সরকার পতনের পর পুঁজিবাজারে ‘সংস্কারের’ আলোচনার মধ্যে টানা দরপতনে বিনিয়োগকারীদের আর্থিক লোকসানের পাল্লা আরও ভারী হচ্ছে। আগের সপ্তাহের পাঁচ কর্মদিবসে দরপতনে বাজার মূলধন ১৩ হাজার ৫০০ কোটি কমার পর চলতি সপ্তাহের প্রথম দুই দিনে কমল আরও সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা।
সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস গত রোববার ৮৩ পয়েন্টের পর দ্বিতীয় কর্মদিবসে (গতকাল) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ–ডিএসইর সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স কমল আরও ৪৩ পয়েন্ট। প্রথম দিনের তুলনায় দ্বিতীয় দিন সূচকের পতন তুলনামূলক কম হলেও বিনিয়োগকারীর আর্থিক ক্ষতি প্রায় সমান সমান। খবর বিডিনিউজের।
গত রোববার বাজার মূলধন কমেছিল ৫ হাজার ৪৮৫ কোটি টাকার কিছুটা বেশি, গতকাল কমল ৫ হাজার ২৪৩ কোটি টাকার কিছু বেশি। আবার আগের সপ্তাহে সূচক ১৭৬ পয়েন্ট কমার প্রতিক্রিয়ায় বাজার মূলধন কমেছিল ১৩ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা, চলতি সপ্তাহের দুই দিনে ১২৭ পয়েন্ট সূচক কমার পর বাজার মূলধন কমল কাছাকাছি পর্যায়ে। লোকসান দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণে বিনিয়োগকারীদের সক্রিয়তা কমে গেছে, তারা নতুন বিনিয়োগে যাচ্ছেন না, যে কারণে টানা তিন কর্মদিবস ধরে লেনদেন তিনশ কোটি টাকার ঘরে পড়ে আছে।
গতকাল সোমবার ৩৬৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছে, আগের দিন যা ছিল ৩৬৮ কোটি টাকা। ৫৩টি কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ২৮৮টির, আগের দিনের দরে হাতবদল হয়েছে ৫৫টির। আগের দিন সূচক বেশি কমলেও ১৫৬টির দরপতনের বিপরীতে দর বেড়েছিল ১৮০টি কোম্পানির। তবে এদিন সকালের দিকে সূচকের উত্থান দিয়ে শুরু হওয়া লেনদেন মধ্যভাগেও ইতিবাচক ছিল। শেষ বেলায় বড় পতন হয়। ডিএসইএক্স ৪৩ পয়েন্ট কমার দিন শরিয়াভিত্তিক কোম্পানিগুলোকে নিয়ে গঠিত শরিয়া সূচক এক পয়েন্ট এবং ব্লু চিপ হিসেবে পরিচিত কোম্পানিগুলোকে নিয়ে গঠিত ডিএস৩০ সূচক কমেছে ২২ পয়েন্ট।
পুঁজিবাজারে এই টানা দরপতন ঘটছে গত ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে। ঘোষিত লভ্যাংশ বিতরণ না করা, বার্ষিক সাধারণ সভা না করা, উৎপাদনে না থাকাসহ নানা কারণে সেদিন ২৮ কোম্পানিকে জেড শ্রেণিতে পাঠানো হয়। এরপর থেকেই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়। সেদিন থেকে ৮ কর্মদিবসেই সূচক কমল ৪০১ পয়েন্ট, বাজার মূলধন কমল ২৭ হাজার ৮৮৬ কোটি টাকা। এই কোম্পানিগুলোর মধ্যে ১৪টির কর্তা ব্যক্তিদেরকে ডেকে নিয়ে বৈঠকও করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। কিন্তু কোনো সুফল মেলেনি। পাশাপাশি ব্যক্তি শ্রেণির বেশ কজন বড় বিনিয়োগকারী ও প্রতিষ্ঠানকে কারসাজির অভিযোগে বড় অঙ্কের জরিমানা করা হয়েছে, আলোচিত বেশ কয়েকজনের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ হয়েছে।
এর মধ্যে পুঁজিবাজারে সংস্কার বিষয়ে অংশীজনদের সঙ্গে দুই দিন সংলাপ করেছে বিএসইসি, তবে সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। আর বিনিয়োগকারীরা নানাভাবে তাদের ক্ষোভ ঝাড়ছেন, বিএসইসির নতুন চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যালয় ঘেরাওয়ের ডাকও দেওয়া হয়েছিল।
পুঁজিবাজারে টানা দরপতনের মধ্যে প্রায় প্রতিদিনই সবচেয়ে বেশি টাকার শেয়ার হাতবদল হচ্ছে ব্যাংক খাতে। সেই ধারাবাহিকতায় এই খাতটির ৮২ কোটি ১০ লাখ টাকার শেয়ার হাতবদল হয়, যা ডিএসইর মোট লেনদেনের ২৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ। খাতটির ৭টি কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ১৭টির, আগের দিনের দরে লেনদেন হয়েছে ১২টি কোম্পানির শেয়ার। লেনদেনের দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ওষুধ ও রসায়ন খাতের হিস্যা ছিল ১৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ; ৫১ কোটি টাকা হাতবদল হয়েছে। ৫টি কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ২৫টির, ৪টি ছিল আগের দিনের দরে। তৃতীয় অবস্থানে থাকা খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে লেনদেন হয়েছে প্রায় ৩৩ কোটি টাকা; ৪টি কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীকে কমেছে ১৬টির দর। একটি ছিল আগের দিনের দরে।