চট্টগ্রামকে ‘ক্লিন, গ্রিন এবং হেলদি সিটি’তে রূপান্তরে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে দিয়ে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) নতুন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, ক্লিন, গ্রিন এবং হেলদি সিটি করার বিষয়টি আমার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিও ছিল। দায়িত্ব গ্রহণের পর সেই প্রতিশ্রুতি মাথায় রেখেই কাজ শুরু করব। স্বল্প সময়ের মধ্যেই কাজ করে নগরবাসীকে কিছুটা স্বস্তি দেয়ার চেষ্টা করব। এক্ষেত্রে সময়ের প্রয়োজনে কিছু বিষয়কে অগ্রাধিকার দিব। যেমন এখন ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। কাজেই মশক নিধন বিষয়টি এখন প্রাধান্য পাবে।
চসিক মেয়র ঘোষণা করে গতরাতে গেজেট প্রকাশের পর দৈনিক আজাদীকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন ডা. শাহাদাত। দলমত নির্বিশেষে সকলকে নিয়ে সুন্দর নগর গড়তে চান বলেও জানান তিনি।
২০২১ সালে ‘নিরাপদ ও সাম্য–সম্প্রীতির চট্টগ্রাম গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে জলাবদ্ধতামুক্ত পরিচ্ছন্ন, স্বাস্থ্য–শিক্ষাবান্ধব ও তথ্যপ্রযুক্তি সমৃদ্ধ নান্দনিক পর্যটন নগর গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছিলেন বিএনপি’র মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন। এতে ৭৫টি প্রতিশ্রুতি ছিল। দায়িত্বগ্রহণের পর সেই প্রতিশ্রুতি পূরণে কতটা মনোযোগ দিবেন জানতে চাইলে বলেন, ইতোমধ্যে তিন বছর ৮ মাস চলে গেছে। আমার কাছে সময় খুব বেশি নেই। তবে যতটুকু সময় পাব তার মধ্যে নগরবাসীর দুঃখ–দুর্দশা লাঘব হয় এমন বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করব।
সরকার পতনের পর গত ২৭ সেপ্টেম্বর অপসারণ করা হয় কাউন্সিলরদের। একইদিন প্রশাসকের নেতৃত্বে ২১ সদস্যের কমিটি করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। কাউন্সিলর ছাড়া কাজ করতে কোনো সমস্যা হবে কীনা জানতে চাইলে ডা. শাহাদাত বলেন, কিছু প্রতিবন্ধকতা থাকবে। তারপরও এই চ্যালেঞ্জটাকে মেনে নিয়ে কাজ করত হবে। যাদেরকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তাদেরকে দিয়ে কাজ করাতে হবে। সেখানে এলাকাভিত্তিক বিএনপিসহ অন্যান্য দল ও পেশাজীবীদের মধ্যে যারা সচেতন তাদের নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা আছে। অফিসিয়াল কাজ করার জন্য কর্মকর্তাদের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছে। তারা অফিসিয়াল কাজ করবেন, নাগরিক স্বার্থে সচেতন লোকজনকে নিয়ে মাঠে কাজ করে যাব
কোন কাজগুলোকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে জানতে চাইলে বলেন, জনগণ কী চাচ্ছে সেটা প্রাধান্য দিব। এ মুহূর্তে হয়তো তারা চাচ্ছেন রাস্তাঘাট চলাচলের ন্যূনতম উপযোগী হোক। মাঝখানে অনেকদিন কাজ হয়নি। বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট নষ্ট হয়ে গেছে। লোকজন চলাচল করতে পারছে না। এখন ডেঙ্গুর প্রকোপ, তারা সেখান থেকে মুক্তি চান। মানুষ যে বিষয়গুলো চাচ্ছে সেগুলো প্রাধান্য পবে। আবার ধরেন কোনো দুর্যোগ হয়েছে। তখন সেটা মোকাবিলাকে প্রাধান্য দিব।
