বাংলাদেশের ক্রিকেটে লম্বা এক ক্যারিয়ারের অনেকটাই শেষের প্রান্তে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। আগেই টেস্টকে বিদায় জানিয়েছেন জিম্বাবুয়ের মাটিতে। এবার টি–টোয়েন্টি ফরম্যাট থেকে বিদায় নিচ্ছেন বাংলাদেশের নাম্বার থার্টি। হায়দ্রাবাদের রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছেন এই তারকা। দেশের ইতিহাসের অন্যতম বড় এই তারকাকে বিদায় দিতে ভারতের রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে ছিল বিশেষ আয়োজন। রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে ম্যাচ শুরুর আগেই দলের পক্ষ থেকে স্মারক তুলে দেয়া হয়েছিল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের হাতে। কেনিয়ার নাইরোবিতে যে অধ্যায়ের শুরু করেছিলেন তিনি। তার শেষটা গতকাল হয়েছে হায়দরাবাদের মাঠে। এদিন অবশ্য সবার আগেই মাঠে নেমেছেন তিনি। আগেই ভারতের কাছে সিরিজ খুইয়ে ফেলা বাংলাদেশের জন্য এই ম্যাচের বিশেষ গুরুত্বটাও ওই মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের কল্যাণেই। দিল্লিতে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে এসে জানিয়েছিলেন, ভারতের বিপক্ষে এই সিরিজই তার জন্য শেষ। দেশের হয়ে নিজের ১৪১তম ম্যাচ খেলতে নামেন গতকাল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ২০০৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে শুভযাত্রা শুরু হয় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। নাইরোবিতে কেনিয়ার বিপক্ষে সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের ক্রিকেটে অভিষেক হয় তার। নানান চড়াই উতরাই পেরিয়ে মাহমুদউল্লাহর ১৭ বছরের যাত্রা শেষ হয়েছে গতকাল ১২ অক্টোবর শনিবার। বাংলাদেশের টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটের সঙ্গে মাহমুদউল্লাহ কালের যাত্রা একই সমান্তরালে চলতে চলতে অবশেষে বিচ্যুত হচ্ছে। নতুন সঙ্গী খোঁজার সময় এসেছে লাল–সবুজের টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটের।
শেষ ম্যাচের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের টি– টোয়েন্টি ক্রিকেটে মাহমুদউল্লাহর অবদান দেখা যাক। বাংলাদেশের জার্সিতে মোট ১৪০টি টি– টোয়েন্টি খেলেছেন মাহমুদউল্লাহ। হায়দরাবাদে গতকাল মাঠে নেমে এই সংখ্যাকে ১৪১ এ নিয়ে গেছেন তিনি। সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত ১২৯ ইনিংস ব্যাট করেছেন ডানহাতি টাইগার ব্যাটার। রান করেছেন ২৪৩৬। গড় ২৩.৬৫। বল মোকাবেলা করেছেন ২০৭৩টি। স্ট্রাইকরেট ১১৭.৫১। ৭৯টি টি–টোয়েন্টিতে বল হাতে নিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। ১৮৪.৫ ওভার বল করে নিয়েছেন ৪০ উইকেট। ফিল্ডিং করতে নেমে নিয়েছেন মোট ৫১টি ক্যাচ। বর্ণাঢ্য এই ক্যারিয়ারে অনেকগুলো রেকর্ডও করেছেন মাহমুদউল্লাহ। চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক ডানহাতি টাইগার ব্যাটারের সেই রেকর্ড বইয়ে। টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছেন মাহমুদউল্লাহ। ১৪০ ম্যাচে লাল–সবুজ জার্সি গায়ে জড়িয়েছেন তিনি। ১২৯ ম্যাচ খেলে দ্বিতীয় স্থানে আছেন সাকিব আল হাসান। সব মিলিয়ে টি–টোয়েন্টিতে বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলা ক্রিকেটার হলেন মাহমুদউল্লাহ। সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের ক্রিকেটে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হলেন মাহমুদউল্লাহ। ১২৯ ইনিংসে ২৪৩৬ রান করেছেন তিনি। এই তালিকায় শীর্ষে থাকা সাকিব করেছেন ১২৭ ইনিংসে ২৫৫১ রান। অধিনায়ক হিসেবে বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি টি–টোয়েন্টি ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। ৪৩টি ম্যাচে তিনি টি–টোয়েন্টি অধিনায়ক ছিলেন। এর মধ্যে ১৬টি ম্যাচে দলকে জিতিয়েছেন। হেরেছেন ২৬টিতে। ৩৯ ম্যাচে দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছেন সাকিব। বাংলাদেশের কোনো একক ভেন্যুতে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটি মাহমুদউল্লাহর। দেশের হোম অব ক্রিকেট খ্যাত শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ৩৬ ইনিংসে ৮০৪ রান করেছেন ডানহাতি টাইগার ব্যাটার। এখানেও মাহমুদউল্লাহর সঙ্গী সাকিব। একই ভেন্যুতে সাকিব করেছেন ৩৪ ইনিংসে ৫৪৭ রান। একটানা ডাক না মারার তালিকায় বিশ্বের সপ্তম ব্যাটার হলেন মাহমুদউল্লাহ। ২০১২ সালের ১০ ডিসেম্বর থেকে শুরু করে ২০২১ সালের ৩ আগস্ট পর্যন্ত টানা ৬৬ ম্যাচে ০ রানে আউট হননি তিনি। এ তালিকায় শীর্ষে আছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ডেভিড মিলার। এক টানা ৯০ ম্যাচে ডাক মারেননি প্রোটিয়া ব্যাটার। মাহমুদউল্লাহর পরে এ তালিকায় দ্বিতীয় বাংলাদেশি হলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। গেল ৪৫ ম্যাচে একবার ডাক মারেননি তিনি। বাংলাদেশিদের মধ্যে এক টানা আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টি খেলার রেকর্ডে দ্বিতীয় স্থানে আছেন মাহমুদউল্লাহ। ১৩ নভেম্বর ২০১৫ সাল থেকে ৩০ মার্চ ২০২১ সাল পর্যন্ত টানা ৫৪ টি–টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেন তিনি। টানা ৬১ ম্যাচ খেলে এ তালিকায় প্রথম স্থানে আছেন আফিফ হোসেন। টি–টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হয়ে চার হাঁকানোর তালিকায় চতুর্থ স্থানে আছেন মাহমুদউল্লাহ। ১৮৩টি বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন তিনি। মাহমুদউল্লাহর আগে আছেন সাকিব, লিটন দাস ও তামিম ইকবাল। তবে বিদায়ী ম্যাচে খুব একটা রাঙানো হয়নি মাহমুদউল্লাহর। বল হাতে একটি উইকেট এবং ব্যাট হাতে ৯ বলে ৮ রান করেন তিনি। তবে বিদায় নেওয়া মাহমুদউল্লাহ বাংলাদেশকে যা দিয়েছেন, তা দেশের ক্রিকেটভক্তরা শ্রদ্ধাভরেই স্মরণ করবে চিরকাল।