দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে রেজিস্ট্রেশনবিহীন গাড়ির অবাধ চলাচলের কারণে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে। বছরের পর বছর ধরে চলে আসা এসব গাড়িতে প্রতিবছরই বিপুল পরিমান রাজস্ব হারিয়েছে সরকার। বন্দরের জেটি, ইয়ার্ডসহ টার্মিনালের ভেতরে রেজিস্ট্রেশনবিহীন কন্টেনার মুভার, কাভার্ডভ্যান এবং ট্রাকসহ ভারী গাড়ির রাজত্ব ধরা পড়েছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন এবং বিআরটিএ’র বিশেষ যৌথ অভিযানে এসব ধরা পড়ে।
অভিযানে অংশ নেয়া একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিকভাবে শুধু সাইফ পাওয়ারটেকের ৬০ ভারী গাড়ি আমাদের হাতে ধরা পড়েছে। এগুলো বন্দরের অভ্যন্তরে চলাচল করার সময় ধরা পড়ে। এর বাইরেও বহু গাড়ি রয়েছে। এই ধরণের এক একটি গাড়ির রেজিস্ট্রেশন করলে সরকার কমপক্ষে দুই লাখ টাকার মতো রাজস্ব পেতো। এছাড়া প্রতিবছর ফিটনেস এবং ট্যাঙ টোকেন ও ইনকামট্যাঙ বাবদ প্রতি গাড়ি থেকে কমপক্ষে ৭০ হাজার টাকা সরকারের রাজস্ব আয় হতো। কিন্তু রেজিস্ট্রেশন না করিয়ে বছরের পর বছর ধরে চালানো হলেও সরকার এগুলো থেকে এক টাকাও রাজস্ব পায়নি বলেও ওই কর্মকর্তা মন্তব্য করেন। গতকাল মঙ্গলবার সকালে বন্দর থেকে রেজিস্ট্রেশনবিহীন অবৈধ গাড়ি চলাচল রোধকল্পে জেলা প্রশাসন ও বিআরটিএ’র একটি বিশেষ যৌথ অভিযান পরিচালনা করে। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মাহমুদ হাসানের নেতৃত্বে অভিযানটি পরিচালিত হয়। অভিযানে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করে বন্দর থানা পুলিশ ও ট্রাফিক জোন বন্দর। বিআরটিএ সূত্র জানিয়েছে, অভিযানে চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে সাইফ পাওয়ারটেকের বিভিন্ন টার্মিনালে নিবন্ধনবিহীন অন্তত ৬০টি বিভিন্ন ধরনের যানবাহন ধরা পড়ে। সতর্কতামূলকভাবে সাইফ পাওয়ারটেকের ১০টি কন্টেনার বহনকারী ট্রেইলরকে রেজিস্ট্রেশন না থাকায় ৩০ হাজার টাকা করে মোট ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এই সময় তিনি সাইফ পাওয়ারটেকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে সব গাড়ির রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করারও নির্দেশ দেয়া হয়।
অভিযানে বিআরটিএ চট্টগ্রামের পক্ষে বিআরটিএ চট্টমেট্রো–১ সার্কেলের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, চট্টমেট্রো– ২ সার্কেলের মোটরযান পরিদর্শক পলাশ খিশা, চট্টগ্রাম জেলা সার্কেলের সহকারী মোটরযান পরিদর্শক আব্দুল মতিন, বিআরটিএ চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের বেঞ্চ সহকারি আল–ফরহাদ ও এমিল চাকমা উপস্থিত ছিলেন।
অভিযানে অংশ নেয়া একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এটি শুধু সরকারের রাজস্ব হাতিয়ে নেয়ার ব্যাপার নয়, বন্দরের মতো স্পর্শকাতর একটি স্থাপনায় এই ধরণের রেজিস্ট্রেশনবিহীন গাড়ি চলাচল ঝুঁকিপূর্ণও। প্রভাবশালীরা দেশের প্রচলিত আইনের তোয়াক্কা না করে সরকারের রাজস্ব ফাঁকির মহোৎসব চালিয়ে আসছিল। তিনি বলেন, আজ আমরা সতর্ক করে দিয়ে এসেছি। আবারো আমরা অভিযানে যাবো। এই ধরণের তৎপরতা কঠোরভাবে দমন করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।