ড. শাহাদাত বলেন, চট্টগ্রামকে পরিচ্ছন্ন শহর গড়তে আমার কিছু পরিকল্পনা আছে। ‘ওয়েস্ট প্রোডাক্টস ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান আছে। এক্ষত্রে পরিচ্ছন্ন বিভাগে উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি সংযোজন, ডাস্টবিন আধুনিকায়ন করা, বাসা–বাড়ি থেকে সংগৃহীত বর্জ্য নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার ব্যবস্থাসহ বর্জ্যকে রি–সাইক্লিং করার পরিকল্পনা আছে।
হেলদি সিটি করা প্রসঙ্গে শাহাদাত বলেন, স্বাস্থ্যবান্ধব নগরী গড়তে শিশু হাসপাতাল, মাতৃসদন ও ট্রমা সেন্টার, বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠাসহ ১৫ প্রতিশ্রুতি ছিল আমার ইশতেহারে। অল্প সময়ে তা বাস্তবায়ন কঠিন। তবে শুরু করার চেষ্টা থাকবে। কমউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে চেষ্টা থাকবে।
পাশাপাশি চসিকের আওতাধীন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে পর্যায়ক্রমে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগ, মেমন মাতৃসদন এবং চসিক জেনারেল হাসপাতালকে আধুনিকায়ন ও শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধির চেষ্টা থাকবে।
এছাড়া নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী নগরের ৪১ ওয়ার্ডে আরবান হেলথ সেন্টার গড়ে তোলার জন্য কাজ করব। তিনি বলেন, প্রতিটি ওয়ার্ডে আরবান হেল্থ সেন্টারগুলো চালু করতে পারলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপর কিছুটা হলেও চাপ কমতো। তাই আরবান হেল্থ সেন্টার ও চাইল্ড কেয়ারগুলো বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে আমার। তিনি বলেন, শহরে খেলার মাঠের অভাব আছে। চসিকের অর্থায়নে প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে খেলার মাঠ করার পরিকল্পনা আছে।
জলাবদ্ধতা প্রসঙ্গে শাহাদাত বলেন, অব্যবস্থাপনার কারণে বর্জ্য খালে গিয়ে পড়ে। এতেও অনেকসময় জলাবদ্ধতা হয়। এছাড়া জলাবদ্ধতার জন্য দায়ী পলিথিন, ককশিট, প্লস্টিকসহ যেগুলো রয়েছে তার বিরুদ্ধে গণসচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করব। পাশাপাশি জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএ’সহ যেসব সংস্থার প্রকল্প চলছে সেগুলো যেন দ্রুত বাস্তবায়ন করে সে বিষয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলব।
তিনি বলেন, গ্রীন সিটি করার জন্য সবুজায়নে উদ্যোগ নেব। বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। কার্বন নিঃসরণ কমানোর বিষয়টিও মাথায় থাকবে। সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মান বৃদ্ধিতেও জোর দিব।
শাহাদাত বলেন, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে বলেছিলাম– চট্টগ্রামের হাজার বছরের ঐতিহ্যের আলোকে সকল ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মধ্যে ধর্মীয় সহনশীলতা ও সম্প্রীতির মেলবন্ধনে আবদ্ধ করার প্রয়াস থাকবে। সে আলোকে কাজ করব।
শাহাদাত বলেন, সিটি গর্ভমেন্ট এর কনসেপ্ট দীর্ঘদিনের। সিটি গর্ভমেন্ট না হলে সামগ্রিক পরিবর্তন আসবে না। কর্পোরেশন রাস্তা করল। এখন ওয়াসা বা অন্য সংস্থা এসে যদি কেটে ফেলে সুফল আসবে না। জনদুর্ভোগ কমবে না। এক্ষত্রে সমন্বয়ের প্রয়োজন। যেটা সিটি গর্ভমেন্ট হলে সহজ হবে।
রায় এবং প্রজ্ঞাপন বিষয়ে তিনি বলেন, আমি আগেও বলেছি এটা ঐতিহাসিক রায়। আমরা ১৬ বছর ধরে বলে আসছি আওয়ামী লীগ ভোট ডাকাতি করেছে। ১ অক্টোবর আদালতের রায়ও প্রমাণ করেছে ভোট ডাকাতি হয়েছে।