বাবা সিদ্দিকীর খুনের দায় স্বীকার বিষ্ণোই গ্যাংয়ের কে এই লরেন্স বিষ্ণোই

| সোমবার , ১৪ অক্টোবর, ২০২৪ at ৭:৩৮ পূর্বাহ্ণ

মহারাষ্ট্রের সাবেক মন্ত্রী বাবা সিদ্দিকীকে হত্যার দায় লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাং সোশাল মিডিয়ায় স্বীকার করেছে। ৬৬ বছর বয়সী জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টির (এনসিপি) এই নেতাকে গত বৃহস্পতিবার রাতে মুম্বাইয়ের শহরতলি পূর্ব বান্দ্রায় গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘটনার সময় তিনি পূর্ব বান্দ্রার বিধায়ক ছেলে জিশান সিদ্দিকীর অফিসের কাছে অবস্থান করছিলেন।

পুলিশের বরাতে এনডিটিভি লিখেছে, ঘটনার সঙ্গে তিন বন্দুকবাজের সম্পৃক্ততা মিলেছে। তাদের মধ্যে হরিয়ানার বাসিন্দা কর্নেইল সিংহ (২৩) আর উত্তরপ্রদেশের ধরমরাজ কাশ্যপ (১৯) ধরা পড়েছেন। উত্তর প্রদেশেরই আরেকজন, শিব কুমার গৌতমের যোগ দেখতে পাচ্ছে পুলিশ, যাকে এখনো গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। পুলিশের ধারণা, এই তিনজনকে সমন্বয় করছিলেন আরেক ব্যক্তি, তিনিও পালিয়ে গেছেন। স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাবা সিদ্দিকী ও তার সহযোগীকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি চালায় হামলাকারীরা। বর্ষীয়ান এই রাজনীতিকের বুকে গুলি লাগে। এনডিটিভি লিখেছে, ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্টের মাধ্যমে এ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে কুখ্যাত বিষ্ণোই গ্যাং। পুলিশ জানিয়েছে, হামলার জন্য সন্দেহভাজনদের প্রত্যেককে অগ্রিম ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছিল। আর অস্ত্র দেওয়া হয়েছিল হত্যার দিন কয়েক আগে। বাবা সিদ্দিকী হত্যাকাণ্ডের পর তার ঘনিষ্ঠ বলিউড তারকা সালমান খানের মুম্বাইয়ের বাসায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে পুলিশ। খবর বিডিনিউজের।

গত ১৪ এপ্রিল রাতে সালমানের বান্দ্রার ওই বাসভবনের বাইরে কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়েছিল বাইকে আসা দুই ব্যক্তি। এই ঘটনায় লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে হত্যার ষড়যন্ত্র ও অন্যান্য গুরুতর অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগপত্র অনুযায়ী, ২৫ লাখ রুপির বিনিময়ে বলিউডের ভাইজানকে হত্যার দায়িত্ব দিয়েছিল বিষ্ণোই গ্যাং। ২০২৩ সালের অগাস্ট থেকে ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত কয়েক মাস ধরে এই পরিকল্পনা করা হয়েছিল।

দলমত নির্বিশেষে বাবা সিদ্দিকীর অবস্থান থাকায় তার হত্যাকাণ্ড রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। প্রবীণ রাজনীতিকরা এ ঘটনার নিন্দা জানানোর পাশাপাশি মহারাষ্ট্রে ক্রমবর্ধমান সহিংসতার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিজেপি ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক টানাপড়েন শুরু হয়েছে। বিজেপি এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে রাজনীতি না করার দাবি জানালেও বিরোধীরাবিশেষ করে কংগ্রেস দাবি করেছে, মহারাষ্ট্রে আইনশৃঙ্খলা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে।

কয়েক ডজন মামলা মাথায় নিয়ে লরেন্স বিষ্ণোই বর্তমানে গুজরাটের একটি কারাগারে বন্দি আছেন, তবে তার দল মুক্তিপণের জন্য ব্যবসায়ীদের ফোন কল দিয়ে সংবাদের শিরোনাম হয়েছে। ১৯৯৮ সালের দুই কৃষ্ণ হরিণ হত্যা মামলা থেকে সালমান রেহাই পেলেও লরেন্স বিষ্ণোইয়ের ‘নিশানার তালিকায়’ তিনি রয়েছে। কারণ বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের মানুষ কৃষ্ণসার বা চিংকার হরিণকে পবিত্র বলে মনে করে, বলতে গেলে তারা পূজা করে। বিষ্ণোইয়ের ঘনিষ্ঠ সহযোগী রোহিত গোদারা এর আগে দাবি করেছিলেন, সালমান খানের যেকোনো বন্ধুই তাদের চোখে ‘শত্রু’ হিসেবে বিবেচিত।

পুলিশ সূত্রের বরাতে এনডিটিভি লিখেছে, বিষ্ণোই চক্রে ৭০০ জনের বেশি বন্দুকবাজ রয়েছে, যারা ভারতজুড়ে ছোটবড় অপরাধী হিসেবে কাজ করে। সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি খুনের ঘটনায় বিষ্ণোইয়ের দলের যোগ পেয়েছে পুলিশ, যার মধ্যে র‌্যাপার সিধু মুসেওয়ালা এবং দিল্লির একটি জিম মালিকের হত্যাকাণ্ড আছেযিনি আফগান বংশোদ্ভূত ছিলেন।

বলিউডের সঙ্গে বাবা সিদ্দিকীর যোগাযোগ নিয়ে মুম্বাইয়ে আলোচনা রয়েছে জানিয়ে আনন্দবাজার লিখেছে, বিভিন্ন সময়ে তার দেওয়া ইফতার পার্টিতে বলিউড তারকাদের দেখা গেছে। ২০১৩ সালে তার পার্টিতেই ‘মানভঞ্জন’ হয় শাহরুখ খান ও সালমন খানের। দুই খানকে দু’পাশে নিয়ে তোলা তার সেই ছবি স্মরণীয় হয়ে আছে বলে মনে করেন অনেকেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমৌসুমি বায়ুর বিদায়, বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের আভাস
পরবর্তী নিবন্ধহাটহাজারীতে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবসে র‌্যালি ও আলোচনা সভা