যেসব ছাত্র–জনতা জুলাই–আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা দায়ের, গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গতকাল সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। শেখ হাসিনার পতনের আগে ১৫ জুলাই থেকে সরকার পতনের পর ৮ আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত গণঅভ্যুত্থান সংশ্লিষ্ট ঘটনার জন্য সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
বিজ্ঞপ্তিতে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকারকে স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকার আখ্যা দিয়ে বলা হয়েছে, এই সরকারের পতনের মাধ্যমে বৈষম্যমুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথে এক নবযাত্রা সূচিত হয়েছে। এ গণঅভ্যুত্থানকে সাফল্যমণ্ডিত করতে যেসব ছাত্র–জনতা সক্রিয়ভাবে আন্দোলনের মাঠে থেকে এর পক্ষে কাজ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ১৫ জুলাই হতে ৮ আগস্ট পর্যন্ত সংগঠিত জুলাই গণঅভ্যুত্থান সংশ্লিষ্ট ঘটনার জন্য কোনো মামলা, গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হবে না।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রালয়। এছাড়া মামলা নিয়ে সরকারকে অসত্য তথ্য দিয়ে কোনো সুবিধা পাওয়ার চেষ্টা করলেও ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ার করা হয়েছে।
আন্দোলনের সময় হত্যা ও হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগে এ পর্যন্ত প্রায় সতেরশ মামলায় তিন হাজারের বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতাসহ ৭৪ জন হাই প্রোফাইল ব্যক্তি থাকার তথ্য দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
গণ আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট দেশে ছেড়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। তিন দিন পর ৮ আগস্ট গঠন করা হয় অন্তর্বর্তী সরকার। এরপর একে একে গ্রেপ্তার হতে থাকেন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী–প্রতিমন্ত্রীসহ শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ও প্রভাবশালী সংসদ সদস্যরা। আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটে থাকা অন্যদলগুলোর নেতাদেরও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
অভিযানে গ্রেপ্তারের ওই সংখ্যা জানিয়ে পুলিশ সদর দপ্তর বলেছিল, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছাত্র–জনতা ও সাধারণ জনসাধারণের এক্ষেত্রে শঙ্কিত হবার কোনো কারণ নেই। বিগত সময়ে রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তারসহ আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং তা চলমান রয়েছে।
মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা করলে ব্যবস্থা : কাউকে হয়রানির জন্য মিথ্যা মামলা দায়ের করলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গতকাল সোমবার এক সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রণালয় বলেছে, সম্প্রতি চাঁদাবাজি, ব্ল্যাকমেইলিংসহ নানারকম হয়রানির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। এ ধরনের উদ্দেশ্যমূলক মামলা দায়ের বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ফৌজদারি অপরাধ। এ সকল কর্মকাণ্ডে জড়িতদের কঠোরভাবে হুঁশিয়ারি প্রদানসহ তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে ইতোমধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মিথ্যা মামলাকারীদের বিরুদ্ধে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯–এ অভিযোগ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানোর অনুরোধ করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। ছাত্র–জনতার গণ আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট দেশে ছেড়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। তিন দিন পর ৮ আগস্ট গঠন করা হয় অন্তর্বর্তী সরকার। এরপর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় হত্যা ও হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। পুলিশ বলছে, এখন পর্যন্ত প্রায় সতেরশ মামলায় তিন হাজারের বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটে থাকা অন্য দলগুলোর নেতাদেরও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছেন সাবেক আমলাসহ অন্য পেশার লোকজনও। কোথাও কোথাও গণ মামলায় অনেককে আসামি করা হচ্ছে, কোনো কোনো মামলায় ঢালাওভাবে আসামি করা নিয়ে আলোচনা–সমালোচনা হচ্ছে।