অধিক জনসংখ্যার এ দেশে ক্ষুধা ও অপুষ্টি বড় সমস্যা

| সোমবার , ১৪ অক্টোবর, ২০২৪ at ৭:২৮ পূর্বাহ্ণ

ক্ষুধা মেটানোর সক্ষমতায় ১২৭ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ৮৪তম। গত বছরের তুলনায় এবার তিন ধাপ নেমেছে বাংলাদেশের অবস্থান। বৈশ্বিক এ সূচকে মোট ১০০ স্কোরের মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে ১৯ দশমিক ৪। শুক্রবার গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স প্রকাশিত এই সূচকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের এ অবস্থান উঠে এসেছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, সূচকে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে ভারত (১০৫) ও পাকিস্তানের (১০৯) চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। তবে শ্রীলঙ্কা (৫৬), নেপাল (৬৮) ও মিয়ানমার (৭৪) বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে। সামপ্রতিক সূচকগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৬ সালের পর ক্ষুধার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করা কয়েকটি দেশের মধ্যে একটি বাংলাদেশ। ২০১৬ সালের সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ২৪ দশমিক ৭। গতবছর সেটি কমে ১৯ এ নেমে আসে।

বিশ্ব ক্ষুধা সূচকের প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈশ্বিক প্রবণতার বিপরীতে এসে বাংলাদেশ, মোজাম্বিক, নেপাল, সোমালিয়া ও টোগো তাদের স্কোর ২০১৬ সালের তুলনায় ৫ পয়েন্টেরও বেশি কমাতে সক্ষম হয়েছে। এরপরও বাংলাদেশে যে পরিমাণ ক্ষুধার্ত মানুষ আছে, তা গুরুতর উদ্বেগের বিষয়। সূচকে বর্তমানে বাংলাদেশ মাঝারি মাত্রারক্ষুধায় আক্রান্ত দেশ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, একটি দেশে অপুষ্টির মাত্রা, শিশুদের উচ্চতা অনুযায়ী কম ওজন, শিশুদের বয়স অনুযায়ী কম উচ্চতা এবং শিশু মৃত্যুর হার হিসেব করে ক্ষুধার মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এই চারটি সূচকের মান এক করে ১০০ পয়েন্টের একটি স্কোর পদ্ধতি সাজায় বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচক। সূচকে কোনো দেশের স্কোর শূন্য হওয়া মানে সেখানে ক্ষুধা নেই। স্কোর যত বাড়বে, ক্ষুধার মাত্রা সেখানে তত বেশি। স্কোর ১০০ হওয়ার অর্থ, সেখানে ক্ষুধার মাত্রা সর্বোচ্চ। এ বছরের সূচক অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ১১ দশমিক ৯ শতাংশ অপুষ্টিতে ভুগছে। ২ দশমিক ৯ শতাংশ শিশু পাঁচ বছরে পা রাখার আগেই মারা যাচ্ছে। বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সি ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ শিশুর বয়স অনুযায়ী উচ্চতা কম এবং পাঁচ বছরের কম বয়সি ১১ শতাংশ শিশুর উচ্চতা অনুযায়ী ওজন কম।

ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা সবসময়ই একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। এ দেশে প্রায়ই খাদ্যাভাব দেখা দিতো, দুর্ভিক্ষ হতো। খাদ্য নিরাপত্তাকে সব সময়ই মনে করা হতো অধরা হরিণের মতো যা অর্জন করা কখনো সম্ভব নয়। কিন্তু বিগত ১০ বছরে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অধিক জনসংখ্যার এ দেশে ক্ষুধা ও অপুষ্টি একটি বড় সমস্যা। কৃষি উৎপাদনে বাংলাদেশের সাফল্য এ সমস্যা কমিয়ে আনতে ভূমিকা রাখছে, সন্দেহ নেই। এর কৃতিত্ব মূলত কৃষকদের। তারা যাতে এক্ষেত্রে আরও সাফল্য অর্জন করতে পারেন, সেজন্য সরকারের সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে, ক্ষেত্রবিশেষে এ সহায়তা আরও বাড়াতে হবে। এ জন্য কৃষিজাত খাদ্য উৎপাদনে জাতীয়, দ্বিপাক্ষিক, বহুপাক্ষিক এবং বেসরকারি প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে। ক্ষুধা সমস্যা সম্পর্কে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

সামপ্রতিক প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, বিশ্বে অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুদের অর্ধেকেরও বেশি অংশের বসবাস এশিয়াপ্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে। মারাত্মক অপুষ্টি থেকে শুরু করে অতিরিক্ত ওজন ও স্থূলতা পর্যন্ত বিস্তৃত পরিসরে এবং প্রায় সব বয়সী মানুষের ওপরেই অপুষ্টির নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, তবে বিশেষ করে শিশুদের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব বেশি পড়ে এবং তারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই অঞ্চলে ৭ কোটি ৯০ লাখ শিশু বা পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রতি চার শিশুর একজন খর্বাকৃতির সমস্যায় ভুগছে এবং ৩ কোটি ৪০ লাখ শিশুর জীবন অকেজো হয়ে যাচ্ছে, যাদের মধ্যে ১ কোটি ২০ লাখ শিশু মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে এবং ভয়াবহভাবে ক্রমবর্ধমান মৃত্যু ঝুঁকিতে রয়েছে। যদিও গত দশকে শিশুর খর্বাকৃতির সমস্যা নিরসনে উল্লেখযোগ্য কিছু অগ্রগতি হয়েছে, তবে শিশুর জীবন অকেজো হয়ে পড়া ঠেকাতে খুব কমই অগ্রগতি হয়েছে। এই অঞ্চলে জাতিসংঘের প্রধান কর্মকর্তা বলেন, ‘দুঃখজনক বাস্তবতা হলো এই যে, কয়েক দশকের অর্থনৈতিক অগ্রগতি সত্ত্বেও এই অঞ্চলের একটি অগ্রহণযোগ্য বড় সংখ্যক শিশু অব্যাহতভাবে কয়েক ধরনের অপুষ্টির বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছে। এটা একটা ব্যাপক মানব ক্ষতি। কেননা অপুষ্টি এবং এর ফলে শিশুর দুর্বল মানসিক বিকাশের ভবিষ্যতে এই শিশুদের জীবনভর ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হয়।’ এছাড়া মানব জীবনের সম্ভাবনা কাজে লাগানোর সুযোগ হাতছাড়া হওয়ায় এটা একটি দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতিতেও ভূমিকা রাখে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এমন এক পরিস্থিতিতে ‘বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়া’এখবর সত্যি কষ্টের।

অপুষ্টি নিরসনকে অগ্রাধিকার দেওয়া সত্ত্বেও এটি সারা বিশ্বেই একটি ভয়াবহ সমস্যা। প্রতিটি রাষ্ট্রকেই এই সমস্যা মোকাবেলা করতে হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার বিষয়টি যেন ঝুঁকির মধ্যে না থাকে, তার জন্য মনোযোগ বাড়াতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে