মনোরোগ বিদ্যা ওয়ার্ডে রাতে থাকেন না চিকিৎসক

চিকিৎসক ও জনবল সংকটে অবহেলিত ওয়ার্ড আজ বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস

জাহেদুল কবির | বৃহস্পতিবার , ১০ অক্টোবর, ২০২৪ at ১০:৪৮ পূর্বাহ্ণ

মানসিক স্বাস্থ্যজনিত রোগ অন্যান্য সাধারণ রোগের মতোই একটি রোগ। কিন্তু আমাদের দেশে কারো মানসিক সমস্যা দেখা দিলে তাকে ‘পাগল’ বলা হয়। তাই মানসিক সমস্যা যখন ছোট পর্যায়ে তখন রোগীরা চিকিৎসকের কাছে যেতে সংকোচবোধ করেন। আশপাশের কিংবা বাড়ির লোকে কি ভাববে এটি নিয়ে শঙ্কা জাগে মনে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নেয়ার কারণে রোগের ব্যাপ্তি বাড়তে পারে। এক পর্যায়ে রোগী যখন খুব উগ্র আচরণ করে কিংবা মারধর ও জিনিসপত্র ভাঙচুর শুরু করে তখনই স্বজনের ধরে বেঁধে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। অথচ সঠিক সময়ে রোগীর চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হলে রোগী শতভাগ সুস্থ থাকতেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনেক চিকিৎসক সাইকিয়াট্রি বা মনোরোগ বিদ্যা বিষয়ে উচ্চ শিক্ষায় আগ্রহী হন না। ফলে সারাদেশে এই রোগের চিকিৎসক সংকট রয়েছে। চট্টগ্রামেও মনোরোগ বিদ্যার বিষয়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছেন হাতেগোনা। আবার মানসিক রোগীর চিকিৎসায় একমাত্র ভরসাস্থল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল। অন্যান্য ওয়ার্ডের তুলনায় এই ওয়ার্ডটি অবহেলিত। ওয়ার্ডে একজন সহকারী রেজিস্ট্রার থাকলেও রেজিস্ট্রারের পদই নাই। এছাড়া অনেক বছর ধরে অধ্যাপক পদ খালি। বর্তমানে একজন সহযোগী অধ্যাপক, দুইজন সহকারী অধ্যাপক ও তিনজন মেডিকেল অফিসার কর্মরত আছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আত্মমর্যাদাবান, অন্যের প্রতি আস্থাবোধ, দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক তৈরি, গভীর অনুভূতি, অন্যকে ক্ষমা করে দেওয়ার শক্তিসহ বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য হলো সুস্থ মানসিক স্বাস্থ্যের বৈশিষ্ট্য। অপরদিকে চরিত্রে এসব বৈশিষ্ট্যের অনুপস্থিতিতে একজন মানুষের ভিতরে ধীরে ধীরে মানসিক সমস্যা তৈরি করে। এছাড়া বর্তমানে শিশু কিশোরদের মধ্যেও মানসিক রোগ তৈরির ক্ষেত্র বেড়েছে বহুগুণ। ইন্টারনেট ভিত্তিক বিভিন্ন গেমস, শারীরিক পুষ্টিজনিত অভাব এবং বংশগত কারণেও শিশু কিশোররা মানসিক রোগের ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন কারণে মানসিক রোগী তৈরি হতে পারে। গর্ভাবস্থা ও প্রসবের পর নারীদের হরমোন সংক্রান্ত কারণসহ বিভিন্ন কারণে অনেক সময় মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। তা থেকে জন্ম নেয় মানসিক রোগ। প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসকের শরাণাপন্ন হলে প্রতিটি রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যায়।

চমেক হাসপাতালের চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে ওয়ার্ডে সরকার অনুমোদিত শয্যা রয়েছে ২৩টি। তবে রোগীর চাহিদায় বিবেচনায় ৬০টি শয্যা বসানো হয়েছে। তবে ওয়ার্ডে চিকিৎসক সংকটের কারণে রাতের বেলা কেউ থাকেন না। অপরদিকে চতুর্থ শ্রেণীরও সংকট রয়েছে। মানসিক রোগীরা যেহেতু ভাঙচুর মারামারি কিংবা অস্বাভাবিক আচরণ করেন, তাই নিভৃত করার জন্য চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর প্রয়োজন হয়। চতুর্থ শ্রেণীর জনবল সংকটের কারণে ওয়ার্ডে প্রায় সময় বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। বর্তমানে ওয়ার্ডে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী আছে ৬ জন।

চমেক হাসপাতালের মানসিক রোগ বিভাগে সরেজমিনে দেখা গেছে, বিভিন্ন স্থানে গাদাগাদি করে রোগীরা শুয়ে আছেন। কেউবা চিৎকার করছেন আবার কেউ গলা ছেড়ে গান গাইছেন। রোগীর স্বজনরা জানান, রাতের বেলায় অনেক সময় রোগীরা চিৎকার চেঁচামেচি করেন। কিন্তু ওই সময় ওয়ার্ডে কোনো ডাক্তার থাকেন না। এতে প্রায় সময় অন্য রোগীদের ঘুম ভেঙে যায়। ফলে তারাও ওয়ার্ডে হট্টগোল করেন।

চমেক হাসপাতাল মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. হিমাদ্রি মহাজন দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমাদের ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত জনবলের সংকট রয়েছে। এরমাঝেও আমরা রোগীদের সর্বোচ্চ সেবাটুকু দিয়ে যাচ্ছি। আসলে আমাদের দেশে মানসিক রোগটাকে অবজ্ঞা করার একটা প্রবণতা রয়েছে। শরীরের অন্যান্য অংশের রোগের মতো এটিও একটি রোগ। তাই সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকিসমিসের দর উঠেছে ৩২৮ মাল্টার ১০০, আদা ৬৫ টাকা
পরবর্তী নিবন্ধপ্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রুশ রাষ্ট্রদূতের বিদায়ী সাক্ষাৎ