আমিন জুট মিলসের শ্রমিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করা অক্সিজেনের আব্দুল নবী ওরফে আওয়ামী লীগ নেতা লেদু শুধু নিজের নামে সম্পদ গড়ে তোলেননি। স্ত্রী–সন্তানদের নামেও বিপুল সম্পদ গড়েছেন তিনি। নিজের নামে প্রায় কোটি টাকার সম্পদের পাশাপাশি স্ত্রীর নামে তিন কোটি টাকার বেশি এবং সন্তানের নামে গড়েছেন কোটি টাকার সম্পদ।
সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করা লেদু ও তার পরিবারের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের এসব তথ্য উঠে এসেছে দুদকের অনুসন্ধানে। এসব ঘটনায় দুদকের পক্ষ থেকে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে আব্দুল নবী লেদুর রৌফাবাদে থাকা একটি দোতলা ভবন, ২০১৪ মডেলের একটি টয়োটা হেরিয়ার গাড়িসহ প্রায় কোটি টাকার সম্পদ, লেদুর স্ত্রী লাকি আক্তারের নামে পাঁচলাইশে থাকা ১৮ শতাংশ জমি, যার মধ্যে ৪ শতাংশ জায়গায় ৩ কোটি ১৭ লাখ ৬৫ হাজার ৭০৫ টাকার সম্পদ এবং সন্তান মো. আব্দুর রহিমের নামে পাঁচলাইশের ষোলশহরে ৪ শতাংশ জমিতে গড়ে তোলা কোটি টাকার চারতলা বাড়ি ও ১৯৯০ মডেলের একটি পুরাতন কার ক্রোক ও অবরুদ্ধ করেছে আদালত। গত ২১ আগস্ট দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ এ আদেশ দেন।
শীঘ্রই উক্ত সম্পদ দেখভালের জন্য রিসিভার নিয়োগ করা হবে জানিয়ে দুদক পিপি কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলু আজাদীকে বলেন, অঙিজেনের লেদু ও তার স্ত্রী–সন্তানের নামে থাকা প্রায় ৫ কোটি টাকা মূল্যের সম্পদের ক্রোক করা প্রয়োজন উল্লেখ করে আদালতে আবেদন করা হলে বিচারক তা মঞ্জুর করেন। এখন দুদক প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদনের পর আদালতে উক্ত সম্পদের দেখভালের জন্য রিসিভার নিয়োগ চেয়ে আবেদন করা হবে। আশা করছি আদালত আবেদনটি মঞ্জুর করবেন।
১৩ আগস্ট আব্দুল নবী লেদুর বিরুদ্ধে এবং পরদিন ১৪ আগস্ট তার স্ত্রী লাকি আক্তার ও সন্তান মো. আব্দুর রহিমের বিরুদ্ধে দুদক চট্টগ্রাম অফিস তিনটি মামলা দায়ের করা হয়। লেদুর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, আবদুল নবী লেদু বায়েজিদ বোস্তামী থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। পড়াশোনা করেছেন ৭ম শ্রেণী পর্যন্ত। ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনের অধীনে আমিন জুট মিলস লিমিটেডের কার্পেট বিভাগে শ্রমিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। নগরীর অঙিজেন এলাকার এই আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে, তিনি দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ২৬ লাখ ১৪ হাজার ১২৬ টাকা মূল্যের সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৭৬ লাখ ৬৪ হাজার ২৯১ টাকা মূল্যের সম্পদ অসাধুভাবে অর্জন করে ভোগ দখলে রেখেছেন। লেদুর স্ত্রী লাকি আক্তারের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে, তিনি ৩ কোটি ৯ লাখ ১১ হাজার ৩৮৫ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। আর সন্তান মো. আব্দুর রহিমের বিরুদ্ধে ২৯ লাখ ৮৪ হাজার ৯৮১ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন ও ১ কোটি ৫ লাখ ৭৪ হাজার ৮৮৭ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে ভোগ দখলে রাখার অভিযোগ আনা হয়।
লেদুর স্ত্রী লাকি আক্তারের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, দুদকের নির্দেশনা অনুযায়ী দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে লাকি আক্তার ৫ কোটি ৩৭ লাখ ৯৯ হাজার ৭২০ টাকার স্থাবর সম্পদ ও ২৫ লাখ ৮২ হাজার ২২ টাকার অস্থাবর সম্পদ অর্জনের ঘোষণা দেন। যাচাই করলে দেখা যায়, তিনি ৪ কোটি ২৫ লাখ ৬ হাজার ৯০৫ টাকার স্থাবর ও ২২ লাখ ৬৪ হাজার ৬১৪ টাকার অস্থাবরসহ মোট ৪ কোটি ৪৭ লাখ ৭১ হাজার ৫১৯ টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। এর মধ্যে তার নামে ৪৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা দায় রয়েছে। এ দায় বাদে তার নামে ৪ কোটি ৩ লাখ ২৬ হাজার ৫১৯ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। একই সময়ে তিনি ১ কোটি ২১ লাখ ৮৯ হাজার ৩৩৭ টাকা পারিবারিক ব্যয়সহ অন্যান্য খরচ করেছেন। ফলে তার মোট স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫ কোটি ২৫ লাখ ১৫ হাজার ৮৫৬ টাকা। বিপরীতে তার নামে বৈধ ও গ্রহণযোগ্য সম্পদ পাওয়া গেছে ২ কোটি ১৬ লাখ ৪ হাজার ৪৭১ টাকার। এক্ষেত্রে তার অর্জিত সম্পদ থেকে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ ৩ কোটি ৯ লাখ ১১ হাজার ৩৮৫ টাকার সম্পদ পাওয়া গেছে, যা তিনি অসাধু উপায়ে অর্জন করে ভোগ দখলে রেখেছেন।
লেদুর সন্তান মো. আব্দুর রহিমের বিরুদ্ধে করা মামলার এজাহারে বলা হয়, নির্দেশনা অনুযায়ী মো. আব্দুর রহিমের দাখিল করা সম্পদ বিবরণী যাচাই করলে দেখা যায়, তিনি ২৯ লাখ ৮৪ হাজার ৯৮১ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন ও ১ কোটি ৫ লাখ ৭৪ হাজার ৮৮৭ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে ভোগ দখলে রেখেছেন; যা তিনি অসাধুভাবে অর্জন করেছেন।