চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার পুরাতন ব্রিজঘাট থেকে মইজ্জ্যারটেক ডিসি রোড় পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার জুড়ে সিডিএ’র জমিতে ফের উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করবে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)।
অভিযানে পুরাতন ব্রিজঘাট হতে মইজ্জ্যারটেক পর্যন্ত উচ্ছেদ হবে। এতে সড়কের দু’পাশে থাকা শত শত দোকানসমূহ আবারও নিশ্চিহ্ন করা হবে। তাঁতে সন্দেহ নেই।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিডিএ নির্মাণ বিভাগ-১ এর প্রকৌশলী কাজী কাদের নেওয়াজ টিপু ও সিডিএর এস্টেট শাখার অফিসার মো. আলমগীর খান।
এস্টেট শাখার ইই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমরা অবৈধ দখলদারদের তালিকা প্রস্তুত করতেছি। সিডিএ’র জমিতে যারা দখল রয়েছেন তাঁদের খুব শিগগিরই অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদ করা হবে।’
জানা যায়, এতে অংশ নেবেন সিডিএ’র স্পেশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ), সিডিএ নির্মাণ বিভাগ-১ এর প্রকৌশলী, সিডিএর সহকারী প্রকৌশলী, পেশকার ও সিএমপির স্পেশাল বাহিনী।
তথ্য মিলে, এর আগেও গত বছরের ২৩ মে চরপাথরঘাটা ব্রিজঘাট এলাকায় কাঁচা বাজার ও সড়কের পাশের আড়াইশত দোকান গুড়িয়ে দিয়েছিলো সিডিএ। অভিযোগ ছিলো বিনা নোটিশে এ অভিযান চালানোর। এবারে মইজ্জ্যারটেক হতে পুরাতন ব্রিজঘাট পর্যন্ত উচ্ছেদ করার কথা জানিয়ে মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছেন সিডিএ। প্রতিবেদককে ব্যবসায়ি ও নির্ভরশীল সূত্র এটি নিশ্চিত করেছে।
তথ্য আরও বলছে, পুরাতন ব্রিজঘাট কাঁচা বাজারটি গত ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদ অন্যান্য বাজারের সাথে ইজারা হিসেবে দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার (সরকারি মূল্যে ২ লাখ ৬৬ হাজার ৭৫০ টাকা, সিডিউল মূল্য ১২শ’ টাকা) পর হতেই কয়েকবার ভাঙনের মুখে পড়ে ক্ষতির সম্মুখীন হন।
অথচ একই প্রক্রিয়ায় ২০০৮ সালেও পটিয়া উপজেলার তৎকালীন নির্বাহী অফিসার মো. শহীদুল আলম পুরাতন ব্রিজঘাট বাজারটি ইজারা প্রদানের লক্ষ্যে দরপত্র বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিলেন। কিন্তু বিষয়টি সে সময় সিডিএর নজরে আসলে তৎকালীন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সচিব আবদুল বারী চৌধুরী চিঠি দিয়ে ইজারা বিজ্ঞপ্তির তালিকা থেকে বাজারটি বাদ দেওয়ার অনুরোধ জানান।
এর আগে সিডিএ অভিযান করে জানান, অধিগ্রহণ করা জমিটি রাস্তা নির্মাণের অবশিষ্ট জমি। এটা বাজারের কোন খাস জমি নয়। ভবিষ্যতে রাস্তা সম্প্রসারণ করার জন্য সংরক্ষণ করা ছিলো জমিটি। এলএ মামলা ও বিএস খতিয়ান মূলে জমিটির মালিক সিডিএ’র। তাই এ জমিতে থাকা অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হয়েছে।
সিডিএ নির্মাণ বিভাগ-১ সুত্রে জানা যায়, ‘চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) এর আওতাধীন এলাকা কর্ণফুলী নদীর বামতীর মইজ্জারটেক হতে ষ্টোর ইয়ার্ড ফর ফ্লোটিং ব্রীজ (ভাসমান সেতু) পর্যন্ত (পিসি রোড) সড়কের উভয় পার্শ্বে ভাসমান অবৈধ স্থাপনা/অবকাঠামো কয়েকবার উচ্ছেদ করা হয়েছে। ওই জমির শেষ প্রান্তে ব্রিজঘাট বাজারটির অবস্থান।
এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন যাবত কাঁচা বাজার বসিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য করতেন। কারণ দীর্ঘ ২০ বছরেও সড়ক প্রশস্ত কিংবা স্থায়ী বাজারের জন্য কোন প্রকল্পও গ্রহণ করেনি সিডিএ। তাই ক্ষুদ্র ব্যবসায়িদের এখানে দোকানপাট করে কোন রকমে জীবিকা নির্বাহ করেন।
এ বিষয়ে পুরাতন ব্রিজঘাট ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি জাহেদুর রহমান জাহেদ বলেন, ‘অতীতে কয়েক বার সিডিএ’র উচ্ছেদ অভিযানে ব্যবসায়িদের লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ব্যবসায়িরা ঝুঁকি নিয়ে এখন কোনমতে খোলা আকাশের নিচে রাস্তার ওপর ঠেলায় বা ভ্যানে কাঁচাবাজার বিক্রি করছে। আবারো যদি ভাঙনে উচ্ছেদ হয়! তবে জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হবে গরিব মানুষের। এটি সকলের ভাবা উচিত।’
তিনি আরও বলেন,’ সিডিএ একটি স্বায়ত্তশাসিত সরকারি প্রতিষ্ঠান। সিডিএ চাইলে মইজ্জ্যারটেক টু পুরাতন ব্রিজঘাট পর্যন্ত সিডিএ সড়কের পাশে থাকা অতিরিক্ত জমিতে (প্রয়োজনে) দোকানঘর নির্মাণ করে দিতে পারেন। তাঁতে সংস্থাটিরও আয়ও বৃদ্ধি পেত। কিন্তু বার বার উচ্ছেদ করে গরিব মানুষের সহায় সম্পদ ভেঙে চুরমার করলে এলাকার লোকজনের খুব বেশি ক্ষতি হয়। তা ভাবা উচিত। সুতরাং এর একটি স্থায়ী সমাধান দরকার।’ একই কথা জানালেন চরপাথরঘাটার হাজারো ব্যবসায়ি ও সাধারণ লোকজন।
প্রসঙ্গত, ব্রিজঘাট হতে মইজ্জ্যারটেকের ডিসি রোড (বর্তমান আখতারুজ্জামান চত্বর) পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পটি বহু পুর্বেই সমাপ্ত করেছিলেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কতৃপক্ষ। একাধিকসূত্র বলছে, কর্ণফুলী উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা পরিষদ কিংবা সিডিএ স্থায়ী ভাবে কোন দোকানঘর নির্মাণ না করায় বার বার ভাঙনের মুখে পড়েছে পুরাতন ব্রিজঘাট কাঁচা বাজার ও দোকানঘর।












