নৌপরিবহন এবং পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, চট্টগ্রাম বন্দরের অব্যবস্থাপনার জন্য বন্দর একা দায়ী নয়। এখানে ২০ বছর আগের কন্টেনার পড়ে আছে। ১২–১৪ বছর ধরে গাড়ি পড়ে আছে। এগুলো নিলাম করার কাজ এনবিআরের (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড)। আমি এখনো ওদের সঙ্গে কথা বলিনি। জানি না তাদের সমস্যা কি। বন্দরের জায়গা যদি এভাবে ভর্তি হয়ে থাকে তাহলে কার্যক্রম কীভাবে বাড়বে। পোর্টের জায়গা যদি খালি না করে এত কন্টেনার আছে এগুলো আমরা রাখব কোথায়। ফিরে গেলে আমি এনবিআরের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলব। শুধুমাত্র বন্দর নয়, আরও যেসব সংস্থা আছে তাদেরকেও কাজ করতে হবে। তারা যদি কাজ না করে তাহলে বন্দর কর্তৃপক্ষ কাজগুলো করতে পারবে না। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১২ টায় চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শন শেষে নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনালে (এনসিটি) প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, প্রথমে চট্টগ্রাম বন্দরকে জঞ্জাল মুক্ত করতে হবে। দ্বিতীয় এ বন্দর যাতে দ্রুত সেবা দিতে পারে সেটা করতে হবে। সিঙ্গাপুর একদিনেই পণ্য খালাস করতে পারে। সিঙ্গাপুর বন্দরের সঙ্গে আমাদের বন্দরের কিছুটা তফাৎ আছে। আমাদের বন্দর কিছুটা ভেতরে। পোর্টের মধ্যে যে অরাজকতা, চুরি–চামারি আছে সেগুলো যদি বন্ধ করতে পারি– তাহলে আয়ও বাড়বে।
নৌ–উপদেষ্টা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর হচ্ছে বাংলাদেশের লাইফলাইন। এ বন্দর যদি না চলে এবং যে অব্যবস্থপনা ছিল সেটা যদি দূর না হয় আমাদের অর্থনীতির লাইফলাইনে অসুবিধা হবে। সে কারণে আমি গত তিনদিন ধরেই এ বন্দরে ঘোরাঘুরি করছি। আমরা ম্যানুয়ালি থেকে যদি অটোমেশন করতে পারি তাহলে কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের সময় আরও কমে যাবে। আগে একটি জাহাজ আসলে ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লাগতো পণ্য খালাস করতে। সে জন্য আজকে আমি একটা জাহাজ পরিদর্শন করেছি এবং ক্যাপ্টেনের সাথে কথা বলেছি। তাদের মতে ম্যানুয়ালি আনলোড করতে ৬ থেকে ৭ দিন সময় লাগে। যদিও এখন আগের তুলনায় লোড আনলোডের সময় অনেক কমে এসেছে। লোড আনলোডে যদি অটোমেশন আনতে পারি তবে এ সমস্যা সমাধান হবে। আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করছি।
উপদেষ্টা বলেন, আমি বে–টার্মিনালের জায়গাগুলোও দেখে আসছি। আমি এ মুহূর্তে সেটা নিয়ে খারাপ–ভালো বলবো না। আমি আপাতদৃষ্টিতে বে টার্মিনালে কোনো সমস্যা দেখছি না। এখানে বিনিয়োগ করার জন্য অনেকে বিদেশি বিনিয়োগকারী বসে আছে। আগামী বেশ কিছু বছর পরে এ টার্মিনালের যে সম্ভাবনা সেটা দেখতে পাব। আমাদের দিনদিন আমদানি–রপ্তানি বাড়ছে। বহু বছর পরে এ কার্যক্রম বহুগুণে বেড়ে যাবে। বর্তমানে প্রতি কন্টেনার হ্যান্ডেলিংয়ের জন্য আমরা প্রায় ১৮ ডলার পাচ্ছি। হ্যান্ডলিং কার্যক্রম বাড়লে আয় বহুগুণ বেড়ে যাবে। তাছাড়া বে–টার্মিনালে বিনিয়োগ করার জন্য দেশি–বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অপেক্ষা করছে। বে–টার্মিনাল চালু হলে আমাদের আয় আরো বহুগুণে বেড়ে যাবে। তাই কোনভাবেই বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করা যাবে না।
তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য কেনা অনেক সরঞ্জাম আছে যেগুলো একদিনও ব্যবহার করা হয়নি, অনেক প্রকল্প আছে যেগুলো মাঝপথে ফেলে রাখা হয়েছে। এখানে দুর্নীতি অনিয়ম হয়েছে কি না, হলে আপনারা কি ব্যবস্থা নেবেন? এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, আমি তো দেখতে আসলাম, বুঝতে আসলাম, শিখতে আসলাম। আমি তো পোর্ট বিশেষজ্ঞ নয়। আপনি বলছেন, গত ২২ বছর আগের ঘটনা, যদি বলেন ২২ মিনেটে দূর করে দেন– তাহলে তো সম্ভব নয়। একটু অপেক্ষা করেন, আমরা ছোট ছোট স্টেপ নিয়ে এগোচ্ছি। চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ে স্থলবন্দরে আরও বেশি দুর্নীতি। ২২ বছরের অনিয়ম–দুর্নীতির জঞ্জাল দুই মাসেও দূর করা সম্ভব নয়, একটু সময় দেন। অন্তত ২২ মাস ধৈর্য্য ধরেন। দেখেন পরিবর্তন হয় কি না হয়।’
এক প্রশ্নের জবাবে নৌ উপদেষ্টা বলেন, জাতীয় স্বার্থ ছাড়া আমরা কোনো বিদেশি বিনিয়োগ নিচ্ছি না। পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনাল বিদেশি অপারেটরের (সৌদি আরবের আরএসজিটিআই) হাতে দেওয়া হলেও বন্দর আয় করছে। সেটা প্রত্যাশার চেয়ে বেশি। এখন কারো না কারো স্বার্থে এসব বিদেশি বিনিয়োগকে প্রশ্নবিদ্ধ করলে বাইরের কেউ (বিনিয়োগকারী) আসবে না। নতুন করে নিউমুরিং টার্মিনালে বিদেশি বিনিয়োগের আলোচনা নিয়ে তিনি বলেন, যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক, খুব স্বচ্ছ হবে। আপনারা অপেক্ষা করেন। বন্দরের জন্য ভালো হলে এবং বন্দরের আয় বেশি হলে আমরা বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে চিন্তা করব। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এস এম মনিরুজ্জামানসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ এসময় উপস্থিত ছিলেন।