই জাতি সমৃদ্ধি লাভ করতে পারে না। নিজেদের পরিবর্তন ঘটাতে পারে না। কিন্তু এ বিষয়গুলো কেন, কীভাবে ঘটে, সেটিই তিন অর্থনীতিবিদ ব্যাখ্যা করেছেন তাদের গবেষণায়। একটি দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে দীর্ঘ মেয়াদে কোন বিষয়গুলো প্রভাবে ফেলে, সেটি তারা ব্যাখ্যা করেছেন। জাতির সমৃদ্ধিতে সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকার বিষয়ে তারা বলছেন, গণতন্ত্র ও অংশী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কাজ করা একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এগিয়ে যাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ পথ। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির অধ্যাপক ড্যারেন অ্যাসেমোগলু ১৯৬৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন তুরস্কের ইস্তাম্বুলে। লন্ডন স্কুল অব ইকোনোমিকস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্স থেকে ১৯৯২ সালে পিএইচডি করেন। ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির আরেক অধ্যাপক সাইমন জনসন ১৯৬৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন যুক্তরাজ্যে। ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে ১৯৮৯ সালে পিএইডি করেন। শিকাগো ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জেমস এ রবিনসন জন্মগ্রহণ করেন ১৯৬০ সালে। ইয়েল ইউনিভার্সিটি থেকে ১৯৯৩ সালে তিনি পিএইচডি করেন।

অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কারের আনুষ্ঠানিক নাম ‘সেভেরিজেস রিঙব্যাংক প্রাইজ’, যার অর্থায়ন করে সুইডেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এবারের নোবেল পুরস্কারের খবর দিতে ড্যারন অ্যাসেমোগলুর সঙ্গে যোগাযোগ করে নোবেল কর্তৃপক্ষ। তিনি বলেন, আমি আনন্দিত। এটি সত্যিই আমাকে নাড়া দিয়েছে, আশ্চর্যের খবর, ধন্যবাদ। নোবেল পুরস্কার ঘোষণার কমিটিকে তিনি বলেন, কর্তৃত্ববাদের উত্থানে দেখা যাচ্ছে গণতন্ত্র কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। কর্তৃত্ববাদ, একনায়কতন্ত্র ও গণতন্ত্র ইত্যাদি কিছু সর্ম্পকে মানুষের মতামত নেওয়া জরিপগুলোর দিকে তাকালে দেখবেন, মানুষের মধ্যে গণতন্ত্রের প্রতি সমর্থন সর্বকালের সর্বনিম্ন।

অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার ঘোষণার কমিটির সভাপতি জ্যাকব স্পেনসন বলেন, দেশগুলোর মধ্যে আয় বৈষম্য কমানো আমাদের সময়ের সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ। ড্যারন অ্যাসেমোগলু, সাইমন জনসন ও জেমস রবিসনকে তাদের গবেষণার জন্য ধন্যবাদ। দেশগুলো কেন ব্যর্থ বা সফল হয়, তার মূল কারণ সম্পর্কে আমাদের গভীর বোঝাপড়ার বিষয় রয়েছে।

নোবেল কর্তৃপক্ষ এঙে লিখেছে, বিশ্বের ২০ শতাংশ ধনী দেশ গরীব ২০ শতাংশ দেশের চাইতে এখন ৩০ গুণ বেশি ধনী। ধনী ও গরীব দেশগুলোর মধ্যে এখনও আয় বৈষম্য আছে। যদিও গরীব দেশগুলোও ধনী হয়েছে, কিন্তু তারা সমৃদ্ধির বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অন্যদের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না। কিন্তু এমনটি কেন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে এ বছর অর্থনীতিতে নোবেল জয়ী তিন অর্থনীতিবিদ গবেষণায় তাদের ব্যাখ্যায় নতুন এবং বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ খুঁজে পেয়েছেন। সেটি হল, সমাজের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বিদ্যমান পার্থক্য।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহেদায়াতের উজ্জ্বলতম আলোকবর্তিকা খলিফায়ে রাসুল (সা.) হযরত গাউছুল আজম (রা.)
পরবর্তী নিবন্ধকম সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করা হবে