চট্টগ্রামের সুপারশপগুলোতে বন্ধ হয়নি পলিথিনের ব্যবহার

পাটের ব্যাগে অনীহা ক্রেতাদের

ইমাম ইমু | শনিবার , ১২ অক্টোবর, ২০২৪ at ৬:৫৪ পূর্বাহ্ণ

পরিবেশের ক্ষতিকর দিক বিবেচনা করে গত ১ অক্টোবর থেকে সুপারশপগুলোতে পলিথিন বা পলিপ্রপিলিনের ব্যাগ ব্যবহার বর্জন করার নির্দেশনা দেয় পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এর পরিবর্তে পাট বা কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করতে বলা হয়। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা মানছে না চট্টগ্রামের সুপারশপগুলো। আগের মতোই ব্যবহার হচ্ছে পলিথিন ব্যাগ। অপরদিকে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সুপারশপগুলোতে বিকল্প হিসাবে পরিবেশবান্ধব উপাদানে তৈরি পাট বা কাপড়ের ব্যাগ পৌঁছানোর কথা থাকলেও সব সুপারশপে তা পৌঁছায়নি। এছাড়া অনেকে পলিথিনের বিকল্প ব্যাগ পাননি। এক্ষেত্রে কিছু জায়গায় পরিবেশ অধিদপ্তরের দেওয়া ব্যাগ ১২ থেকে ২০ টাকায় কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। এজন্য পলিথিনের ব্যাগ ছাড়া বাজার করতে অনীহা দেখা গেছে ক্রেতাদের মধ্যে। যার কারণে বাধ্য হয়ে পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার করছেন বলে জানান সুপারশপ কর্তৃপক্ষ। এদিকে কিছু সুপারশপ কর্তৃপক্ষ নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি জানেন না বলেও জানান।

জানা যায়, গত ৯ সেপ্টেম্বর স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক সভায় সুপারশপগুলোতে পলিথিন ব্যবহার বর্জন করতে বলেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। বিকল্প হিসেবে ক্রেতাদের জন্য সব সুপারশপে বা শপের সামনে পাট ও কাপড়ের ব্যাগ রাখতে বলা হয়। এ নিয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধের বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়। পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়। এছাড়া ইএসডিওর সঙ্গে বিকল্প পরিবেশবান্ধব উপাদানে তৈরি পাট বা কাপড়ের ব্যাগের উৎপাদনকারীদের নিয়ে একটি মেলার আয়োজন করা হয়। মেলায় চাহিদা ও সরবরাহের বিষয়ে আলোচনা করেন সুপারশপের কর্তৃপক্ষ ও উৎপাদনকারীরা। এরপর বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এক সপ্তাহের মধ্যে সব সুপারশপে পাটের শপিং ব্যাগের সরবরাহ নিশ্চিত করার কথা থাকলেও নির্দিষ্ট সময়ে পাটের ব্যাগ পৌঁছায়নি বলে জানান সুপারশপ মালিকরা। পলিথিন নিষিদ্ধের ঘোষণার পর গত এক মাসে চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে এক হাজার কেজির বেশি পলিথিন জব্দ এবং আইন অনুসারে ব্যবস্থা নিতে দেখা গেছে।

চট্টগ্রাম নগরের কয়েকটি সুপারশপ ঘুরে গেছে, স্বপ্ন, খুলশী মার্ট, বাস্কেটসহ বেশ কিছু সুপারশপে কেনাবেচায় পলিথিনের সঙ্গে কাগজের ব্যাগও ব্যবহার করতে দেখা গেছে। বাস্কেটসহ কিছু জায়গায় পাটের ব্যাগ থাকলেও সেটা একদমই কম। পলিথিনের পরিবর্তে পাটের ব্যাগ কিনতে অনীহা প্রকাশ করছেন ক্রেতারা। পলিথিনের ব্যাগ না দিলে বাজার না করে চলে যাচ্ছেন। আল মদিনা সুপারশপের ম্যানেজার বাবলু বলেন, আমরা চেষ্টা করছি কিন্তু ক্রেতারা পাটের ব্যাগ কিনতে আগ্রহী না। পলিথিনে পণ্য না দিলে বাজার না করে চলে যাচ্ছেন। এতে আমাদের গ্রাহক কমে যাচ্ছে।

হারুনুর রশিদ নামে এক ক্রেতা জানান, পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করতে হলে এর সরবরাহ আগে পুরোপুরি বন্ধ করে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। শুধুমাত্র নিষেধাজ্ঞার নোটিশে কোনো কাজ হবে না। সাধারণ মানুষের হাতে ধরিয়ে দিতে হবে কোনটা ব্যবহার হবে, কোনটা করা যাবে না। এছাড়া কাজ হবে না। কারণ আমাকে বাধ্য হয়ে পলিথিন ব্যবহার করতে হচ্ছে। কারণ আমি চাকরিজীবী আর রোজ ব্যাগ কিনে বাজার করা সম্ভব না। পাটের ব্যাগ কিনতে বাড়তি টাকার দরকার হচ্ছে। ফ্রান্স সুপারশপের মালিক আনোয়ার হোসেন বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে শুধু জানানো হয়েছে। এরপর এতোদিনেও কোনো কার্যক্রম দেখতে পাইনি। আমাদের জানানো হয়নি কোন ধরনের ব্যাগ ব্যবহার করবো বা কোথা থেকে ব্যাগ সংগ্রহ করবো। উচ্চমহল যদি নির্দেশনা পরিপূর্ণভাবে আমলে না নেয়, তাহলে পরিবর্তন সম্ভব না। অপরদিকে মুদি ও কাঁচাবাজারের দোকানগুলোতে অবাধে চলছে পলিথিনের ব্যাগের ব্যবহার। কাস্টমার ও দোকানি অনেকেই জানেন না পলিথিন ব্যাগ যে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিভিন্ন বাজার ঘুরে কাউকে বাসা থেকে ব্যাগ আনতেও দেখা যায়নি। সবাই দোকান থেকে দেওয়া পলিথিনের ব্যাগে বাজার করছেন। দোকানদাররা জানান, সরকার পলিথিন নিষিদ্ধ করেছে শুনেছি। কিন্তু মানতে কাউকে দেখছি না। বাজারে কেউই ব্যাগ নিয়ে আসে না। সবাই খালে হাতে বাজারে চলে আসে, এখন ব্যাগ না দিলে কাস্টমার অন্য দোকানে চলে যায়। যার কারণে বাধ্য হয়ে দিতেই হয়। এছাড়া সবাই আগের মত পলিথিনে বেচাকেনা করছে। অভিযান করতেও কেউ আসেনি।

এদিকে পলিথিনের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাছুমা আক্তার কণা। তিনি জানান, আমরা পলিথিনের ব্যবহার কমাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এর ধারাবাহিকতায় আমরা অভিযান পরিচালনা করছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজাপানের পরমাণু অস্ত্রবিরোধী সংগঠন পেল শান্তির নোবেল
পরবর্তী নিবন্ধবাড়তি খরচে গ্রাহকের অনাগ্রহ, কমেছে গতি