কি পুরুষ আর কি নারী দল, সুযোগ পেয়েও সেটা কাজে লাগাতে না পারাটা যেন একরকম রীতিতে পরিণত হয়েছে ক্রিকেটে। ভারতের পুরুষ দলের বিপক্ষে চেন্নাই টেস্টে দারুণ শুরুর পরও খেই হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ পুরুষ ক্রিকেট দল। যার ফল লজ্জার হার। তবে নারী টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের নারীরা বোধহয় সবচাইতে সহজ সুযোগটি পেয়েছিল ইংল্যান্ডের মত শক্তিশালী দলকে হারানোর। কিন্তু শেষটা রাঙানো হলোনা। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের হোক পুরুষ কিংবা নারী, দু দলেরই সমস্যা পুরোনো। কিন্তু সমাধান এখনও অজানা। তাই পুরোনো আফসোসও ফিরে এলো আবার। দারুণ এক জয়ের হাতছানি যখন সামনে, আরও একবার ব্যাটিং ব্যর্থতা বাংলাদেশকে টেনে নিল পেছন দিকে। সুযোগ হারিয়ে তাই হতাশায় পুড়ছেন নিগার সুলতানা, ফাহিমা খাতুনরা। নারী টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপেগত শনিবার ইংল্যান্ডকে ১১৮ রানে আটকে রাখতে পেরেছিল বাংলাদেশের বোলাররা। সেই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে খুব একটা চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেনি ব্যাটাররা। ২০ ওভার খেলে ৯৭ রানেই থেমে যায় বাংলাদেশ। অথচ প্রথম ম্যাচে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে জিতে বিশ্বকাপে ১০ বছরের জয়–খরা কাটিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে ব্যাটিং ভালো হয়নি সেদিনও। অনেক দিন ধরেই এই ব্যাটিংটাই ভোগাচ্ছে বাংলাদেশ দলকে।
এবারের নারী টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচ গুলো যে দুটি ভেন্যুতে হচ্ছে সেই দুবাই এবং শারজাহ স্টেডিয়ামে খুব বেশি রান আসছেনা। উইকেট স্লো হওয়ায় বোলাররা পাচ্ছে সুবিধা। তাই এ ধরনের উইকেটে ১১৯ রানের লক্ষ্য সহজ মনে হলেও বাংলাদেশের যে ব্যাটিং শক্তি ও সামর্থ্য, তাতে এই লক্ষ্য সহজ নয় মোটেও। নিগার সুলতানার দল পারেনি সেই ধারণাকে ভুল প্রমাণ করতে। ম্যাচ শেষে তাই ব্যাটিং ব্যর্থতার কথাই আরেকবার তুলে ধরতে বাধ্য হলেন নিগার। বাংলাদেশ অধিনায়ক আঙুল তুললেন নিজের আউটের দিকেও। ভালো একটি দলকে হারানোর বড় সুযোগ হারিয়েছি আমরা। আমাদের বোলাররা তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। কিন্তু ব্যাটাররা হতাশ করেছে। পাওয়ার প্লেতে আমরা ভালো করতে পারিনি। সেখানে উইকেট ছুড়ে দিয়ে এসেছি। পাওয়ার প্লের পর খেলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি আমরা। ভালো জুটি দরকার ছিল আমাদের। আমি ও সোবহানা মোস্তারি ভালো জুটি গড়ার পথে এগুচ্ছিলাম। কিন্তু আমি বাজে সময়ে আউট হয়ে গেছি। টপ অর্ডারে দীর্ঘদিন ধরে ভুগতে থাকা বাংলাদেশ এ দিন ওপেনিং জুটিতে পরিবর্তন আনে। মুর্শিদা খাতুনকে বাইরে রেখে একাদশে জায়গা দেওয়া হয় দিলারা আক্তারকে। কিন্তু ফল যথারীতি আগের মতই। টি–টোয়েন্টির মত ক্রিকেটে পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেটে হারিয়ে মাত্র ২০ রান তুলতে পারে বাংলাদেশ। পাওয়ার প্লেতে শুরুটা ভালো করতে না পারায় রান তাড়ার কাজটা এমনিতেই আরও কঠিন হয়ে পড়ে। চার স্পিনার নিয়ে খেলতে নামা ইংলিশরা ক্রমে চেপে ধরে বাংলাদেশের ব্যাটারদের। তৃতীয় উইকেটে সোবহানা মোস্তারি ও নিগার সোলাতান ৩৫ রানের জুটি গড়লেও বল খরচ করে ৪৪টি। দুটি চার মারলেও ২০ বলে ১৫ রান করেন নিগার। যেভাবে রান আউট হয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক তাতে আঙুল তোলা যায় তার দিকে। ৪৮ বল খেলে দলের সর্বোচ্চ ৪৪ রান করেছেন সোবহানা। তবে প্রথম ২৬ বলে কোনো বাউন্ডারি মারতে পারেননি তিনি। পরে একটি চার ও একটি ছক্কায় নিজের রান আর বলের ব্যবধান কমিয়েছেন। কিন্তু ইনিংস বড় করে দলকে লক্ষ্যে নিতে পারেননি। ব্যাটিংয়ে অন্যদের অবস্থা বলার মতোই না। বল হাতে দুই উইকেট নেওয়া ফাহিমা ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে বললেন পাওয়ার প্লের ব্যাটিংয়েই ম্যাচ থেকে পিছিয়ে পড়েছে দল।
তিনি বলেন বোলিং গ্রুপ হিসেবে আমরা সত্যিই ভালো করেছি। এই লক্ষ্য তাড়া করার মতোই ছিল। কিন্তু আমরা পাওয়ার প্লেতে ভালো ব্যাট করতে পারিনি। ব্যাটিং গ্রুপ হিসেবে আমাদের আরও বেশি তাড়না দেখানো উচিত ছিল। ব্যাটিং খুবই হতাশাজনক ছিল। দলের প্রতিটি ক্রিকেটারই মনে করেছে বড় সুযোগ ছিল ম্যাচটি জেতার। ইংল্যান্ড অনেক বড় দল। তাদের বিপক্ষে আমরা খুব ভালো শুরু করেছিলাম। আমি আশাবাদী ছিলাম। দলের সবাই আশাবাদী ছিল যে, আমরা এটা অর্জন করতে পারব। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের ব্যাটিংয়ের শুরুটা ধীরগতির হয়ে গেছে । আর তাতেই আমরা সুযোগটা হাতছাড়া করেছি। গ্রুপের বাকি দুই ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও দক্ষিণ আফ্রিকা। ব্যাটিংয়ে উন্নতি না হলে ভালো কিছুর প্রত্যাশা করা কঠিন এই দুই ম্যাচেও। ফাহিমা তবু আশা নিয়ে তাকাচ্ছেন সামনে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আমরা অনেক ভালো করেছি। জেতার সুযোগ ছিল। সেটা হাতছাড়া হয়ে গেছে। তবে এই ম্যাচ থেকে অনেক ইতিবাচক দিক পেয়েছি, যা সামনে এগিয়ে নিতে পারলে আমাদের জন্য ভালো হবে।