চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালে কর্র্মকর্তা–কর্মচারীদের আন্দোলন এবং ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক জাহাঙ্গীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ ঘিরে যে উদ্ভূত পরিস্থিতি হয়েছে তাতে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। আন্দোলন দীর্ঘস্থায়ী হলে হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম ভেঙে পড়ার শঙ্কা এ উদ্বেগের কারণ। তবে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সমাধানে জোর দিচ্ছে মন্ত্রণালয় দুটি। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সমাধানের পথ খুঁজতে কাজ করছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক এবং সিভিল সার্জন।
এর অংশ হিসেবে গতকাল বিকালে সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। হাসপাতালের চিকিৎসক এবং আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন। একইসঙ্গে চিকিৎসা কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটে এবং রোগীর সমস্যা হয় এমন আন্দোলন থেকে সরে আসার নির্দেশনা দেন। বিষয়টি মেনেও নেন আন্দোলনকারীরা। এর আগে সকাল ৯টা থেকে প্রায় পৌনে ১১টা পর্যন্ত বিক্ষোভ করেন হাসপাতালের নার্সসহ কর্মকর্তা–কর্মচারীরা। তারা জাহাঙ্গীর চৌধুরীর পদত্যাগ ও প্রশাসক নিয়োগের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। দাবি আদায়ে তারা আগামীকাল সোমবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতিরও ঘোষণা দেন।
আন্দোলনকারীরা জানান, তারা অবৈধ কমিটি মানেন না। সোমবারের মধ্যে যদি জেলা প্রশাসক এসে দায়িত্ব বুঝে না নেন বা এডহক কমিটি না বসায় তাহলে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি ঘোষণা করব। তারা বলেন, আমাদের এক দফা দাবি প্রশাসক নিয়োগ চাই। এডহক কমিটি একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দেবে। নির্বাচনে যোগ্য ব্যক্তি তিনি আসবেন তিনি এই হাসপাতাল পরিচালনা করবেন।
আহসান হাবীব নামে হাসপাতালের এক কর্মচারী আজাদীকে বলেন, সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত বিক্ষোভ হয়েছে। অনেক অনিয়ম হয়েছে হাসপাতালে। আমরা জাহাঙ্গীর চৌধুরীর পদত্যাগ চাই। অতীতে কোনো অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে চাকরিচ্যুত বা বদলি করা হতো। আমরা এর আগে ১৪টি দাবি জানিয়েছিলাম। তিনি বলেন, বিকালে সিভিল সার্জন মহোদয় এসেছিলেন। তিনি এক সপ্তাহের মধ্যে সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।
সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম আজাদীকে বলেন, এই আন্দোলন নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় উদ্বিগ্ন। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে কীভাবে সমাধান করা যায় তার পথ খুঁজে বের করার জন্য মন্ত্রণালয় আমাদের নির্দেশনা দিয়েছে। উনারা (আন্দোলনকারীরা) আগামী সপ্তাহের মাঝামাঝি থেকে কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু এটি একটি হাসপাতাল। এখানে সিসিইউ, আইসিইউ আছে, রোগী ভর্তি আছে। এ সময় কর্মবিরতিতে গেলে রোগীর সমস্যা হবে। এই প্রেক্ষাপটে সেখানে আমি গিয়েছিলাম।
তিনি বলেন, হাসপাতালের চিকিৎসকসহ অন্যদের সঙ্গে বসেছি। তাদের বক্তব্য শুনেছি। তাদের আন্দোলন বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছি এবং বর্তমানে যে সমস্যা বিরাজ করছে তা দ্রুত সমাধানে আশ্বস্ত করেছি। সেজন্য তাদের বলেছি, রোগীরা যাতে হয়রানির শিকার না হয়, কর্মবিরতির মতো কর্মসূচিতে যেন না যায়। তারাও সেটা মেনে নিয়েছেন। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক এবং সিভিল সার্জন কার্যালয় মিলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পরামর্শক্রমে উপায় বের করা হবে।
তিনি আরো বলেন, বিগত কমিটির (চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক সমিতি) বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে। অভিযোগ লিখিতভাবে আমাদের দিয়েছেন। সেগুলো আমরা খতিয়ে দেখব। এখানে কমিটি নিয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা আছে। সে নিষেধাজ্ঞা ডিঙিয়ে কমিটি দেওয়া যাবে না।
জানা গেছে, ৫ অক্টোবর আন্দোলন শুরু হয়। ওইদিন চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক জাহাঙ্গীর চৌধুরীর পদত্যাগ চেয়ে বিক্ষোভ হয় ‘হাসপাতালের কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ’ ব্যানারে। ১৪ দফা দাবি উপস্থাপন করেন তারা। আন্দোলনের এক পর্যায়ে হাসপাতালের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আমান উল্লাহ আমান ও পরিচালক ডা. নওশাদ আজগর চৌধুরী পদত্যাগ করেন। পরবর্তীতে কমিটির বিভিন্ন অনিয়ম তুলে ধরে জেলা প্রশাসন ও সিভিল সার্জনের বরাবর অভিযোগও দেন। এরপর ৭ অক্টোবর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ হয়েছে। পুলিশ দুই কর্মচারীকে আটক করলেও পরে ছেড়ে দেয়।